বন্দীদের মুক্তি না দিলে আফগান সরকারের সাথে আলোচনা নয় : তালেবান

0

আফগানিস্তানের তালেবান মুখপাত্র জবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, বন্দী থাকা পাঁচ হাজার তালেবান সদস্যের মুক্তি দেয়া না হলে আফগান সরকারের সাথে আলোচনায় বসা হবে না। রোববার এসব বন্দীর মুক্তি দিতে অস্বীকৃতি জানান আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানি। এরপরই এই ঘোষণা দিয়েছে তালেবান।

আফগান যুদ্ধ থেকে যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে সরিয়ে নিতে গত শনিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) তালেবানের সঙ্গে বহুল প্রতীক্ষিত শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে ট্রাম্প প্রশাসন। কাতারের রাজধানী দোহায় উভয় পক্ষের মধ্যে এ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিতে বন্দীদের মুক্তির বিষয়টিও উল্লেখ রয়েছে।

তবে রোববার আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানি বলেন, এই ধরনের মুক্তির বিষয়ে সম্মতি দেয়নি সরকার। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘পাঁচ হাজার বন্দী মুক্তির প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়নি। এটা আফগান জনগণের সঠিক এবং নিজস্ব সিদ্ধান্ত। আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ আলোচনায় এই এজেন্ডা আসতে পারে তবে পূর্বশর্ত হতে পারে না’। আফগান সরকারের সঙ্গে আগে থেকেই আলোচনায় বসতে অস্বীকার করে আসছে তালেবান। সে কারণে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে তারা। ২০০১ সালে মার্কিন আগ্রাসনে তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা থেকে উৎখাত হলেও ২০১৮ সালের মধ্যে দেশটির দুই-তৃতীয়াংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।

সোমবার তালেবান মুখপাত্র জবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, তারা কোনো বিদেশী সেনার ওপর হামলা চালাবে না। তিনি বলেন, ‘বন্দী মুক্তির আগে সরকারের সঙ্গে কোনো আলোচনায় বসা হবে না। মুজাহিদ বলেন, আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ আলোচনার জন্য আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত, কিন্তু আমাদের পাঁচ হাজার বন্দীর মুক্তির অপেক্ষা করছি। পাঁচ হাজার বন্দী মুক্তি না পেলে কোনো আফগান অভ্যন্তরীণ আলোচনা হবে না’। ধারণা করা হয় আফগানিস্তানে প্রায় ১০ হাজার তালেবান সদস্য বন্দী রয়েছে।

এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, তিনি আশা করেন যে, প্রাথমিক কিছু মতভেদ থাকা সত্ত্বেও চূড়ান্তভাবে বন্দীদের বিনিময় করতে রাজি হবে আফগান সরকার ও তালেবান। তালেবানের সাথে শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করার পরে দোহায় ফিরে আসার এক দিন পর ধারণকৃত সিবিএস ফেস দ্য নেশনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে পম্পেও বলেন, এই চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য একটি গোপন দলিলও রয়েছে।

রোববার আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানির বক্তব্য পাঁচ হাজার তালেবান বন্দীকে মুক্তি দেয়ার বিষয়ে চুক্তিতে কিছু নেই সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে শীর্ষ মার্কিন এই কূটনীতিক বলেন : ‘আপনি নথিপত্রটিতে কী বলা হয়েছে তা দেখেন।’

নথিতে বলা হয়েছে, ‘আন্তঃআফগান আলোচনার প্রথম দিন ১০ মার্চ মুক্তি পাবে পাঁচ হাজার তালেবান বন্দী ও অন্য পক্ষের এক হাজার বন্দীকে মুক্তি দেয়া হবে। তিন মাসের মধ্যে বাকি সব বন্দীকে মুক্তি দেয়ার ব্যাপারে উভয় পক্ষই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

তালেবান মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ সোমবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, তাদের বন্দীদের মুক্তি না দেয়া পর্যন্ত তারা আন্তঃআফগান আলোচনায় অংশ নেবেন না। দুই পক্ষের দ্বন্দ্বপূর্ণ এই অবস্থানকে ১৮ বছরের পুরনো যুদ্ধের অবসানের জন্য মার্কিন নেতৃত্বাধীন প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে একটি প্রধান বাধা হিসেবে বর্ণনা করেছে মার্কিন গণমাধ্যম।

পম্পেও বলেন, ‘আমরা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সাথে কাজ করব। তাদের পরস্পরের প্রতি আস্থা তৈরির ব্যবস্থা করব। আফগান সরকার, অ-তালেবান এবং অন্য আফগানদের মধ্যকার আস্থা তৈরিতে আমরা কাজ করব। আমরা চাই এটি সবার অংশগ্রহণের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হোক। এমন অনেক লোক থাকবে যারা অনেক ধরনের কথা বলবে। প্রচুর হই চই হবে। প্রত্যেকে একই সময়ে মিডিয়াতে মনোযোগ পাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করবে। এরচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলোÑ আমরা যে পদক্ষেপ গ্রহণ করছি, যেগুলো নিয়েই আমাদের আলোচনা।’

পম্পেও স্মরণ করেন যে, তিনি দোহায় থাকাকালে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও ন্যাটোর মহাসচিব কাবুল সফর করেছিলেন। তারা আফগান সরকারের কাছ থেকেও সে সময় প্রতিশ্রুতি পেয়েছিলেন। তিনি আরো যোগ করেছেন, ‘যা কিছু হচ্ছে ও হবে তা নিয়ে কেউই ভ্রান্তির মধ্যে নেই, সব কিছুই সুস্পষ্ট’।

পাঁচ হাজার তালেবান যোদ্ধাকে মাঠে ফিরে যেতে দেয়া ঠিক হবে কি না জানতে চাইলে পম্পেও বলেন : ‘এর আগে উভয় পক্ষ থেকেই বন্দীরা মুক্তি পেয়েছে। আমরা সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথটি ব্যবস্থা করতে চেয়েছি। এই লোকেরা কারা তা আমরা জানি।’

কিছু রিপাবলিকান আইনপ্রণেতার এক বিবৃতিতে উল্লিখিত এই চুক্তির গোপন সংযুক্তি থাকার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হলে তিনি বলেন : ‘কংগ্রেস সদস্যের দেখার সুযোগ নেই এমন কোনো সংযুক্তি নেই। তবে চুক্তিটি বাস্তবায়নের জন্য গোপন দু’টি সংযুক্তি রয়েছে। চুক্তিতে থাকা সামরিক শর্তগুলো বাস্তবায়নের নথিটি আমাদের সেনা, নাবিক, বিমানবাহিনী ও নাবিকদের রক্ষা করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কংগ্রেসের প্রতিটি সদস্যই এসব নথি দেখার সুযোগ পাবে।’ মার্কিন সেনা কবে আফগানিস্তান ছেড়ে যেতে পারে জানতে চাইলে পম্পেও বলেন : ‘এই প্রশ্নের জবাব দেয়াটা খুবই কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। এমন কেউই নেই যে কোনো ভ্রান্তির মধ্যে নেই এবং এ ব্যাপারে কথোপকথন সহজ হবে না। তবে প্রায় দুই দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো সেই আলাপটি আফগান জনগণের সাথে হবে এবং সেই আলাপের জন্য আফগানিস্তানই উপযুক্ত জায়গা।’

শিগগিরই এই চুক্তি কার্যকর করতে তালেবানের সাথে সাক্ষাৎ করবেন বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেয়া রোববারের বক্তব্য সম্পর্কে মন্তব্য করে পম্পেও বলেন : ‘কখন তিনি সাক্ষাৎ করবেন জানি না। আমি জানি না কোথায় সাক্ষাৎ হবে। তবে আমি অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিশ্চিত করতে চান যে, আফগানিস্তানের প্রত্যেকে বুঝুক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আলোচনা অর্থপূর্ণ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী তাকে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন যে, তিনিই প্রথম মার্কিন মন্ত্রিসভার কর্মকর্তা, যিনি কোনো তালেবান নেতার সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। অতীতে যাদের তিনি সন্ত্রাসবাদী বলেছিলেন তাদের সাথে দেখা করতে কেমন অনুভূতি হয়েছিল এমন জিজ্ঞাসার জবাবে তিনি বলেন, ‘তাদের প্রচুর পরিমাণে আমেরিকানদের রক্তে রঞ্জিত হাত রয়েছে।’

তবে এখনো আলকায়েদার সাথে তালেবানের অংশীদারিত্ব থাকার ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করে তিনি বলেন, ‘না। তারা একটি নথিতে স্বাক্ষর করেছে এবং সম্মতি জানিয়েছে যে তারা আলকায়েদার সাথে সম্পর্কটি ভেঙে দেবে। 

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com