সিএএর প্রতিবাদে এবার সুপ্রিম কোর্টে জাতিসঙ্ঘ, বিব্রত ভারত
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে ফের বিড়ম্বনায় পড়েছে ভারত সরকার। মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ আদালতে আবেদন জানালো জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা। তাদের বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করুক। যদিও জাতিসঙ্ঘের এই আবেদনের নিন্দা করেছে মোদী সরকার। ভারতের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র জানিয়েছেন, বিষয়টি একান্তই ভারতের অভ্যন্তরীণ। এ নিয়ে জাতিসঙ্ঘের হস্তক্ষেপ আদতে দেশের সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত।
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা সিএএ নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে উত্তাল গোটা ভারত। দিকে দিকে আন্দোলন হচ্ছে। দিল্লি সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মাসের পর মাস ধরে নারীরা রাস্তায় বসে প্রতিবাদ করছেন। আন্দোলনে নেমেছে ছাত্র সমাজ। বস্তুত, কয়েক দিন আগে দিল্লি সহিংসতার ঘটনাও এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার নিজের অবস্থানে অনড়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ একাধিকবার বলেছেন, দেশের সংসদ এই আইন পাশ করেছে। গণতান্ত্রিক উপায়েই আইনটি বৈধ হয়েছে। ফলে এখন পিছু হঠার কোনো কারণ নেই।
যদিও বিরোধী শিবিরের দাবি, সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে কেন্দ্রীয় সরকার আইনটি পেশ করেছে। কিন্তু এটি দেশের সংবিধানের বিরোধী। কারণ আইনে ধর্মীয় বিভেদের ইঙ্গিত রয়েছে। গত কয়েক মাস বেশ কয়েকটি অবিজেপি শাসিত রাজ্য বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে। ইতিমধ্যেই সংবিধান বেঞ্চে শুরু হয়েছে বিচার প্রক্রিয়া। বেশ কয়েকটি রাজ্য সিএএ বিরোধী প্রস্তাব গ্রহণ করেছে রাজ্য বিধানসভায়। কিন্তু এই প্রথম সরাসরি কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করল। এ দেশের বিরোধীদের বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হল। সোমবার বিকেলে জেনিভায় জাতিসঙ্ঘের দফতরে ভারতীয় প্রতিনিধিকে ডেকে এ বিষয়ে জানিয়েও দেয়া হয় ওই মানবাধিকার সংস্থার তরফ থেকে।
এর পরেই নড়েচড়ে বসে ভারত সরকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবিশ কুমার সাংবাদিকদের জানান, ”ভারত একটি স্বাধীন দেশ। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এ দেশের আইনসভা একটি আইন পাশ করেছে। আমরা মনে করি, কোনো বিদেশি সংস্থার এ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অধিকার নেই। এটা ভারতের সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত।”
এর আগেও জাতিসঙ্ঘে সিএএ-র প্রতিবাদ হয়েছে। যে প্রক্রিয়ায় সরকার বিরোধীদের উপর আঘাত হানছে, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এ দিনের ঘটনার পরে বিরোধীদের একাংশের বক্তব্য, জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার সংস্থা সারা পৃথিবীর মানবাধিকার নিয়ে কাজ করে। তারা বুঝতে পেরেছে, সিএএ অগণতান্ত্রিক এবং মানবাধিকার বিরোধী। সে জন্যই তারা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে। এর থেকেই বোঝা যায়, যারা প্রতিবাদ করছেন, তারা ভুল কিছু করছেন না।