আওয়ামী লীগ করলে মুক্তিযোদ্ধা, তা নাহলে রাজাকার : রব
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ না করলে মুক্তিযোদ্ধা হয় না, আওয়ামী লীগ করলে সে মুক্তিযোদ্ধা, তা নাহলে সে রাজাকার। বর্তমান সরকার দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।’
সোমবার (২ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) আয়োজিত আলোচনা সভায় একাত্তরে প্রথম পতকা উত্তোলনকারী আ স ম আবদুর রব এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আজকে স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে মুজিববর্ষ পালন করছে যারা ভোট ডাকাতি করে, যারা ক্যাসিনো চালায়, টাকা বিদেশে নিয়ে যায়, যারা জনগনের অধিকার স্বীকার করে না। সেই ভোট ডাকাতদের, দুর্নীতিবাজদের এবং যারা জুয়া খেলে, মদ খায় তাদের মুজিববর্ষ পালন করার কোনো অধিকার নেই।’
আ স ম রব বলেন, ‘এখনো সিরাজুল আলম খান বেঁচে আছেন, আ স ম রব বেঁচে আছে, শাহজাহান সিরাজ বেঁচে আছেন। পতকাকে অসম্মান করলে, অস্বীকার করলে পতাকার কিছু আসবে যাবে না। এই জাতি যতদিন থাকবে, বাংলাদেশের পতকা ততদিন থাকবে। সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্দিকে, শাহবাগ থেকে শহীদ মিনার, নিউমার্কেট থেকে রেলভবন পর্যন্ত এই জায়গায় লক্ষ জনতা এসেছিলো। দেশে তখন কারফিউ ছিলো, হরতাল ছিলো। ছোট শিশুকে বাবা-মা কোলে করে নিয়ে এসেছে। এর মধ্যেই লক্ষ জনতার সমাবেশ হয়েছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, সিরাজুল আলম খান, নিউক্লিয়াস-বিএলএফ এসব অস্বীকার করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ঘটে নাই। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে ধাপে ধাপে স্বশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের দিকে নিয়ে যাওয়া এটা করেছিলেন সিরাজুল আলম খান। বঙ্গবন্ধু উপাধি সিরাজুল আলম খানের নির্দেশে তোফায়েল ভাই দিয়েছিলেন।’
জেএসডি সভাপতি বলেন, ‘এখন যে প্রচারণা দেখা যাচ্ছে, সিরাজুল আলম খান, নিউক্লিয়াস স্বীকার করতে রাজি না, ২ মার্চ পতাকা উত্তোলন স্বীকার করতে রাজি না। নিজের পরিবার, গোষ্ঠি, আত্মীয়-স্বজনের অবদানকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে, ইতিহাসকে বিকৃত করে, ইতিহাসকে অস্বীকার করে। এগুলো অস্বীকার করা মানে মুক্তিযুদ্ধকে অসম্মান করা। ২ মার্চকে অস্বীকার করে কোনো লাভ হবে না।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন ছিলো মাত্র ১৬ ডিসেম্বর থেকে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত। ১০ জানুয়ারি থেকে আবার সেই ডিসি-এসপি-ওসি যারা আমাদের মা-বোনদেরকে পাকিস্তানিদের হাতে তুলে দিয়েছিলো সেই শাসকরা আবার ক্ষমতার প্রশাসনে বসে। মুক্তিযুদ্ধের যে আকাঙ্ক্ষা ছিলো সেই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়িত হয় নাই, জনগনের অধিকারও প্রতিষ্ঠা হয় নাই।’
রব বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সাথে এই প্রশ্নে বিরোধ হওয়ার পরে আমরা জেএসডি গঠন করেছি বাহাত্তর সালে। নেতার প্রতি অশ্রদ্ধা ছিল না, আদর্শগত বিরোধ ছিল। এটা ঝগড়ার ব্যাপার না। বাংলাদেশের মালিক কী জনগন হবে না, কোনো দল বা নেতা-ব্যক্তি হবে এই নিয়ে বিরোধটা ছিল আমাদের।’
আ স ম রব বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ঘরে ঘরে টাকার গোডাউন, এই পাপিয়ার ঘরে ২৬ কোটি টাকা থাকে এটা কল্পনাও করা যায় না। এই সরকারকে বিদায় না করলে জাতির ভবিষ্যত একটা অভিশাপে পড়বে। গণঅভ্যুত্থান ছাড়া, গণআন্দোলন ছাড়া এই স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদী সরকারকে পরিবতর্ন করা যাবে না। আমি সরকারকে বলব, আপনাদের যেতে হবে। কিভাবে যাবেন, কখন যাবেন সেটাই প্রশ্ন।’
আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি প্রমুখ।