রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী তৈরির কারখানা ‌‌‌‌‌‘অক্সফোর্ড’

0

জেটিভি ডেস্ক: ইতিহাস, ঐতিহ্য, মান, যশ, খ্যাতি এসব উপমাও যেন কম হয়ে যায় ব্রিটেনের বিশ্বখ্যাত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য। এই বিশ্ববিদ্যালয় এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখান থেকে অধ্যয়ন শেষ করে সবচেয়ে সংখ্যক শিক্ষার্থী বিভিন্ন দেশের প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। বলাই বাহুল্য বিশ্বে এমন বিশ্ববিদ্যালয় আর নেই। ব্রিটেনে স্যার উইনস্টন চার্চিলের সময় থেকে এ পর্যন্ত যে ১২ জন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, তাদের মধ্যে নয়জনই অক্সফোর্ডের গ্র্যাজুয়েট। শুধু ব্রিটেন নয়, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, ঘানা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের একাধিক রাষ্ট্রনায়ক হয়েছেন নামকরা এই প্রতিষ্ঠানেরই সাবেক শিক্ষার্থীরা।

সব মিলে বিশ্ববিদ্যালয়টি যেন বিশ্বব্যাপী প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি গড়ার কারখানা হিসেবেই অবদান রেখে চলছে। অক্সফোর্ড ফের আলোচনায় এসেছে ব্রিটেনের নির্বাচন ঘিরে। বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক শিক্ষার্থী প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে পদত্যাগ করায় তার উত্তরসূরি হিসেবে ক্ষমতায় আসার চূড়ান্ত লড়াইয়ে যারা আছেন তারাও এখানকার গ্র্যাজুয়েট। থেরেসা মের স্বামীও ছিলেন অক্সফোর্ডের শিক্ষার্থী। আর সত্তরের দশকে বিশ্ববিদ্যালয় জীবেন তাদের দুজনকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন অক্সফোর্ডেরই আরেক ছাত্রী বেনজির ভুট্টো। যিনি পরে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন। ব্রিটেনের জন্য এটা কাকতালীয় ঘটনা নয়। দেশটির অভিজাত শাসক গোষ্ঠীর এক বিরাট অংশই অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। সব হিসাব ঠিক থাকলে বরিস জনসনেরই ব্রিটেনের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তিনি পড়েছেন অক্সফোর্ডে। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে এখনো যিনি টিকে আছেন, সেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্টও অক্সফোর্ডের গ্র্যাজুয়েট।

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য কনজারভেটিভ পার্টিতে শেষ যে চারজনের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছিল, তাদের তিনজনও ছিলেন অক্সফোর্ডের ছাত্র। শুরুতে যে ১১ জন প্রার্থী হয়েছিলেন কনজারভেটিভ পার্টির নেতা হওয়ার জন্য, তাদের মধ্যেও ৮ জন অক্সফোর্ডে পড়েছেন। ৫ জন তো ছিলেন একই বিষয়ের ছাত্র। ব্রিটেনে স্যার উইনস্টন চার্চিলের সময় থেকে এ পর্যন্ত যে ১২ জন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, তাদের মধ্যে নয়জনই অক্সফোর্ডের গ্র্যাজুয়েট।

অক্সফোর্ড ইউনিয়ন ডিবের্টিং সোসাইটি : সত্তরের দশকে বেনজির ভুট্টো ছিলেন অক্সফোর্ড ইউনিয়ন ডিবেটিং সোসাইটির প্রধান। এটি ব্রিটেনের সবচেয়ে বিখ্যাত ডিবেটিং সোসাইটিগুলোর একটি। ব্রিটিশ এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিখ্যাত লোকজনের পদচারণা এই ক্লাবে। যারা রাজনীতিতে বড় কিছু হওয়ার উচ্চাভিলাষ রাখেন, এই ক্লাবে যোগ দেওয়া তাদের জন্য অবশ্য কর্তব্য বলে বিবেচনা করা হয়। থেরেসা মে-ও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছিলেন না। তার জায়গায় এখন যারা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য লড়েছেন, তাদের ক্ষেত্রেও তাই।

ব্রিটিশ রাজনীতিতে শ্রেণি, বৈষম্য এবং রাজনীতি বিষয়ে গবেষণা করেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জিওফ্রে ইভান্স। তার মতে অক্সফোর্ডের এত গুরুত্ব আসলে একটি কারণে, এটি আসলে যোগাযোগ এবং সম্পর্ক তৈরির এক খুবই গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। অক্সফোর্ড ডিবেটিং ক্লাবের যাত্রা শুরু ১৮২৩ সালে। বহু বিখ্যাত রাষ্ট্রনায়ক এই ক্লাবের সদস্য ছিলেন।

দর্শন, রাজনীতি এবং অর্থনীতি : ১৯২০ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ফিলসফি, পলিটিক্স অ্যান্ড ইকনোমিক্স (পিপিই) নামে একটি কোর্স চালু করে। এই কোর্সটি খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠে ভবিষ্যতের রাষ্ট্রনায়কদের কাছে। গত একশ বছরে অক্সফোর্ডের এই পিপিই কোর্স যারা করেছেন তাদের মধ্যে আছেন : তিনজন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী (এডওয়ার্ড হিথ, হ্যারল্ড উইলসন এবং ডেভিড ক্যামেরন), তিনজন অস্ট্রেলিয়ান প্রধানমন্ত্রী (টনি অ্যাবট, ম্যালকম ফ্রেজার এবং বব হক), পাকিস্তানের চারজন প্রধানমন্ত্রী এবং একজন প্রেসিডেন্ট (লিয়াকত আলী খান, জুলফিকার আলী ভুট্টো, বেনজির ভুট্টো, ইমরান খান এবং ফারুক লেঘারি), ঘানার দুজন প্রেসিডেন্ট (কফি আব্রেফা বুসিয়া এবং জন কুফোর), থাইল্যান্ডের দুজন প্রধানমন্ত্রী (কুক্রিট প্রামোজ এবং অভিষিট ভেজাজিভা), পেরুর একজন প্রধানমন্ত্রী (পেড্রো পাবলো কুসজিনস্কি) এবং মিয়ানমারের রাষ্ট্র উপদেষ্টা (অং সান সুচি)। নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী পাকিস্তানি মালালা ইউসুফজাই এখন অক্সফোর্ডে এই একই বিষয়েই পড়াশোনা করছেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com