আফগানিস্তানে পাকিস্তানের নেতৃত্বাধীন, পাকিস্তানের মালিকানার প্রক্রিয়া

0

জয়, পাকিস্তান। দেশটি তার চিরন্তন শত্রু ভারতের বিরুদ্ধে কোনো যুদ্ধে জয়ী হতে না পারলেও সে আফগানিস্তানে সেরা দুই পরাশক্তির বিরুদ্ধে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে। এমন সাফল্য তারা পেয়েছে প্রথমে সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে, তারপর এখন আমেরিকানদের বিরুদ্ধে।

এটা হলো প্রথমে ‘হিন্দু’ ভারতের কাছ থেকে কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণ ছিনিয়ে নেয়া এবং তারপর হিন্দুদের কাছ থেকে ভারতকে ছিনিয়ে নেয়ার একটি উচ্চাভিলাসের অংশবিশেষ।

জিন্নাহ দৃশ্যত উপমহাদেশের মুসলিমদের নিরাপদ স্থান হিসেবে পাকিস্তান গঠন করেছিলেন। তবে যেটি অকথিত রয়ে গেছে, তা হলো পাকিস্তান সৃষ্টি করা হয়েছিল একটি মাত্র আচ্ছন্নতা থেকে এবং তা হলো দিল্লির লাল কেল্লায় অর্ধচন্দ্রশোভিত পতাকা উত্তোলন। এখান থেকেই আমাদের প্রিয় প্রধানমন্ত্রীরা প্রায় ৭০ বছর ধরে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে আসছেন।

আমেরিকানরা অবশেষে আফগানিস্তান ছাড়ছে। তবে ভিয়েতনাম (সায়গনের দূতাবাসের কর্মীদেরকে হেলিকপ্টারে করে সরে হয়েছিল) থেকে যেভাবে তড়িঘড়ি করে পালিয়েছিল, সেভাবে নয়। ভিয়েতনাম থেকে প্রস্থান ছিল চরম ও বিপর্যয়কর পরাজয়। তবে আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহার এর চেয়ে কম কিছু নয়।

আমেরিকানরা আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে অত্যন্ত সুরক্ষিত সুপার বেসগুলোতে কয়েক হাজার সৈন্য রেখে যাচ্ছে। এখানে তারা বাগদাদের গ্রিন জোনের মতোই বিলাসবহুল জীবন কাটাতে পারবে, শূকরের মাংস খেতে পারবে, মুসলিম একটি দেশেও দেশের মতো পরিবেশ অনুভব করতে পারবে।

ধরে নেয়া হচ্ছে যে সুপার বেসগুলো থেকে আমেরিকানরা তালেবানের ওপর কঠোর নজর রাখতে থাকবে। কিন্তু দুই লাখ ন্যাটো সৈন্য (এদের মধ্যে আমেরিকান বাহিনীও অন্তর্ভুক্ত) এক দশকে যা পারেনি, তা এই কয়েক হাজার সৈন্য পারবে, এবং এমনকি কাবুল ও দেশের বাকি অংশেও এই তালেবানের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর, তেমনটা প্রত্যাশা করা কি ঠিক হবে?

‘গণতান্ত্রিকভাবে’ নির্বাচিত ঘানি সরকারকে সরিয়ে রাখা হবে। সাহায্য ও অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ঘানি সরকারকে ভারত ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে একটি চমৎকার পার্লামেন্ট ভবন। ভারত এখন তার নিজের জন্য নতুন একটি পার্লামেন্ট ভবন নির্মাণের কথা ভাবতে পারে। তালেবান এখন এই পার্লামেন্ট ভবন ব্যবহার করবে, ঠিক যেভাবে ব্যবহার করবে অগণিত রাস্তা ও অন্যান্য অবকাঠামো।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ইতঃমধ্যেই আমেরিকান-তালেবান শান্তিচুক্তির ‘লুণ্ঠনকারীদের’ বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। লুণ্ঠনকারী বলতে নিশ্চিতভাবেই তিনি ভারতকে বুঝিয়েছেন। এই চুক্তির স্থপতি হচ্ছে পাকিস্তান। পাকিস্তান এই চুক্তিকে পছন্দ করে, ভারত একে ঘৃণা করে।

দুই দশক ধরে আফগানিস্তানে দ্বৈত খেলা খেলে আসছে পাকিস্তান। তারা তালেবানের সাথে দহরম-মহররম করেছে, আবার মাঝে মাঝে আমেরিকানদের সাথেও হাত মিলিয়েছে। তালেবান নেতৃত্বের বেশির ভাগই পাকিস্তানে রয়েছে এবং তা প্রায় ২০ বছর ধরে। আফগানিস্তানে আমেরিকানদের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর জন্য পাকিস্তানের ভূমি ব্যবহার করছে তালেবান। হামলার পর তারা আবার পাকিস্তানেই ফিরে যায়, ফলে আমেরিকানরা তাদের কিছুই করতে পারেনি।

এসব কৌশলে পাকিস্তান অত্যন্ত দক্ষ। তারা সোভিয়েতদের বিরুদ্ধেও ঠিক একই কৌশল অবলম্বন করেছিল। শেষ পর্যন্ত সোভিয়েতরা পরাজয় মানতে বাধ্য হয়। পাকিস্তানিরা জানত যে আমেরিকানরাও তা করবে এবং তা করেছে।

এখন পাকিস্তানিরা কাশ্মিরে তাদের দ্বিতীয় জিহাদ শুরু করার মতো অবস্থানে চলে এসেছে। কাশ্মিরে নিজের অবস্থান সুসংহত করার মাধ্যমে ভারত এই জিহাদ থেকে নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করছে। সফল হতে পারে কিনা তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

ভারত ও প্রধানমন্ত্রী মোদির নিন্দা করার কোনো সুযোগ হাতছাড়া করেন না ইমরান খান। ভারতের ব্যাপারে তিনি সম্ভবত পুরোপুরি আচ্ছন্ন হয়ে রয়েছেন। তিনি তার ক্রিকেট খেলার সময়কালে অ্যাটাকিং খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিত ছিলেন।  

৯/১১-এর প্রায় ২০ বছর পর এবং ১৯৮৯ সালে প্রথম জিহাদের ৩০ বছর পর শেষ পর্যন্ত আরেকটি সঙ্কটের আবির্ভাব ঘটেছে। ভারতকে অবশ্যই এটিকে মোকাবিলা করতে হবে। আর তা করতে হলে ভারতকে হতে হবে ঐক্যবদ্ধ। কিন্তু চেতন ভগত যেভাবে বলেছেন যে এখানে যা হচ্ছে তা কেবল হিন্দু-মুসলিম, হিন্দু-মুসলিম, হিন্দু-মুসলিম। উভয় পক্ষের উত্তেজিত লোকজন আমাদের প্রিয় স্বাধীনতাকে কেড়ে নেবে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com