ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়
সিরিজের একমাত্র টেস্টে জিম্বাবুয়েকে ইনিংস ব্যবধানে হারিয়ে সাদা পোশাকে ব্যর্থতার বৃত্ত ভেঙেছিল বাংলাদেশ। এবার ওয়ানডেতেও পাঁচ ম্যাচের জয়খরা কাটিয়ে স্বরূপে ফিরল টাইগাররা।
রোববার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়েকে ১৬৯ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে রেকর্ড বইয়ের বেশ কয়েকটি পাতায় দাগ কেটেছে বাংলাদেশ। রানের হিসাবে ওয়ানডেতে এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়। এই সংস্করণে আগের সবচেয়ে বড় জয়টি ছিল শ্রীলংকার বিপক্ষে ১৬৩ রানের। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডেতে নিজেদের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটিও কাল নতুন করে লিখেছে বাংলাদেশ। লিটন দাসের অনবদ্য সেঞ্চুরি ও মোহাম্মদ মিঠুনের ফিফটির সুবাদে ছয় উইকেটে ৩২১ রানের পাহাড় গড়েছিল স্বাগতিকরা। জবাবে বাংলাদেশের দুরন্ত বোলিংয়ে ৩৯.১ ওভারে মাত্র ১৫২ রানে গুটিয়ে যায় জিম্বাবুয়ে।
ক্যারিয়ারসেরা ইনিংসে দাপুটে জয়ের ভিতটা গড়ে দিয়েছিলেন ম্যাচসেরা লিটন। চোট নিয়ে মাঠ ছাড়ার আগে ১০৫ বলে ১২৬ রান করেন তিনি। অধিনায়ক মাশরাফি মুর্তজার শেষের শুরুটা রাঙাতে বড় ভূমিকা রেখেছেন চোট কাটিয়ে দলে ফেরা অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনও। ১৫ বলে অপরাজিত ২৮ রানের ঝড়ো ইনিংসের পর ২২ রানে তিন উইকেট নেয়া সাইফউদ্দিনই বাংলাদেশের সফলতম বোলার। এছাড়া মাশরাফি ও মেহেদী হাসান মিরাজ নেন দুটি করে উইকেট। সব ঠিক থাকলে অধিনায়ক হিসেবে এটাই মাশরাফির শেষ সিরিজ। এই ম্যাচ দিয়েই প্রায় আট মাস পর জাতীয় দলে ফিরলেন ওয়ানডে অধিনায়ক। শেষ পাঁচ ম্যাচে কোনো উইকেট না পাওয়ায় চারদিক থেকে ধেয়ে আসা নানা সমালোচনায় ভীষণ বিরক্ত মাশরাফি আগেরদিন সংবাদ সম্মেলনে ঝাঁজালো প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন। কাল বল হাতেও সমালোচনার জবাব দিলেন।
জিম্বাবুয়ের শেষ ব্যাটসম্যান মুতোম্বোদজিকে ফিরিয়ে মাশরাফিই টানেন তুলির শেষ আঁচড়। অধিনায়ক হিসেবে এটি তার শততম উইকেট। এই সেঞ্চুরি পূর্ণ করতে মাশরাফির লাগল ৮৬ ম্যাচ। পাশাপাশি সব ধরনের স্বীকৃত ক্রিকেট মিলিয়ে কাল ৭০০ উইকেটের মাইলফলকও ছুঁয়েছেন মাশরাফি। বাংলাদেশের আগুনে বোলিংয়ের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি জিম্বাবুয়ে।
সাইফউদ্দিন ও মাশরাফির তোপে ৪৪ রানে চার উইকেট হারিয়ে শুরুতেই ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় তারা। সর্বোচ্চ ৩৫ রান আসে অভিষিক্ত ওয়েসলি মাধেভেরের ব্যাট থেকে। আগামীকাল একই ভেন্যুতে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে।
যে কোনো পরিস্থিতিতে, যে কোনো সংস্করণে জিম্বাবুয়েকে সামনে পেলেই জ্বলে ওঠে বাংলাদেশ। এবারও তা-ই হল। সময়ের ব্যবধানে জিম্বাবুয়ের চেয়ে কতটা এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ, সেটাই কাল দেখিয়ে দিলেন মাশরাফিরা। সিলেটে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নিজেদের সর্বোচ্চ সংগ্রহের রেকর্ডটা নতুন করে লিখল বাংলাদেশ। লিটন দাসের ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস (১২৬*) ও মোহাম্মদ মিঠুনের (৫১) ফিফটিতে প্রথম ওয়ানডেতে ছয় উইকেটে স্বাগতিকরা তোলে ৩২১ রান। এর আগে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর ছিল ৩২০।
চোট কাটিয়ে এ ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরছেন মাশরাফি মুর্তজা। বাংলাদেশ অধিনায়কের দিকেই মনোযোগ বেশি ছিল সবার। সবশেষ পাঁচ ম্যাচে কোনো উইকেট না পাওয়া অধিনায়কের সামনে চ্যালেঞ্জ ছিল ছন্দে ফেরারও। ফেরার ম্যাচেই এলোমেলো হয়ে যাওয়া দলকে কক্ষপথে ফেরালেন বাংলাদেশের সফলতম অধিনায়ক। চোট কাটিয়ে এ ম্যাচ দিয়ে মাশরাফির সঙ্গে ফিরেছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনও। বিশ্বকাপের পর এই প্রথম খেলছেন তারা। এছাড়া ২০১৮ এশিয়া কাপের পর প্রথমবারের মতো ওয়ানডে খেললেন নাজমুল হোসেন।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশকে ভালো শুরু এনে দেন তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। তবে তামিমের ব্যাটিং ছিল কিছুটা নড়বড়ে। প্রথম ৩০ বল থেকে তিনি মাত্র ১৪ রান তুলতে পারেন। তার একমাত্র বাউন্ডারিটি আসে দশম ওভারে। রানের চাকা সচল রাখার কাজটা করেছেন লিটন। দারুণ ব্যাটিংয়ে দলকে টেনেছেন তিনি। ধুঁকতে থাকা তামিম বেশিদূর এগোতে পারেননি। কার্ল মুম্বার আগের ওভারেই আউট হতে পারতেন। কিন্তু জিম্বাবুয়ে রিভিউ না নেয়ায় বেঁচে যান। পরের ওভারে আর টেকেননি তামিম। ওয়েসলি মাধেভেরের বলে ফিরে যান এলবিডব্লু হয়ে। করেন ৪৩ বলে ২৪ রান। নাজমুল হোসেন শুরুটা ভালো করেও বড় স্কোর করতে পারেননি। ৩৮ বলে ২৯ করে ফেরেন। দলের রান ততক্ষণে ১৪০। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে আসে ৮০ রান। তৃতীয় উইকেটে মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে আর ৪২ রান যোগ করেন লিটন।
নান্দনিক ব্যাটিং উপহার দিয়ে গেছেন লিটন। কোনো ভুলই করেননি। তাড়াহুড়োও ছিল। বাউন্ডারি মেরে ৯৫ বলে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওডিআই সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। পা বেশ ভোগাচ্ছিল। রান নিতে খোঁড়াচ্ছিলেন। ওয়েসলি মাধেভেরেকে বিশাল ছক্কা হাঁকানোর পর আর পারলেন না। ফিজিওর সঙ্গে মাঠ ছাড়েন লিটন দাস। এর আগেই অবশ্য ছক্কায় ছাড়িয়ে গেলেন ওয়ানডেতে নিজের আগের সর্বোচ্চ রান। ডোনাল্ড তিরিপানোর আগের ওভারে তিনটি চার মারেন লিটন। একবার হেলমেটে বল লাগলেও নড়ে যাননি। মাধেভেরেকে ছক্কায় ওড়ানোর পর মাঠ ছাড়তেই হল। এ সময় লিটনের রান ১৩ চার ও দুই ছক্কায় ১০৫ বলে ১২৬। ওয়ানডেতে তার আগের সেরা ছিল ভারতের বিপক্ষে ১২১।
এদিকে ব্যাটিংয়ে নেমে দারুণ এক মাইলফলক স্পর্শ করেন মাহমুদউল্লাহ। ৩৯৯৪ রান নিয়ে এই ম্যাচ শুরু করেন এই ডান হাতি ব্যাটসম্যান। ওয়েসলি মাধেভেরেকে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দ্রুতই পৌঁছে যান চার হাজার রানের মাইলফলকে। তবে থেমে যান ৩২ করেই। এরপর মিঠুন ৪১ বলে করেন ৫০। এটি মিঠুনের ক্যারিয়ারের পঞ্চম ফিফটি। তিনটি ৫০ ছোঁয়া জুটিতে পাওয়া দৃঢ় ভিত কাজে লাগিয়ে শেষটায় ঝড় তোলে স্বাগতিকরা। শেষ ওভারে তিন ছক্কায় ২২ রান নেন সাইফউদ্দিন। ১৫ বলে তার ২৮ রানের বিস্ফোরক ইনিংসে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নিজেদের সর্বোচ্চ রান করে বাংলাদেশ। আগের সেরা ছিল ২০০৯ সালে করা ৩২০।