পাপিয়ার বিচার হলে ওদের নয় কেন?
যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাটের পর এবার আলোচনায় সোসাইটি গার্ল খ্যাত যুবলীগ নেত্রী শামীমা নুর পাপিয়া। যাদের আশ্রয় প্রশ্রয়ে বিগত ১১ বছর ধরে ঢাকা শহরের ক্লাবগুলোতে জুয়া ও মাদকের আসর বসিয়ে অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতো, একদিন তারাই সম্রাটকে ছেড়ে চলে গেল।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনেক নেতা ও এমপি-মন্ত্রী সম্রাটকে ব্যবহার করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন। আবার পরে তাকে লাথি মেরে ফেলে দিয়েছে। শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের এমন কোনো নেতা নেই যারা সম্রাট থেকে টাকার ভাগ নেয়নি। পরে বিপদ দেখে তারাই আবার সুর পাল্টিয়ে বলেছে যে, সম্রাটের অন্ধকার জগতের বিষয়ে তাদের কিছুই জানা ছিল না। জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাট এসব নেতাদের নাম বললেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসব প্রকাশ করেনি।
ঠিক একই ঘটনা ঘটছে দেহ ব্যবসায়ী যুবলীগ নেত্রী পাপিয়ার ক্ষেত্রেও। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়া গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। পাপিয়ার পতিতালয়ে যারা আসা যাওয়া করতো তারা সবাই আওয়ামী লীগের নেতা ও সরকারের মন্ত্রী-এমপি। সুন্দরী নারীদের সঙ্গে ফূর্তি করতে তারা পাপিয়ার পতিতালয়ে যাতায়াত করতো। পাপিয়া বলেছে, অনেক বড় বড় স্যার তার এখানে আসতেন। জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরকে প্রশ্ন করেছেন-সুন্দরী নারীদের প্রতি আকর্ষণ নাই কার?
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের আশ্রয় প্রশ্রয়েই যুবলীগ নেত্রী পাপিয়া ঢাকা শহরের অভিজাত হোটেলগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে পতিতালয় চালিয়ে আসছে। আর পাপিয়ার উঠা-বসাও ছিল এসব প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গেই। ইতিমধ্যে এ সংক্রান্ত কিছু ছবিও ভাইরাল হয়েছে।
একটা ছবিতে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের পাশে এই দেহ ব্যবসায়ী পাপিয়া। আরেকটি ছবিতে দেখা যায়, স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে দাঁড়ানো পাপিয়া। আরেকটি ছবিতে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমদের সঙ্গে দাড়ানো পাপিয়া। আরেকটি ছবিতে দেখা যায়, ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলামের সঙ্গে দাড়ানো পাপিয়া। এমনকি রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের সঙ্গেও হাত মেলানোর ছবি রয়েছে পাপিয়ার।
এসব ছবিই বলে দেয় যে, তাদের আশ্রয় প্রশ্রয়েই পাপিয়া ঢাকা শহরের পাঁচতারকা হোটেলগুলোতে অপরাধের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে। যদিও তারা এখন সুর পাল্টিয়ে বলছেন যে, পাপিয়ার বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না।
এসব ছবি ভাইরাল হওয়ার পর বিশিষ্টজনসহ সচেতন মানুষ মনে করছেন-আওয়ামী লীগের এসব প্রভাবশালী নেতারাই মূলত পাপিয়ার গডফাদার। সম্রাটের মতো পাপিয়াকেও ব্যবহার করে তারা এখন ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে। আবার অনেকেই বলছেন, হলি আর্টিজান হামলাকারীদের একজন ছিলেন ড.জাকির নায়েকের ফলোয়ার। তারই সূত্র ধরে বাংলাদেশ পিস টিভি বন্ধ করল। এখন পাপিয়ার সাথে যাদের ভিডিও এবং ছবি ভাইরাল হয়েছে তাদের বিচার কি হবে?
এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সাধরণ মানুষের মধ্যে নিন্দার ঝড় উঠেছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের নৈতিকতা নিয়ে। আবার কেউ কেউ বলছেন পতিতা ও মাদক ব্যবসার দায়ে বহুগামী পাপিয়াকে যদি দল থেকে বহিষ্কার ও বিচার করা হয় তাহলে সে যাদের মাধ্যমে সে এই পথ বেছে নিয়েছে তাদেরকেও বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।