বিজেপি নেতা কপিলের উসকানিতে হিন্দুত্ববাদী তাণ্ডব, দিল্লির শিব বিহার এখন ভুতুড়ে শহর
বিজেপি নেতা কপিল মিশ্রের উসকানির পর গত ২৩ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে হিন্দুত্ববাদী তাণ্ডব শুরু হয়। এই তাণ্ডবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার মধ্যে একটি শিব বিহার। টানা ছয়দিন ধরে চলা ওই তাণ্ডবে অন্তত ৪২ জন নিহত ও দুই শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে। এছাড়া এখনও নিখোঁজ রয়েছে অনেকে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সংঘবদ্ধ হামলাকারীরা এসে চোখের সামনে যা কিছু পেয়েছে তাই পুড়িয়ে দিয়েছে। পুড়ে যাওয়া বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে শত শত পরিবার। এসব পরিবারের সদস্যদের বেশিরভাগই কাছে ইন্দিরা বিহার এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। তবে সেখানকার চারপাশেও এখন ঘোরাফেরা করছে দাঙ্গাবাজরা।
আগের সহিংসতার সময় ৪০ বছরের মমতাজ বেগমের পরিবারের ওপর এসিড দিয়ে হামলা চালানো হয়। তিনি বলেন, ‘দাঙ্গাবাজরা আসার সময় আমরা সবাই বাড়িতেই ছিলাম। তারা এসিড ছুঁড়লে তা আমার স্বামীর মুখে লাগে। তার পাশেই ছিলো ২০ বছরের মেয়ে আনাম। তার মুখেও এসিড লাগে। কোনও রকমে দৌড়ে পালিয়ে আমরা মসজিদে আশ্রয় নেই আর সেখানেই বাকি রাত কাটাই। যে পোশাকে পালিয়ে ছিলাম, এখনও সেই পোশাকে আছি। আমরা পুলিশের সহায়তা চেয়ে ফোন করেছিলাম, কিন্তু কেউ আসেনি’।
২৮ বছর বয়সী শাহবানু তার ১৫ বছরের ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ছেড়েছেন। নিজেদের ভবিষ্যত নিয়ে এখন শঙ্কিত তিনি। তিনি, কয়েক দিন ধরেই বাড়ির বাইরে সহিংসতা হচ্ছিল। দাঙ্গাবাজদের ভয়ে আমরা লাইট বন্ধ রাখতাম। কিন্তু যখন আমাদের পাশের বাড়িটি পুড়িয়ে দেওয়া হলো তখন জীবন বাঁচাতে পালিয়ে গেলাম। পরে আমাদের বাড়িতেও আগুন লাগানো হয়।
৫০ বছরের নাফিস আহমেদের মতো মানুষেরাই নিজেদের দরোজা খুলে দিয়ে এসব মানুষকে আশ্রয় দেন। এখনও তাদের আশ্রয়ে রয়েছেন তারা। নাফিস বলেন, ‘আমি তাণ্ডব দেখেছি। সেকারণে তাদের আশ্রয় দিয়েছি। নিজের পরিবারের সদস্যদের অন্য ফ্লোরে পাঠিয়ে দিয়ে তাদের নিচ তলায় থাকতে দিয়েছি’।
শনিবার দিল্লি সংখ্যালঘু কমিশনের সদস্য এবং চিকিৎসক দল ওই এলাকা পরিদর্শন করেন। কমিশনের সদস্য আনাসতাসিয়া গিল বলেন, ‘আমরা এখন ক্ষয়ক্ষতির বিস্তৃতি দেখতে পাচ্ছি। প্রাথমিক অগ্রাধিকার চিকিৎসা সহায়তা। দ্বিতীয়ত, খাবারের ব্যবস্থা করা। তৃতীয়ত আমরা এসব পরিবারকে পুনর্বাসিত করার পরিকল্পনা করছি’।