এখনো নিষ্ক্রিয় দিল্লি পুলিশ, ফের রাস্তায় সেই বিতর্কিত বিজেপি নেতা

0

গত রোববার দিল্লির জাফরাবাদে বক্তৃতা দিতে গিয়ে সিএএ-এনআরসির বিরোধীদের হুমকি দিয়েছিলেন কট্টরপন্থী বিতর্কিত বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র। অভিযোগ, ওই বক্তব্যের পরেই সেদিন সন্ধ্যা থেকেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে গোটা উত্তর-পূর্ব দিল্লি জুড়ে। যাতে নিহত হন ৪২ জন। কিন্তু তার পরে প্রায় এক সপ্তাহ কেটে গেলেও অভিযুক্ত এই বিতর্কিত বিজেপি নেতা কপিলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে ব্যর্থ দিল্লি পুলিশ।

এ দিকে, দিল্লিতে সংঘর্ষ থামাতে ব্যর্থতার অভিযোগ মাথায় নিয়েই শনিবার দায়িত্ব থেকে অবসর নিয়েছেন দিল্লি পুলিশের কমিশনার অমূল্য পট্টনায়ক। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ওই পদের কার্যভার গ্রহণ করেছেন বিশেষ কমিশনার (আইন-শৃঙ্খলা) এস এন শ্রীবাস্তব।

দিল্লিতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর থেকেই কপিল মিশ্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল বিরোধী দলগুলো। অভিযোগ, শাসক দলের নেতা হওয়ার কারণেই কপিলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না পুলিশ। শনিবার কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা বলেন,‘কার্যত একতরফা তদন্ত চলছে। কেন্দ্র বা কেজরিওয়াল সরকার কারও উপরেই আমাদের ভরসা নেই। একমাত্র আদালত হস্তক্ষেপ করলে কিছু হতে পারে।’

এরই মধ্যে শনিবার দিল্লির যন্তর-মন্তর থেকে একটি বেসরকারি সংগঠনের উদ্যোগে শান্তি মিছিল বের করা হয়। দিল্লির কনট প্লেস পর্যন্ত হওয়া এই মিছিলে উপস্থিত ছিলেন বিজেপি নেতা কপিল মিশ্রও। তবে তিনি কোনও বক্তৃতা করেননি। যদিও বিরোধীদের প্রশ্ন, উত্তর-পূর্ব দিল্লির সংঘর্ষের ক্ষত যেখানে টাটকা, সেখানে পুলিশ কী ভাবে মিছিলের অনুমতি দিল?

আরো অভিযোগ, ওই মিছিল থেকে ফের উস্কানিমূলক স্লোগান দেয়া হয়। শনিবার দিল্লির রাজীব চক মেট্রো স্টেশনে ‘গোলি মারো’ স্লোগান দেয়ার জন্য ছয় জনকে আটক করেছে পুলিশ। সূত্রের মতে, ওই যুবকেরা মিছিলে যোগ দেয়ার জন্যই ওই স্টেশনে নেমেছিল।

তবে পুলিশ ‘নিষ্ক্রিয়’ হলেও উত্তর-পূর্ব দিল্লির সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে শনিবার স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। এ জন্য দু’টি তদন্তকারী দল গঠন করা হয়েছে।

কী করল দিল্লি পুলিশ

• সংঘর্ষে উত্তাল ভারতের রাজধানী: ২৩-২৬ ফেব্রুয়ারি

• নিহত: ৪২

• আহত: ২০০-র বেশি

• ১২৩টি এফআইআর

• আটক: ৬৩০

নীরব কেন পুলিশ

• পুলিশের কন্ট্রোল রুমের লগ অনুযায়ী

• ২৩ ফেব্রুয়ারি: সন্ধ্যায় ৭০০ ফোন

• ২৪ ফেব্রুয়ারি: ৩ হাজার ৫০০ ফোন

• ২৫ ফেব্রুয়ারি: ৭ হাজার ৫০০ ফোন

• ২৬ ফেব্রুয়ারি: ১ হাজার ৫০০টি ফোন

(শুধু দিল্লির যমুনা বিহার থেকেই ভজনপুরা থানায় ২৪-২৬ ফেব্রুয়ারি ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার ফোন করে পুলিশ পাঠিয়ে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়)

• পুলিশের কাছে এসব ফোন কলে গুলি, আগুন লাগানোর অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা

• কিন্তু কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, লেখা নেই লগে

গত তিন দিনের মতোই শনিবারও দিল্লির সংঘর্ষ কবলিত এলাকাগুলোতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে দাবি করে পুলিশ। নতুন কোনও সংঘর্ষের খবর আসেনি। শনিবার দিনভর ওই সব এলাকায় টহল দেয় পুলিশ ও আধাসেনা। দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত ১৬৭টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার বা আটক করা হয়েছে ৮৮৫ জনকে।

শনিবার দিল্লির পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। পরে তিনিও জানান,‘কোনও এলাকা থেকে সংঘর্ষের খবর আসেনি।’ পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভাল হলেও, উত্তর-পূর্ব দিল্লির সমস্ত স্কুল ৭ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। বন্ধ থাকছে সিবিএসই-র সমস্ত পরীক্ষা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের জরুরি ভিত্তিতে ২৫ হাজার টাকা সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

সংঘর্ষের সময়ে খজুরী খাস এলাকায় মোহাম্মদ আনিস নামে এক বিএসএফ জওয়ানের বাড়ি পুড়িয়ে দেয় উন্মত্ত জনতা। শনিবার বিএসএফের দল তার বাড়ি যায়। এসময় বিএসএফের ডিআইজি পুষ্পেন্দ্র রাঠৌর বলেন,‘আনিসের বিয়ের উপহার হিসেবে আমরা বাড়িটি নতুন করে বানিয়ে দেব।’

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com