বিদ্যুতের দাম বাড়ায় উদ্বিগ্ন উত্তরাঞ্চলের মানুষ

0

বিদ্যুতের দাম বাড়ায় উত্তরাঞ্চলের মানুষের নাভিশ্বাস আরেকদফা বাড়লো। বিশেষ করে নিন্ম, মধ্যবিত্ত ও কৃষকদের মাথায় আবারও বাড়তি খরচের খড়গ। কিভাবে সামাল দিবেন তারা, এই চিন্তায় দিশেহারা তারা। ক্ষুব্ধ মানুষের দাবি দাম আগের চেয়েও কমানো হোক।

বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়টি শুক্রবার দিনভর ছিল উত্তরের সকল শ্রেণি পেশার মানুষের আলোচনায়। বেলা সাড়ে ১০ টায় রংপুর মহানগরীর খামারমোড় এলাকায় গিয়ে দেখা গেলো চায়ের দোকানেসহ ফুটপাতে সবার মুখেই বিদ্যুতের বাড়তি দামের প্রসঙ্গ। জানতে চাইলে হোটেল মালিক আরিফুর রহমান জানালেন, যে বেচাবিক্রি হয়, তাতে সংসার স্বাচ্ছন্দে চালাতে পারি না। কর্মচারিদের বিল বকেয়া থাকে প্রায় প্রতিমাসেই। প্রায়ই অসময়ে তাদের বিল দেই। এবার আরও বাড়লো বিদ্যুতের দাম। একারণে যে শুধু বিদ্যুতের জন্যই বাড়তি টাকা দিতে হবে, তা নয়। এই দামের অজুহাতে প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। খাবার মেকিং খরচ বেশি হবে। কিন্তু গ্রাহকরা বাড়তি দামে হোটেলে খাবেন না। গ্রাহকদের কাছে বাড়তি দাম ধরলে এই নিয়ে বচসা করতে হবে। তার মানে হলো আয় কমে যাবে। আর ব্যয় বাড়বে। এভাবে ব্যবসা বাণিজ্য করে জীবন ধারণ করাটা খুব মুশকিল।

কথা হয় ছাত্রাবাসের বাবুর্চি সুহাসিনী বেগমের সাথে। তিনি জানালেন, ছাত্রাবাসে কাজ করে ৫ জনের সংসার চালাই। এমনিতেই কারেন্ট আমরা কমক খরচ করি। তার পরেও অনেকগুলো বিল দেয়। এখন আবার বিদ্যুতের দাম বাড়লো। তাহলে কিভাবে আমরা চলবো। খরচ করবো কি, বিদ্যুতের বিল দিবো কি। এভাবে গরীব মানুষকের আরও মারার বুদ্ধি করেছে সরকার। আমরা চাই দাম কমুক। আমরাও বাঁচি।

ফুটপাতের চা বিক্রেতা ফারিহা বেগম জানালেন, ১০ টা যদি রোজগার করি, বিদ্যুতের বিল যদি হয ২০ টাকা, তাহলে আমরা করবো কি। আমাদের বাঁচার উপায় কি, সরকারকে তোমরা বলো, বিদ্যুতের দাম কমুক।

অটো চালক শাহরিয়ার আলম বললেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ার কথা শুনে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই গ্যারেজে চার্জের দাম ডাবল বাড়িয়ে দিয়েছে। আয় তো আমাদের আগের মতোই আছে। চার্জ আর জমার বিল দিতে গেলে এখন গুনে দেখতি পাই ১০০ টাকা নাই। গ্রাহককে যদি বলি ভাড়া বৃদ্ধির কথা, তাহলে লাঠালাঠি হয়ে যাবে।

কলেজ শিক্ষক শাফিউর রহমান জানালেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ার সরাসরি প্রভাব পড়েছে আমার পরিবারে। এখন যদি বাড়িতে এসি, ফ্রিজসহ অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী চালাতে যাই, তাহলে অন্যান্য নিত্যপণ্য কেনার টাকা থাকবে না আমার। তাই ভাবছি এসিসহ অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী বিক্রি করে দিবো।

এদিকে বিদ্যুতের দাম বাড়ায় ক্ষোভের অন্ত নেই কৃষকদের। বোরো মওসুম টা কিভাবে পার করবেন, সেটা নিয়ে চিন্তি তারা।

শুক্রবার বিকেলে নগরীর পাঠানপাড়ায় কথা হয কৃষক আব্দুস সালামের সাথে। তিনি জানালেন, আমার এবার মরণ দশা। এমনিতে ঋণ করে বোরো লাগালাম। এখন দেখি বিদ্যুতের দাম বাড়লো। সেচ পাম্প ওয়ালা বৃহস্পতিবার রাতেই জানিয়ে দিয়েছে দোন প্রতি ৩০০ টাকা অতিরিক্ত দিতে হবে। সার, কৃষান, বীজ সবগুলোর দাম বেশি। এখন আবারও বাড়লো সেচের দামও। তার ওপর ধানের দাম নেই। এভাবে আর আবাদ করা সম্ভব না। তাই পরিবারের সাথে পরামর্শ করে বৃহস্পতিবার রাতেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আগামীতে আর বেশি করে ধান লাগাবো না। নিজের পরিবারের জন্য মওসুমে যে চালের প্রয়োজন হয়, সেই পরিমান জমিতেই শুধু ধান লাগাবো। প্রয়োজনে জমি পড়ে থাকবে।

একই ধরণের কথা বললেন, সেখানকার কৃষক আব্দুল আলিম, সাদেকুল ইসলাম, আবুল কালাম আজাদ, লিট চৌধুরী, শাহীন আলম, লিমন। তারা সবাই আগামীতে ধান চাষ কমানোর কথা জানিয়েছেন।

এ ব্যপারে রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা জানিয়েছেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত সঠিক হয় নি। সরকারকে দেখতে হবে সাধারণ জনগনের কথা। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রভাব সব জায়গায় পড়েছে। এর ভুক্তভোগি হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এ কারণে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ বেড়েছে। বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com