নরসিংদীর এক এমপির প্রশ্রয়ে বেপরোয়া পাপিয়া, ফেঁসে যেতে পারেন অনেকে

0

যুবলীগ নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার মোবাইল ফোনের চ্যাটিং লিস্টে রয়েছে অনেক রাঘববোয়ালের নাম। যাদের সঙ্গে পাপিয়ার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল, তাদের অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করবেন গোয়েন্দারা। এরই মধ্যে পাপিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাটি থানা থেকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে গেলেও র্যাব ছায়া তদন্ত চালাবে। গুরুত্বপূর্ণ কোনো চ্যাটিং কিংবা ভিডিও ডিলিট করা হয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত করতে পাপিয়ার মোবাইলসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের ফরেনসিক পরীক্ষাও করা হবে। এ ছাড়া তদন্ত শেষে সিআইডি পাপিয়ার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করবে। 

দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, পাপিয়া পাঁচ তারকা হোটেলের কক্ষ ভাড়া নিয়ে তার সাম্রাজ্য পরিচালনা করতেন। হোটেল কর্তৃপক্ষ তার অবৈধ কার্যক্রমকে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করেছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গুলশানের একটি হোটেলের ভাড়া ও অন্যান্য খরচ বাবদ পাপিয়া প্রতি মাসে পরিশোধ করেছেন নগদ দেড় কোটি টাকার বেশি। 
পাপিয়া এতটাই ক্ষমতাধর ছিলেন যে, দিনের পর দিন পাঁচ তারকা হোটেলে এমন কর্মকাণ্ড চালিয়ে এলেও কেউ কিছু বলার সাহস পাননি। তার পেছনে অনেক রাঘববোয়াল থাকায় অপকর্ম করেও পার পেয়ে যেতেন তিনি। 
এরই মধ্যে যুব মহিলা লীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের নেত্রী ও সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক একজন এমপিসহ আরও অনেকের নাম রিমান্ডে ফাঁস করেছেন পাপিয়া। তদবির বাণিজ্যসহ কিছু অপকর্মে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন তিনি। এমনকি সমাজের ওপর তলার অনেকের মনোরঞ্জনের জন্য রাশিয়া থেকে সুন্দর নারীদের ঢাকায় নিয়ে আসেন পাপিয়া। বিমানবন্দরে ওই রাশিয়ান তরুণীদের আটকে দেওয়া হলেও প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করেই তাদের ছাড়িয়ে নিয়ে গুলশানের একটি ৫ তারকা হোটেলে তোলেন তিনি। 
বিমানবন্দর ও শেরেবাংলা নগর থানায় র্যাবের দায়ের করা তিন মামলায় পাপিয়া-সুমন দম্পতি বর্তমানে ১৫ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। বুধবার মামলার তদন্তভার হস্তান্তর করা হয় ডিবি পুলিশের কাছে। রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে রেখেই তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। 
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, মোবাইল কল ও চ্যাটিং লিস্ট পর্যালোচনা করে পাপিয়ার ঘনিষ্ঠদের একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তার অপকর্মে সহযোগীদের ডেকে ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে প্রয়োজনে আটক করা হবে। ইতোমধ্যে পাপিয়ার ঘনিষ্ঠ কারও কারও ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তাদের মধ্যে সাবেক এক নারী সাংসদসহ কয়েকজনের ব্যাপারে আরও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। 

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আবদুল বাতেন বলেন, পাপিয়ার সঙ্গে কারা, কীভাবে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এত বেপরোয়া হওয়ার পেছনে শক্তির উৎস কী- সবই তদন্ত করে দেখা হবে। 

ডিবি ও র্যাব কর্মকর্তারা জানান, নরসিংদীর একটি সাধারণ পরিবারে বেড়ে ওঠা পাপিয়া মাফিয়া ডনের মতো আচরণ করতেন। কয়েক কোটি টাকাসহ বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। অভিজাত হোটেলে সুন্দর তরুণীদের সহায়তা ছাড়াও মাদক বাণিজ্য ও জাল টাকার কারবার করতেন। প্রভাবশালীদের মাধ্যমে নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৈধ-অবৈধ গ্যাস সংযোগসহ অনেককে লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে চাকরি দিয়ে আসছিলেন তিনি। নিজে নিয়মিত মাদক সেবন করতেন। প্রতারণার ফাঁদ পেতে টাকা আদায়ে অনেককে নির্যাতনও করতেন তিনি। 
যুব মহিলা লীগের দুই নেত্রী বলেন, নরসিংদীর সাবেক এক এমপির সুপারিশে তিনি ২০১৪ সালে জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক হন। কয়েক বছর ধরে পাপিয়া নরসিংদীর বর্তমান এক এমপির সমর্থন পাচ্ছিলেন।
নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক (বহিস্কৃত) শামীমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ ও তার স্বামী সুমন চৌধুরীকে আরও দুই সহযোগীসহ গত ২২ ফেব্রুয়ারি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বহির্গমন গেট পার হওয়ার সময় গ্রেপ্তার করে র্যাব। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা, ইয়াবা, মদ ও জাল মুদ্রা উদ্ধার করা হয়। পরের দিন তাদের নিয়ে নরসিংদী ও রাজধানীর ফার্মগেটের বাসায় অভিযান চালায় র্যাব। অভিযানে ফার্মগেটের বাসা থেকে নগদ ৫৮ লাখ টাকা, অবৈধ পিস্তল, গুলি, বিদেশি মুদ্রা ও মদ জব্দ করা হয়।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com