দানা বাঁধছে ব্রিটেন ও ইইউর নতুন সঙ্ঘাত

0

আগামী সপ্তাহে ব্রেক্সিট-পরবর্তী সম্পর্ক নিয়ে ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে আলোচনা শুরু হচ্ছে। কিন্তু তার আগেই দুই পক্ষের মধ্যে জোরালো মতপার্থক্য স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ৩১ জানুয়ারি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করেছে ব্রিটেন। তবে চলতি বছরে অবশ্য দুই পক্ষের মধ্যে সম্পর্ক প্রায় অটুট থাকবে। প্রশ্ন হলো- ২০২১ সালের শুরু থেকে বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সম্পর্কের রূপরেখা কী দাঁড়াবে ? আগামী সপ্তাহ থেকে ব্রেক্সিট-পরবর্তী এই সম্পর্ক নিয়ে ব্রিটেন ও ইইউর মধ্যে আলোচনা শুরু হবে। তার আগেই দুই পক্ষের মধ্যে মতপার্থক্য ও উত্তেজনা বেড়েই চলেছে।

গত মঙ্গলবার ইইউ ব্রিটেনের সাথে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে আলোচনার চূড়ান্ত রূপরেখা স্থির করেছে। সদস্য দেশগুলোর ইইউর ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রীরা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধান মধ্যস্থতাকারী মিশেল বার্নিয়েকে এই রাষ্ট্রজোটের প্রতিনিধি হয়ে আলোচনা চালাবার ম্যানডেট বা অধিকার দিয়েছেন। তার দল সেই নীতির ভিত্তিতেই আলোচনা শুরু করবে। বাণিজ্য ছাড়াও নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, ভ্রমণ, মাছ ধরার অধিকার ইত্যাদি বিষয় আলোচনায় স্থান পাবে।

৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ঐকমত্য অর্জন করা সম্ভব না হলে হয় আলোচনার সময়সীমা বাড়াতে হবে, অথবা কোনো বোঝাপড়া ছাড়াই ব্রিটেন ইইউর অভ্যন্তরীণ বাজার ও শুল্ক এলাকা ত্যাগ করবে। আলোচনার আগেই দুই পক্ষের অবস্থানের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য দেখা যাচ্ছে। এখনকার মতোই ইইউর অভ্যন্তরীণ বাজারে ব্রিটেনের প্রবেশের অধিকার অনেকটাই বজায় রাখার প্রস্তাব রেখেছে ব্রাসেলস। কিন্তু তার শর্ত হিসেবে ব্রিটেনকে ইইউর বেশির ভাগ বিধিনিয়ম মেনে চলতে হবে।

মিশেল বার্নিয়ে বলেন, ইইউ ব্রিটেনের সাথে সার্বিক ও স্থায়ী এক বোঝাপড়া করতে পস্তুত। তবে যেকোনো মূল্যে চুক্তি স্বাক্ষর করা হবে না। উল্লেখ্য, সময়ের চাপের বদলে দুই পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য ‘ভালো’ চুক্তির লক্ষ্য স্থির করেছে ইইউ। ব্রিটেন দ্রুতই আনুষ্ঠানিকভাবে ইইউর সাথে আলোচনার ম্যানডেট প্রকাশ করবে। গত সোমবারই ব্রিটিশ মন্ত্রিসভা সে বিষয়ে আলোচনা করেছে। এ ক্ষেত্রে ব্রিটেনের অবস্থান একেবারেই ভিন্ন। প্রথমত, যেকোনো মূল্যে ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই আলোচনা শেষ করতে বদ্ধপরিকর বরিস জনসনের সরকার। ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি ব্রেক্সিট পুরোপুরি কার্যকর করে ‘স্বাধীন’ ব্রিটেন বাকি দেশগুলির সাথে বাণিজ্য চুক্তি করতে চায়। প্রয়োজনে কোনো চুক্তি ছাড়াই ইইউর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার সম্ভাবনার কথা বলেছে ব্রিটেন। কানাডার সাথে ইইউর চুক্তির ভিত্তিতে বোঝাপড়া চায় সে দেশ। জনসন বলেন, কানাডা ও জাপানের মতো দেশের ওপর নিজস্ব বিধিনিয়ম না চাপিয়ে ইইউ বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ব্রিটেনও সেই একই আচরণ প্রত্যাশা করে।

কিন্তু ইইউ সেই ফাঁদে পা রাখতে চাইছে না। বার্নিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, প্রায় পাঁচ হাজার কিলোমিটার দূরের দেশ কানাডার সাথে ইইউর বাণিজ্য চুক্তি ব্রিটেনের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা সম্ভব নয়। কারণ এবার সেদেশ ইইউর তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য সহযোগী হয়ে উঠতে চলেছে। অর্থাৎ দুই পক্ষের মধ্যে কানাডার তুলনায় প্রায় ১০ গুণ বেশি ব্যবসা-বাণিজ্য হতে পারে। সে ক্ষেত্রে একই নিয়ম অনুসরণ করা সম্ভব নয়।
এ দিকে জাতিসঙ্ঘের এক রিপোর্ট অনুযায়ী ব্রিটেন কোনো বোঝাপড়া ছাড়াই ইইউর অভ্যন্তরীণ বাজার ত্যাগ করলে সে দেশের রফতানি বাণিজ্যের মারাত্মক ক্ষতি হবে। বছরে প্রায় ৩২০ কোটি ডলার মূল্যের লোকসানের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে সেই রিপোর্টে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com