আরও সিন্দুকের খোঁজে র‌্যাব

0

ক্যাসিনোকাণ্ডে গ্রেপ্তার পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা এনামুল হক এনু ও রুপন ভূঁইয়ার আরও টাকাভর্তি সিন্দুকের খোঁজে নেমেছে র‌্যাব। দ্বিতীয় দফা অভিযানে ২৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা ও স্বর্ণালংকারসহ এই দুই ভাইয়ের আরও পাঁচটি সিন্দুক উদ্ধারের পর গতকাল বুধবার দেশ রূপান্তরকে এ তথ্য জানিয়েছেন র‌্যাবের একাধিক কর্মকর্তা। তারা জানিয়েছেন, পুরান ঢাকার এই ‘জুয়াড়ি পরিবারের’ সদস্যদের ক্যাশিয়ার শিপলু ছাড়াও আরও ১০ জনকে খোঁজা হচ্ছে। বিপুল পরিমাণ টাকার বস্তা ও একাধিক সিন্দুক বিভিন্ন গোপন আস্তানায় সরিয়ে এরই মধ্যে গা ঢাকা দিয়েছে তারা।

গত মঙ্গলবার দুপুরে সোমবার মধ্যরাত থেকে চালানো অভিযানে পুরান ঢাকার লালমোহন সাহা স্ট্রিটের ১১৯ বাড়ির নিচতলা থেকে এনু-রুপন ভাইদের আরও পাঁচটি সিন্দুক উদ্ধারের কথা জানায় র‌্যাব। তারা আরও জানায়, ওই পাঁচ সিন্দুকে ২৬ কোটি ৫৫ লাখ ৬০০ টাকা, ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার এফডিআর পাওয়া গেছে। এছাড়া ৯ হাজার ২০০ ইউএস ডলার, ১৭৪ মালয়েশিয়ান রিংগিত, ৩৫০ ভারতীয় রুপি, ১ হাজার ৫৯৫ চাইনিজ ইউয়ান, ১১ হাজার ৫৬০ থাই বাথ ও ১০০ দিরহাম এবং বিভিন্ন ধরনের সোনার গহনা পাওয়া গেছে প্রায় এক কেজি। এ অভিযানের পর গতকাল বুধবার ওয়ারী থানায় দুটি মামলা করা হয়েছে। ওয়ারী থানার ওসি মো. আজিজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, মঙ্গলবার র‌্যাবের অভিযানে বিপুল পরিমাণ অর্থ উদ্ধারের ঘটনায় রাতে বিশেষ ক্ষমতা আইন ও মুদ্রাপাচার আইনে দুটি মামলা হয়েছে। এসব মামলার আলামত হিসেবে ওই বিপুল পরিমাণ অর্থ, এফডিআর নথি, বিদেশি মুদ্রা ও স্বর্ণালংকার বুঝে রাখা হয়েছে।

র‌্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এনু-রুপনের টাকার ভাণ্ডার দেখে তারা হতবাক। বিভিন্ন মাধ্যমে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তাদের টাকাভর্তি আরও সিন্দুক বা বস্তা রয়েছে। তবে সেইসব সিন্দুকের অবস্থান ও সেখানে কী পরিমাণ টাকা রয়েছে এখনো তা জানা যায়নি।

এ বিষয়ে র‌্যাব-৩-এর অধিনায়ক রাকিবুল হাসান বলেন, ‘আমরা বেশ কয়েকজনকে খুঁজছি। তাদের গ্রেপ্তার করতে পারলে অনেক তথ্য জানা যাবে।’ সিপিসি-৩ কমান্ডার বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘বস্তা বস্তা টাকার অন্তত ১০ জন বাহকের বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।’

র‌্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়া, নারিন্দাসহ বিভিন্ন এলাকার অলিগলিতে এনু-রুপনদের অসংখ্য বাড়ি ও ফ্ল্যাট রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ওই সব বাড়ি কিংবা ফ্ল্যাটের খোঁজ পাওয়া গেলে আরও অর্থ মিলবে।

তারা আরও জানান, গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর গেণ্ডারিয়া, ওয়ারী এবং সূত্রাপুরে অভিযান চালিয়ে র‌্যাব এনু-রুপনের বাসা থেকে ৫ কোটি ৫ লাখ ৯৪২ হাজার ১০০ টাকা ও সাড়ে ৮ কেজি সোনা উদ্ধার করা হয়। তখন থেকেই তাদের বাড়ি, ফ্ল্যাট ও বিভিন্ন জায়গায় রাখা টাকার সিন্দুকের খোঁজ চলছিল।

ওই অভিযানের পর গত ২৮ সেপ্টেম্বর দেশ রূপান্তরে ‘হদিস নেই ৩২ সিন্দুকের’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে বংশালের ইংলিশ রোডের ‘শাবনাজ স্টিল কোং’ থেকে বিশেষ ফরমায়েশ দিয়ে ওই সিন্দুকগুলো তৈরির কথা বলা হয়। এরপর গত মঙ্গলবার এনু-রুপন ভাইদের আরও পাঁচটি সিন্দুক উদ্ধারের তথ্য জানিয়েছে র‌্যাব। 

র‌্যাব-৩-এর এক কর্মকর্তা জানান, এনু-রুপনের চাচাত ভাই শিপলুকে খুঁজছেন তারা। তিনি এইসব অবৈধ অর্থের ক্যাশিয়ার ছিলেন। তার তত্ত্বাবধানেই বিভিন্ন গোপন আস্তানায় বিপুল অর্থের মজুদ করে রাখা হয়। লালমোহন সাহা স্ট্রিটের ১১৯ নম্বরের মমতাজ ভিলার পঞ্চম তলায় আস্তানা ছিল শিপলুর। এনু-রুপন গ্রেপ্তার হওয়ার পরই তিনি আত্মগোপনে চলে যান। গভীর রাতে তার ওই বাসায় আসার তথ্য থাকলেও মঙ্গলবারের অভিযানের সময় তাকে সেখানে পাওয়া যায়নি।

র‌্যাবের আরেক কর্মকর্তা জানান, ক্যাশিয়ার শিপলু দুই ভাই এনু-রুপনের সব অর্থের হিসাব রাখতেন। এ কারণে তাকে পাওয়া গেলে তার অন্যান্য সিন্দুকের তথ্য পাওয়া যাবে। ওই কর্মকর্তার ধারণা, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান ও দুই ভাই গ্রেপ্তারের পর থেকেই তাদের বিপুল পরিমাণ অর্থ বিভিন্ন গোপন আস্তানায় সরিয়ে রাখা হয়। কাজেই শিপলুকে ধরতে পারলেই দুই ভাইয়ের সব বাড়ি, ফ্ল্যাট, জমি ও অর্থের সন্ধান পাওয়া যাবে। এছাড়া র‌্যাবের পক্ষ থেকে স্থানীয় ভূমি অফিসেরও দুই ভাইয়ের জমির পরিমাণ জানার চেষ্টা চলছে।

গত সেপ্টেম্বরে ওই অভিযানের পর আত্মগোপনে চলে যান ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের অংশীদার এনু-রুপন। গত ১৩ জানুয়ারি কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যায় এক কর্মচারীর বাড়ি থেকে নগদ ৪০ লাখ টাকা ও বেশ কয়েকটি বাড়ির দলিলসহ সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার হন তারা। অভিযোগ রয়েছে, মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় প্রথমে ওয়ান-টেন ও পরে ক্যাসিনো চালুর নেপথ্যে ছিলেন এনু-রুপন। স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক শীর্ষ নেতাকে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা দিয়ে আওয়ামী লীগের থানা কমিটিতে পদ বাগিয়েছিলেন তারা। এনু গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও রুপন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

গত সেপ্টেম্বরে এনু-রুপনের বাসায় অভিযানের পর তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে  মামলা হয়। পরে জানুয়ারিতে সিআইডির হাতে গ্রেপ্তারের পর প্রথম দফায় চার দিন ও দ্বিতীয় দফায় চার দিনের রিমান্ড শেষে তারা এখন কারাগারে রয়েছেন। সিআইডি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রিমান্ডে এনু-রূপন ঢাকায় ১২১টি ফ্ল্যাট, ১২ প্লটে ৭২ কাঠা জমি এবং পাঁচটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য দিয়েছিল। আর তাদের এই অর্থের উৎস ছিল ক্যাসিনো কারবার।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com