আমরা আশা করবো নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন হবে: দুদক চেয়ারম্যান
নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।
সোমবার (২৫ আগস্ট) দুপুরে সেগুনবাগিচায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, সামনে একটা ভালো নির্বাচন যেন হয় সেজন্য সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বারবার একটা ভালো নির্বাচনের কথা বলেছেন। সেই পরিস্থিতি আমরা স্পষ্ট দেখতে পারছি। যদিও নির্বাচন দুদকের বিষয়বস্তু নয়, নাগরিক হিসেবে দেখতে পারছি সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। আমরা আশা করবো নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন হবে।
নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার সুযোগ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি যেহেতু গণক না, কাজেই…। আমি এখন পর্যন্ত যেটুকু বুঝতে পারছি, নির্বাচন সময়মতোই হবে। একদম নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন হবে।
জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, একদম সুনির্দিষ্ট হুঁশিয়ারি, যারা কালোটাকা ব্যবহার করছেন আপনারা তাদের প্রত্যাখ্যান করুন।
যদি নির্বাচন হয়, নির্বাচনে কালোটাকার একটা প্রভাব থাকে। আগামী নির্বাচনে কালোটাকার প্রভাব কমাতে দুদক কী উদ্যোগ নেবে- এমন প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, ‘যদি নির্বাচন হয়’ এই জায়গা থেকে সরে যেতে চাই। নির্বাচন হবে। নির্বাচন হলে টাকা-পয়সার খরচ বেড়ে যায় বিভিন্ন কারণে। আমাদের দেশে ভোটার কেনারও একটা ব্যাপার আছে। টাকা-পয়সার সরবরাহ যখন বাড়ে; একটা হচ্ছে ডিমান্ড সাইড, একটা সাপ্লাই সাইড। ভোটার তো কিছু টাকা চাইবেই, কিছু সুবিধা চাইবে। আমাদের আসলে সাপ্লাই সাইড বন্ধ করতে হবে। সাপ্লাই সাইড কারা বন্ধ করবে, যারা সরবরাহ করে। সেক্ষেত্রে আমাদের ব্যাংকিং ইন্টিলিজেন্স আছে। আমাদের ও কিছু ভূমিকা আছে। যতটা সম্ভব নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, সাংবাদিকদেরও দায়িত্ব আছে। কোথায় বেশি টাকা খরচ হলো সেটা আমাদের চোখে পড়তে হবে। প্রার্থীরা তাদের সম্পদ বিবরণী জমা দেবেন। সেখানে যদি দেখা যায় তারা কিছু লুকাচ্ছেন, সেটা অভিযোগ আকারে দুদককে দেবেন। দুদক কাজ করবে। আমি এর আগেও কাজ করেছি।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, হুট করে দেশে অবৈধ টাকার পরিমাণ বেড়ে যাবে, তাতে একপর্যায়ে মুদ্রাস্ফীতিও তৈরি করতে পারে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে আগে থেকেই।
যারা প্রার্থী হবেন তাদের ব্যাপারে নজরদারি করা হবে কি না- জানতে চাইলে আবদুল মোমেন বলেন, দুদকের সীমাবদ্ধতা আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে। এই সীমাবদ্ধতার মধ্যে আমাদের পক্ষে যতটা সম্ভব, আমরা লক্ষ্য রাখবো।
হলফনামায় তথ্যের অসংগতি নিয়ে কাজ করবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, হলফনামা দাখিল করার পর হাতে খুব কম সময় থাকে। এটা পরীক্ষা করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আমার মনে হয় মিডিয়া এই কাজটা করতে পারে। শুরুতেই আপনাদের যদি মনে হয়, প্রার্থী অবিশ্বাস্য রকমের কম সম্পদ দাখিল করেছেন এবং বাস্তবে তার সম্পদ অনেক বেশি; সঙ্গে সঙ্গে আপনারা রিপোর্ট করবেন। আমরা আমাদের মতো কাজ শুরু করবো।
কালো টাকা বন্ধ থেকে দুদক কী সুপারিশ করবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমত কালো টাকা গ্রহণযোগ্য নয়, এটা রাষ্ট্র একাধিকবার বলেছে। এর পক্ষে কথা বলার সুযোগ নেই। আমরা চাই কালো টাকার ব্যবহার বা প্রচার যেন না হয়। এটাই আমরা চাই।
দুদকের মামলার আসামি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি না জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, আমার মনে হয় দুদক সম্পর্কে আপনাদের সম্ভবত কিছুটা আস্থা আছে। আমরা চেষ্টা করবো সেই আস্থা রক্ষা করতে। আমাদের আইন-কানুন ঘেটে দেখতে হবে। যেমন ধরুন, অভিযুক্ত যদি হয়ে থাকেন; অভিযুক্ত যদি সাজাপ্রাপ্ত হয়ে থাকেন, সাজার একটা লিমিট আছে, কোন পর্যন্ত সাজা; সেক্ষেত্রে এই অংশটুকু করবে নির্বাচন কমিশনের যে আইন, সেই আইনে। আমরা শুধু তাদের তথ্যটুকু দিতে পারবো, যে এদের বিরুদ্ধে এই মামলা হয়েছে, এই সাজা হয়েছে।
ঘোষিত সময়ের মধ্যেই ভোট হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি তো না হওয়ার কোনো কারণ দেখি না। সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং সরকারের প্রস্তুতিও চলছে।
কালোটাকা বন্ধ ও প্রার্থীদের সম্পদের অসংগতি রোধে দুদকের ভূমিকা প্রসঙ্গে এক কথায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা নিশ্চিত ভূমিকা পালনের চেষ্টা করবো।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাো বরং আওয়াজ তুলুন আমরা দুর্নীতিবাজ এমপি চাই না। আপনারা সেই আওয়াজটা তুলেন ভালো করে। তারপর দেখবেন ইসি ও দুদক- আমরা আরও বেশি সক্রিয় হবো ও সতর্ক থাকবো।
তিনি বলেন, কালোটাকা নিয়ে নির্বাচনে আসার সুযোগ একেবারেই নেই। তারপরও যদি কেউ আসে আইনের ফাঁক-ফোকর গলিয়ে, আপনারা ধরিয়ে দেবেন। আমরা আমাদের পক্ষে যতটা সম্ভব কাজ করে যাবো। শুধু দুদক নয়, বাংলাদেশের অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যারা কালোটাকার মালিকদের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে শুরু করে অর্থ মন্ত্রণালয়, বিএফআইইউ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের বিরুদ্ধে কাজ করছে।
আপনারা দায়িত্ব নেওয়ার পর অনেক মামলা হয়েছে, সেই মামলাগুলো আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নিষ্পত্তি হওয়ার মতো কোনো অবস্থায় আছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে দুদক বিচারও করে। দুদকের কাজ বিচার করা নয়। দুদকের কাজ মামলাটাকে প্রস্তুত করে আদালত দাখিল করা। যেসব মামলা আদালতে দাখিলকৃত ও চলমান, সেগুলোর ক্ষেত্রে যদি ঘন ঘন তারিখ পড়ে তাহলে আশা করতে পারেন দ্রুত রায় হবে। আদালত যদি দীর্ঘসময় নেয়, তাহলে দেরি হবে।
তিনি বলেন, আমরা প্রত্যাশা করবো যেসব মামলা আমরা আদালতে দাখিল করেছি সেগুলো যেন তাড়াতাড়ি নিষ্পত্তি হয় এবং সবার জন্য যেন জাস্টিস হয়।
নির্বাচনকেন্দ্রিক দুদক আলাদা কোনো কাজ করবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা পরিকল্পনা করবো। আমি তো আগেই বলেছি, দুদকের একটি স্পেসিফাইড জব আছে। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ আমাদের খুব কম। তারপরও আমরা সজাগ থাকার চেষ্টা করবো যেন নির্বাচনকালীন কালো টাকার ছড়াছড়ি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।