ঢাকা সিটি কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি মনোনীত হয়েছেন ব্যারিস্টার অসীম

0

ঢাকা সিটি কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি মনোনীত হয়েছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম। সাম্প্রতিক সময়ে কলেজটিতে গভর্নিং বডির সভাপতি ও অধ্যক্ষ পদে বসা নিয়ে ঝামেলা এবং এরই জেরে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকার মধ্যে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

গতকাল মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে বিদ্যোৎসাহী সদস্য করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজি মোহাম্মদ মাহবুবর রহমানকে।

জানা যায়, সরকার পরিবর্তনের পর ঢাকা সিটি কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতিও পরিবর্তন করা হয়। আগের সভাপতির জায়গায় উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে বসানো হয়। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০২৫ সালের ১২ মে’র নির্দেশনায় বলা হয়, কোনও উপাচার্য কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি হতে পারবেন না। সে অনুযায়ী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ২৬ জুন নতুন সভাপতি হিসেবে নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটের পানি সম্পদ প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির মোস্তফা খানকে আর বিদ্যোৎসাহী সদস্য হিসেবে নিয়োগ পান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান।

নতুন সভাপতি ও বিদ্যোৎসাহী সদস্য গত ১ জুলাই প্রথমবারের মতো কলেজে গেলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তাদের সঙ্গে দেখা করেননি। শুধু তাই নয়, নতুন সভাপতির সঙ্গে দেখা না করার অজুহাতে কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম দুই দিন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছিল। সেসময় কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ড. সাব্বির মোস্তফা খান সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের নিয়ে এসে কলেজে হামলা এবং ব্যাপক ভাঙচুর করেছেন। পরে এ নিয়ে থানায় মামলাও করা হয়েছিল।

এরপর ৮ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে সিটি কলেজের শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ) অধ্যাপক কাজি নেয়ামুল হক দাবি করেন, কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগে অর্ধ কোটি টাকার ঘুষ দাবি করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লা। গত ৪ জুলাই ধানমন্ডি ৮/এ বিশ্ববিদ্যালয় অফিসে ডেকে এই ঘুষ দাবি করেন উপাচার্যের পিএস আমিনুল আক্তার। পরে এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহ।

তিনি বলেন, এটি একটি বিশেষ স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর অপচেষ্টা, যাদের উদ্দেশ্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান সংস্কার ও সিটি কলেজের নানাবিধ অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ওঠা তদন্ত কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করা। এছাড়া কিচ্ছা-কাহিনী নির্ভর এই সংবাদ সম্মেলনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, অধ্যাপক কাজি নেয়ামুল হক কলেজের স্বঘোষিত অধ্যক্ষ। নিয়ম অনুযায়ী তিনি, এ পদে থাকতে পারেন না। তবে অধ্যাপক কাজি নেয়ামুল হক এ দাবি অস্বীকার করে বলেন, আজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সভাপতি মনোনয় দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে কলেজের পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক। আশা করি, আগামীকাল থেকে কলেজের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

এদিকে, কাজি নিয়ামুল হক এবং তার ঘনিষ্ঠ প্রশাসনিক সিন্ডিকেটের পদত্যাগের দাবিতে ফের বিক্ষোভে নামেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। গতকাল সোমবার (১৪ জুলাই) দুপুরে কলেজ চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি করেন কলেজের ২৫ ও ২৬তম ব্যাচের একাধিক শিক্ষার্থী।

তাদের অভিযোগ, স্বঘোষিত অধ্যক্ষ কাজি নিয়ামুল হক কলেজ পরিচালনায় স্বেচ্ছাচারিতার চর্চা করছেন এবং তার নেতৃত্বে গঠিত একটি নির্দিষ্ট সিন্ডিকেট প্রশাসনিক অনিয়মে জড়িত।

এর আগে গত ৮ জুলাই শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলাকালে শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী আহত হন। আহতরা হলেন- এইচএসসি ২৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান তানিম ও অপু। তাদের ধানমন্ডির পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় কলেজ কর্তৃপক্ষ একাদশ শ্রেণির প্রথম বর্ষের পরীক্ষা স্থগিত করে এবং পরদিন ৯ জুলাই অভ্যন্তরীণ ক্লাস ও ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিতব্য পরীক্ষাগুলো যথারীতি চলবে বলে জানানো হয়।

তবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলছেন, অধ্যক্ষের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে। তারা কলেজ প্রশাসনের ‘একতরফা ও দমনমূলক’ নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রাস্তায় থাকবে।

সূত্র: দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.