তেহরানকে ফের আলোচনার টেবিলে আনতে গোপনে চেষ্টা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

0

তেহরানকে ফের আলোচনার টেবিলে ফিরে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এর অংশ হিসাবে ইতোমধ্যে কয়েকটি বিষয়ে ইরানকে সাহায্য করতে আলোচনা করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এসবের মধ্যে রয়েছে শান্তিপূর্ণ বেসামরিক জ্বালানি উৎপাদন, পারমাণবিক কর্মসূচি গড়তে প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার অর্থ সহায়তা, নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা এবং বিদেশে আটকে থাকা ইরানের কয়েক বিলিয়ন ডলার ছাড় করা। এ আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চারটি সূত্র সিএনএনকে এসব তথ্য জানিয়েছে। এদিকে ইরানের সঙ্গে সংঘাত চলাকালে সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল ইসরাইল। কিন্তু তাকে খুঁজে না পাওয়ায় তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি।

সিএনএনকে সূত্রগুলো জানিয়েছে, ইরান-ইসরাইলের মধ্যে সামরিক সংঘাত চলার মধ্যেও যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যের কিছু প্রভাবশালী পক্ষ পর্দার আড়ালে ইরানের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে গেছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পরও এ আলোচনা চলছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলেছেন, আলোচনায় বেশ কয়েকটি প্রস্তাব তোলা হয়েছে। এগুলো এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং প্রতিনিয়ত পাল্টাচ্ছে। দুটি সূত্র সিএনএনকে জানিয়েছে, অন্তত একটি খসড়া প্রস্তাবে ইরানের জন্য বেশ কয়েকটি আকর্ষণীয় প্রণোদনা রাখা হয়েছে। এর কিছু প্রস্তাব চূড়ান্ত হয় গত শুক্রবার (ইরানে মার্কিন সামরিক হামলার ঠিক আগের দিন) হোয়াইট হাউজে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও উপসাগরীয় মিত্রদের মধ্যে কয়েক ঘণ্টার গোপন বৈঠকে। এর মধ্যে রয়েছে ইরানের একটি নতুন বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচিতে ২০-৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব। তবে শর্ত হলো, এই কর্মসূচিতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করা যাবে না।

একজন কর্মকর্তা জোর দিয়ে বলেছেন, এই অর্থ সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র দেবে না। ওয়াশিংটন চায়, আরব মিত্ররা এই ব্যয়ভার বহন করুক। ট্রাম্প প্রশাসনের ওই কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে এ আলোচনায় নেতৃত্ব দিতে ইচ্ছুক। আর পারমাণবিক কর্মসূচি নির্মাণের খরচটা অন্য কাউকে দিতে হবে; আমরা সেটা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেব না।’

সিএনএনের হাতে আসা খসড়া প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রস্তাবিত অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার মধ্যে রয়েছে : ইরানের ওপর কিছু নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সম্ভাবনা এবং বিদেশি ব্যাংকে জব্দ থাকা ছয় বিলিয়ন ডলার তেহরানকে ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া।

গত সপ্তাহে আনা আরও একটি প্রস্তাব এখন বিবেচনাধীন। সেটি হলো : মার্কিন বাংকার বাস্টার বোমা ফেলা ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনার জায়গায় নতুন ‘নন-এনরিচমেন্ট’ (ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণবিহীন) কর্মসূচি গড়ে তোলা। এর খরচ বহন করবে উপসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলো। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত দুটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। তবে ইরান এই নতুন প্রকল্পে নিজের ফোরদোর মূল স্থাপনার জায়গাটিই ব্যবহার করতে পারবে কিনা বা এই প্রস্তাব কতটা গুরুত্বের সঙ্গে ভাবা হচ্ছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

আলোচনা সম্পর্কে অবগত একটি সূত্র সিএনএনকে বলেছে, ‘বিভিন্ন মহল থেকে নানা গঠনমূলক প্রস্তাব উঠে আসছে। অনেকেই বেশ ব্যতিক্রমী সমাধান খোঁজার চেষ্টা করছেন।’

উইটকফের গোপন বৈঠকে গৃহীত শর্তাবলি নিয়ে গত কদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে-মূলত কাতারের মধ্যস্থতায় আলোচনা চলছে। একটি সূত্র জানায়, এ সপ্তাহের শুরুতে ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের নেপথ্যেও কাতার মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। ভবিষ্যতে এই সংঘাত যাতে ফের শুরু না হয়, সেজন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে কাতার। ট্রাম্প প্রশাসনের আশা, গত দুই সপ্তাহের ঘটনাপ্রবাহের পর ইরান এখন যুক্তরাষ্ট্রের শর্তে রাজি হতে পারে। পাশাপাশি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা থেকেও সরে আসতে পারে।

ন্যাটো সম্মেলন শেষে বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, সম্প্রতি ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধের কারণে ওয়াশিংটন-তেহরান আলোচনা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সেই আলোচনা আগামী সপ্তাহে শুরু হবে। ট্রাম্প আরও জানান, ওই সময় দুই দেশের মধ্যে চুক্তিও স্বাক্ষর হতে পারে।

এদিকে ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে যাচ্ছে বলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি নাকচ করেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এক সাক্ষাৎকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইরানের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠকের কোনো পরিকল্পনা নেই। আরাঘচি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র নিজের স্বার্থে এই আলোচনায় বসতে চাচ্ছে কিনা, তা মূল্যায়ন করছে তেহরান। আরাঘচি বলেন, পারমাণবিক স্থাপনার ক্ষতি কম ছিল না এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির নতুন বাস্তবতা খুঁজে বের করছে।

খামেনিকে শেষ করে দিতে চেয়েছিল ইসরাইল : ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে সংঘাত চলাকালে সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যা করতে চেয়েছিল ইসরাইল। বৃহস্পতিবার ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ এ কথা বলেছেন। ইসরাইলি টেলিভিশন চ্যানেল ১৩-কে দেয়া সাক্ষাৎকারে কাৎজ আরও বলেন, আমরা খামেনিকে নির্মূল করতে চেয়েছিলাম, যদি আমরা তাকে দেখতে পেতাম, তাহলে আমরা তাকে শেষ করে দিতাম।

সাক্ষাৎকারে আরও প্রশ্ন করা হয়, এমন একটি হামলার জন্য কি যুক্তরাষ্ট্রের অনুমতির প্রয়োজন ছিল? এর জবাবে কাৎজ বলেন, ‘এসব ক্ষেত্রে আমাদের যুক্তরাষ্ট্রের অনুমতির প্রয়োজন হয় না।’ এছাড়া কান এবং চ্যানেল ১২-এর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী একই রকম মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ইসরাইলের নীতি ছিল ইরানের আকাশসীমার নিয়ন্ত্রণ নেয়া এবং প্রয়োজনে বিমান হামলার মাধ্যমে নিশ্চিত করা যেন তাদের পারমাণবিক বা দূরপাল­ার ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি পুনরায় শুরু করতে না পারে।

সাক্ষাৎকারে কাৎজ বলেন, ইরানি নেতাকে হত্যার জন্য পরিকল্পনা করা হয়েছিল, কিন্তু বাংকারে লুকিয়ে থাকায় ইসরাইল তাকে খুঁজে পায়নি। তিনি আরও বলেন, খামেনিও এটা বুঝতে পেরেছিলেন, তিনি খুব গভীরে লুকিয়ে ছিলেন, এমনকি কমান্ডারদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছিলেন। ফলে শেষ পর্যন্ত তাকে হত্যা করা যায়নি।

তবে খামেনি তার জেনারেলদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছিলেন বলে কাৎজ যে দাবি করেছেন তার পক্ষে কোনো প্রমাণ মেলেনি। যুদ্ধ চলাকালে খামেনি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেছেন।

আলজাজিরা বলছে, খামেনিকে হত্যা করা হলে এই সংঘাতের উত্তেজনা অনেক বেড়ে যেত। কারণ, খামেনি ইরানের কার্যত রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার পাশাপাশি বিশ্বের কোটি কোটি শিয়া মুসলমানের কাছে শীর্ষ ধর্মীয় নেতা।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.