পদকের অবনমন! সাখাওয়াত সায়ন্ত

0

’৫২-এর ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য একুশে পদক এবং ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, শিক্ষা, সাহিত্য-সংস্কৃতি, সাংবাদিকতা, জনসেবা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, সঙ্গীত, খেলাধুলা, শিল্পকলা, উন্নয়নসহ ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষ অবদানের জন্য রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কারও চালু করেছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম।

১৯৭৬ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান চালু করেন একুশে পদক। তাঁর সময়ে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, ড. মুহাম্মদ কুদরত-ই-খুদা, কবি সুফিয়া কামাল, সাহিত্যিক সাংবাদিক আবুল কালাম শামসুদ্দিন, সাংবাদিক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, কবি শামসুর রাহমান, সঙ্গীতশিল্পী আবদুল আলীম, লেখক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, শিল্পী আলতাফ মাহমুদ, কবি আহসান হাবীব, শিল্পী আবদুল লতিফ, সাহিত্যিক আবুল হোসেন, চিত্রশিল্পী মুর্তজা বশীর, সাহিত্যিক রাহাত খানসহ অনেককে সম্মানিত করা হয় একুশে পদক দিয়ে।

বিএনপি সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে বেগম খালেদা জিয়ার সময়ে সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ, সাংবাদিক আতাউস সামাদ, লেখক আহমেদ রফিক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ, শিল্পী মুস্তাফা জামান আব্বাসী, শিক্ষাবিদ ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীসহ আরো অনেককে এ পদকে ভূষিত করে সম্মানিত করা হয়।

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার হলো ‘স্বাধীনতা দিবস’ পুরস্কার। আজ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যারা এ পদক পেয়ে গর্বিত হচ্ছেন তারা কি জানেন, শহীদ জিয়াই এ পদক চালু করে তাদের সম্মানিত করার ব্যবস্থা করেছিলেন?

১৯৭৭ সালে প্রথমবারের মতো দেয়া হয় এ পদকটি। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তার সময়েই মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ডা: মোহাম্মদ ইব্রাহীম, শিল্পী রুনা লায়লা, কবি জসীমউদ্দীন, কবি শামসুর রাহমান, রণদা প্রসাদ সাহা, সঙ্গীতজ্ঞ সমর দাস, সাহিত্যক আবুল মনসুর আহমদ, প্রফেসর কাজী মোতাহার হোসেন, শিল্পী ফিরোজা বেগম, চিত্রশিল্পী কামরুল হাসান, শহীদ মুনীর চৌধুরী, ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, কবি ফররুখ আহমদসহ অনেক গুণীজনকে এ পদক দিয়ে সম্মানিত করেন।

১৯৯১ সালে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সময়েও অনেক গুণীজন ও প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনতা দিবস পদক দিয়ে তাদের অবদানের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও সম্মান দেয়া হয়। এদের মধ্যে রয়েছেন জহির রায়হান, আর্টিস্ট এস এম সুলতান, কবি আহসান হাবীব, আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদসহ অনেকে। প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ও প্রামীণ ব্যাংকসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।

পদকপ্রাপ্ত এসব ব্যক্তির নাম দেখলেই বোঝা যায় প্রকৃত গুণীজনদের সম্মানিত করার ক্ষেত্রে দলীয় পরিচয়কে কখনোই প্রাধান্য দেননি প্রেসিডেন্ট জিয়া কিংবা বেগম খালেদা জিয়া।
কিন্তু বর্তমানে কী হচ্ছে?

দু’টি ক্ষেত্রেই প্রশ্ন উঠেছে। এমন সব ব্যক্তিদের পদক/পুরস্কার দেওয়া হয়েছে যে তাদের সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, প্রথম সারির জাতীয় দৈনিকের সম্পাদক পর্যন্ত চিনেন না। বিশেষ করে সাহিত্যে।

তাই স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে, এই পদক/পুরস্কার দু’টি প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান প্রবর্তন করেছিলেন বলেই কী তাকে এই ভাবে অবনমন করা হচ্ছে?

আওয়ামী লীগ কোন ক্ষেত্রেই দলীয় বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠতে পারে না এটা হয়তো সবারই জানা। কিন্তু তাদের দলীয় গণ্ডিতে কী যোগ্য লোকের এতোই অভাব পড়েছে যে অখ্যাত অজানা লোক যাদের কী সাহিত্য কর্ম আছে তা সাহিত্য- সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত প্রায় কেউই জানেন না?

একুশে পদক ও স্বাধীনতা দিবস পুরস্কারের মতো উঁচুমানের জায়গাটাকেও এভাবে অবনমন সত্যিই মানা যায় না!

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com