ইট-বালুর স্পর্শ নেই ৮ বছর
দফায় দফায় সময় বাড়িয়েও সারা দেশে বাস্তবায়নাধীন ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণকার্যক্রম শেষ করা যাচ্ছে না। নির্ধারিত চার বছরে তো নয়ই, বর্ধিত আরো তিন বছরেও শেষ হলো না উপজেলাপর্যায়ে ১৫৬টি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপন। মাত্র ৪৮টির কাজ শেষ করে চালু করা সম্ভব হয়েছে। এখন আবার এক বছর মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাবনা দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
জুনে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হলেও এখনো পর্যন্ত ২০টি স্টেশন নির্মাণকাজে কোনো ইট-বালুর স্পর্শই লাগেনি। প্রকল্প পরিচালক মো: রিজওয়ানুল হুদা জানান, মামলা ও জমি অধিগ্রহণ নিয়ে বিভিন্ন জটিলতার কারণে চলতি বছর জুনের মধ্যে ২০টির কাজ শুরুই করা যাবে না। জুনে প্রকল্প সমাপ্ত করতে হলে ওই ২০টিকে স্থানান্তর করতে হবে।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষকে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অগ্নিকাণ্ড থেকে জানমাল রক্ষার জন্য ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রতিটি উপজেলায় কমপক্ষে একটি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছেন।
সেই ঘোষণার বাস্তবায়নের জন্য এবং নিরাপদ দেশ গঠনে ১৫৬টি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলায় একটি করে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপনের প্রকল্পটি ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। আর এই প্রকল্পের অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৮৮৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
২০১৬ সালের জুনে শেষ করার কথা ছিল এই প্রকল্পটি; কিন্তু সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনের কাছে প্রকল্পের ব্যয় ৬১.৪৭ শতাংশ বৃদ্ধি এবং প্রকল্পের মেয়াদ চার বছর বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠানো হয়। পরে ৩৬৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা বৃদ্ধি করে এক হাজার ২৫৮ কোটি টাকায় অনুমোদন দেয়া হয়। বর্ধিত ২০২০ সালের জুনে প্রকল্পটি পুরোপুরি সমাপ্ত হবে না। বেশ কিছু কাজ অসমাপ্ত থেকে যাবে।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটির সভায় দেয়া প্রকল্প পরিচালকের তথ্যানুযায়ী, ১৫৬টি স্টেশনের মধ্যে ৪৮টির পূর্ত কাজ সমাপ্ত হয়েছে, যার মধ্যে ৪৭টি চালু করা সম্ভব হয়েছে। একটি চালুর অপেক্ষায় আছে। এ ছাড়া ২৩টি বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। ৬৫টির নির্মাণকাজ চলমান আছে।
তিনটির টেন্ডার কাজ সম্পন্ন হয়েছে; কিন্তু পূর্ত কাজ শুরু করা হয়নি। ছয়টি টেন্ডারযোগ্য। তিনটির জমির মূল্য পরিশোধ করা হয়েছে। বর্তমানে জমি হস্তান্তর প্রক্রিয়ায়। জমি অধিগ্রহণ মামলার জালে দু’টি। জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় আছে পাঁচটি। একটি ১১ মডার্ন প্রকল্পে স্থানান্তর করা হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালকের তথ্যানুযায়ী, ৬৫টির কাজ চলমান আছে। এর মধ্যে ৩৪টির একটির অগ্রগতি সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ, ১১ থেকে ৪০ শতাংশ অগ্রগতিতে আছে ২১টি এবং ১২টির অগ্রগতি ৪১ থেকে ৬০ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। এদের বেশির ভাগের নির্মাণকাজ জুনে শেষ করা সম্ভব হবে না। তবে এক বছর বাড়ালেও ওই ২০টির মধ্যে ৯টির পূর্ত কাজ সম্পন্ন করা যাবে।
শেষ হবে তবে অন্য প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে সেগুলো হলো- পাগলা, কাঁচপুর, নেত্রকোনার খালিয়াজুরী, ভুরুঙ্গামারি, নওগাঁর ধামুইরহাট, সিরাজগঞ্জের চৌহালি, কুমিল্লার দেবিদ্বার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লার তিতাস, রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি, নানিয়ারচর, খাগড়াছড়ির মহালছড়ি, মানিকছড়ি, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, সিলেটের গোয়াইনঘাট, হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ এবং চাঁদপুরের উত্তর মতলব।
এ দিকে পর্যালোচনায় দেখা গেছে যে, গত ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারিত চার বছরে প্রকল্পের অগ্রগতি প্রায় মাত্র ২০ শতাংশ। আর অর্থ ব্যয় হয়েছে ১১ শতাংশ বা ৯৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। প্রথম দফায় মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধির সময় প্রজেক্ট ইভ্যালুশন কমিটি (পিইসি) থেকে প্রশ্ন তুলে বলা হয়, গত চার বছরে প্রকল্পের যে অবস্থা তাতে আগামী চার বছরেও প্রকল্পটির আদৌ কোনো অগ্রগতি দেখা যাবে কি না। এখন দেখা যায় পিইসির আশঙ্কাই সত্য হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৯ সালের অক্টোবরে পিইসি থেকে বলা হয়েছিল- ২০২০ সালের জুনেও কাজ অসমাপ্ত থেকে যাবে।
প্রকল্প পরিচালক মো: রিজওয়ানুল হুদার সাথে গতকাল রাতে প্রকল্পের অগ্রগতির ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, ২০টি বাদে বাকি স্টেশন নির্মাণকাজ আগামী ২০২০ সালের জুনেই শেষ করা সম্ভব হবে। ১৫৬টির মধ্যে বর্তমানে ৫০টি চালু করা হয়েছে। বাকিগুলোর কাজ পর্যায়ক্রমে আগামী জুনের মধ্যে শেষ করা যাবে। তিনি বলেন, আবার কয়েকটি আছে যেগুলোর জমি নিয়ে মামলা রয়েছে।
এসবের কাজ এখন যদি শুরু করা হয় তাহলে প্রকল্প শেষ করতে সময় লাগবে। এখনো হাত দেয়া যায়নি এমন ২০টি রয়েছে। এক বছর সময় বাড়ানোর ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। পিইসি থেকে সময় বাড়ানো হলে বর্ধিত সময়ে ১৪৫ থেকে ১৫০টির মতো সমাপ্ত করা সম্ভব হবে। তবে এখানে ব্যয় বাড়বে না। যা বাড়বে জনবলের বর্ধিত সময়ের বেতনভাতা।
পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্র জানায়, প্রকল্পের কিছু কিছু ক্ষেত্রে জমি নির্বাচন সঠিক হয়নি। কিছু কিছু জায়গায় খুব নিচু জমি নির্বাচন করা হয়েছে। বর্তমানে যা ভরাট করে অবকাঠামো নির্মাণ করতে হলে প্রকল্পের ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাবে। যেগুলোর কাজ হবে না তা অন্য প্রকল্পে স্থানান্তর করা যেতে পারে। আর এই প্রকল্পটির কিছু কাজ অসমাপ্ত রেখেই সমাপ্ত করার প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা যেতে পারে।