শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার বিরুদ্ধে আমেরিকার দ্বারস্থ এরদোগান

0

সিরিয়ায় রাশিয়া-সমর্থিত সরকারি বাহিনীর হামলায় দুই তুর্কি সেনা নিহত হওয়ার জেরে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ক্ষেপণাস্ত্র-বিরোধী ব্যবস্থা প্যাট্রিয়ট ধার চেয়েছে তুরস্ক। তুর্কি সামরিক বাহিনী বলেছে, বৃহস্পতিবার ইদলিব প্রদেশে তুর্কি বাহিনীর ওপর সিরিয়ান সরকারি বাহিনীর বিমান থেকে হামলা করা হয়েছে। এতে করে এক মাসে সিরিয়ান বাহিনীর হাতে নিহত তুর্কি সেনার সংখ্যা ১৫-এ পৌঁছেছে। হামলার প্রতিক্রিয়ায় সিরিয়ান সৈন্যদের ওপর পাল্টা হামলা চালিয়েছে তুরস্ক। দেশটির দাবি এতে, সিরিয়ার ৫০ জনেরও বেশি যোদ্ধা নিহত হয়েছে। তবে সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস বলেছে, প্রকৃত সংখ্যা ১১ এর কাছাকাছি। ইদলিবে দুই পক্ষের মধ্যে লড়াই ক্রমেই বাড়ছে। ফলে আশঙ্কাও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যে, দুই দেশ হয়তো পুরোদমে সামরিক সংঘাতে লিপ্ত হবে।

মার্কিন সংবাদ মাধ্যম ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, সিরিয়ান বা রাশিয়ান বিমান হামলা থেকে সৈন্যদের রক্ষার্থে দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ হাতয়ে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা মোতায়েন করতে চায় তুরস্ক।

বর্তমান লড়াইয়ে তুরস্ককে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন দিলেও, তুরস্ক যে প্যাট্রিয়ট ধারের অনুরোধ করেছে, তাতে হয়তো যুক্তরাষ্ট্র সাড়া না-ও দিতে পারে। কেননা, রাশিয়ার এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা কেনা নিয়ে তুরস্কের সঙ্গে ওয়াশিংটনের অনেক বিবাদ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বারবার তুরস্ককে এস-৪০০ না কেনার অনুরোধ জানিয়েছে। দেশটির যুক্তি ছিল, তুরস্ক যেহেতু ন্যাটোর সদস্য, সেহেতু এস-৪০০ মোতায়েন করা হলে ন্যাটোর অনেক সামরিক গোপন তথ্য রাশিয়ানরা পেয়ে যাবে। তুরস্ক গত বছর ওই সতর্কতা অগ্রাহ্য করলে, যুক্তরাষ্ট্র এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান নির্মাণের আন্তর্জাতিক প্রকল্প থেকে তুরস্ককে বের করে দেয়। এছাড়া তুরস্কের কাছে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ক্রয়ের প্রস্তাবও প্রত্যাহার করে যুক্তরাষ্ট্র।

অপরদিকে তুরস্ক ও সিরিয়ান বাহিনীর মধ্যে লড়াই মস্কোতেও অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যিপ এরদোয়ান তার বিরুদ্ধে এক ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের জন্য পশ্চিমা শক্তিকে দায়ী করলে, দেশটির সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক উষ্ণ হয়েছিল। কিন্তু সিরিয়ায় পরস্পরবিরোধী অবস্থান দুই দেশের সম্পর্কে ফের অস্বস্তি শুরু হয়েছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তুরস্কের বিরুদ্ধে ইসলামি জঙ্গিদের মদত দেয়ার অভিযোগ এনেছে। মন্ত্রণালয় বলেছে, জঙ্গিরা যখন হামলা চালায় তখন তুর্কি সামরিক বাহিনী গোলা নিক্ষেপ করে। এর ফলেই সিরিয়ান সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা ব্যুহ সাময়িকভাবে ভাঙ্গতে সক্ষম হয় সন্ত্রাসীরা। এতে আরও বলা হয়, সিরিয়ান বাহিনীর সমর্থনে রাশিয়ার যুদ্ধবিমান কয়েকটি হামলা চালিয়েছে। তবে রাশিয়ান হামলার লক্ষ্যবস্তু তুর্কি বাহিনী নাকি সিরিয়ান বিদ্রোহীরা ছিল, তা স্পষ্ট নয়।
উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার পরিস্থিতির কারণে পশ্চিমের সঙ্গে ফের সম্পর্ক উন্নত করছে তুরস্ক। কেননা, সিরিয়া নয় শুধু, লিবিয়াতেও তুর্কি বাহিনীর প্রতিপক্ষ রাশিয়া সমর্থিত বাহিনী। তুরস্ক সিরিয়াতে আসাদের বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইরত বিদ্রোহী বাহিনীর সমর্থক। লিবিয়ায় জাতিসংঘ সমর্থিত সরকারকে সমরাস্ত্র ও যোদ্ধা দিয়ে সহায়তা করছে তুরস্ক। অন্যদিকে রাশিয়া বহু বছর ধরে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের মিত্র। অপরদিকে লিবিয়ার জাতিসংঘ সমর্থিত সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইরত যুদ্ধবাজ নেতা খলিফা হাফতারকে সমর্থন দিচ্ছে রাশিয়া।

ইদলিবে সিরিয়ান বাহিনী অগ্রসর হওয়ায় প্রায় ১০ লাখ বেসামরিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তবে তুরস্ক পাল্টা আক্রমণ করলে হয়তো সিরিয়ান বাহিনীর গতি স্লথ হবে। তুরস্ক মনে করছে, আসাদের বাহিনীর অগ্রযাত্রা ঠেকাতে পারলে দেশটির সীমান্তে শরণার্থীদের সংখ্যা কমবে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com