সিনেমার পোস্টারে পরিবর্তনের ছোঁয়া
সিনেমাকে দর্শকদের কাছে আকর্ষণীয় করতে বেশ বড় ভূমিকা রাখে পোস্টার। একটি পোস্টার বলতে গেলে পুরো সিনেমাকে উপস্থাপন করে। যা দেখে প্রথমে দর্শক সিনেমা দেখতে আগ্রহী হয়। একটা সময় রিকশার ডিজাইনেও ব্যবহার করা হতো বাংলা সিনেমার নামসহ নায়ক-নায়িকার মুখ। জানা যায়, পাকিস্তান আমলে পঞ্চাশ এবং ষাটের দশকে চলচ্চিত্রের পোস্টার কিছু হতো লিথো পদ্ধতিতে। আবার প্রযুক্তিগত সুবিধার জন্য কিছু পোস্টার ইউরোপ থেকে ছাপিয়ে আনা হতো। বাংলাদেশের প্রথম ছবি ‘মুখ ও মুখোশ’-এর পোস্টারটি করেন সুভাষ দত্ত। পাকিস্তান পূর্বে সিনেমার পোস্টার ডিজাইনের জন্য দু’টি প্রতিষ্ঠান ‘কামার্ট’ ও ‘এভারসিন পাবলিসিটিং’ বিশেষ অবদান রাখে।
স্বাধীনতার পর এদেশেই ব্যাপকভাবে সিনেমার পোস্টার ছাপা হতে থাকে। জনসাধারণকে সিনেমা হলে এসে সিনেমা দেখার প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য চলচ্চিত্র বিষয়ক প্রচারণার যেসব পন্থা অবলম্বন করা হয়, তার মধ্যে অন্যতম হলো সিনেমার পোস্টার। সিনেমার পোস্টার নিয়ে সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ‘গণ্ডি’ সিনেমার পরিচালক ফাখরুল আরেফিন খান বলেন, একটা সিনেমার আউটলুক হচ্ছে পোস্টার। সিনেমাকে যদি একটা বই হিসেবে বিচার করি তাহলে পোস্টার হলো তার প্রচ্ছদ। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে পোস্টার নিয়ে খুব একটা কাজ করা হয় না। ‘গণ্ডি’তে আমি নিজের কনসেপ্টে চেষ্টা করেছি গতানুগতিক পোস্টারের বাইরে ভিন্নভাবে ছবিটি দর্শকের কাছে তুলে ধরতে। প্রতি বছর ঢালিউডে ৫০ থেকে ৬০টি সিনেমা মুক্তি পেলেও বেশির ভাগ ছবির পোস্টারে পাওয়া যায় না নান্দকিতার ছোঁয়া। বাংলা সিনেমার পোস্টার অনেকদিন ধরেই ডিজাইন করছেন সাজ্জাদুল ইসলাম সায়েম। এ পর্যন্ত ‘মুসাফির’, ‘কিস্তিমাত’, ‘বিজলী’, ‘ঢাকা অ্যাটাক’, ‘জান্নাত’, ‘মিশন এক্সট্রিম’, ‘বিক্ষোভ’, ‘অপারেশন সুন্দরবন’সহ মোট ৪০টির মতো সিনেমায় পোস্টার ডিজাইন করেছেন তিনি। এসব পোস্টার ডিজাইন করে তিনি আলোচনায় আসেন। বর্তমান সময়ের সিনেমা পোস্টার ডিজাইনের বিষয়ে সায়েম বলেন, লম্বা সময় ধরে বেশকিছু সিনেমার পোস্টারে দেখা যায় নায়ক-নায়িকার গলা কেটে পোস্টার ডিজাইন করা হয়েছে। তবে বর্তমান সময়ে অনেকটা পরিবর্তন এসেছে। বেশির ভাগ নির্মাতা কিংবা প্রযোজক চান তার সিনেমার পোস্টারে নান্দনিকতা থাকুক। ভিন্ন ও দর্শকদের জন্য আর্কষণীয় কিছু থাকুক পোস্টারে। বর্তমানে অনেক পরিচালক ভিন্ন স্টাইলের পোস্টার চাইছেন। তবে তারা শুটিং শেষ করে একদম শেষ সময়ে এসে ভাবেন। সিনেমার গল্প, নায়ক-নায়িকা নির্বাচনের সময়ই যদি পোস্টার ডিজাইনারের সঙ্গে কথা বলা হয় তাহলে পোস্টারটি আরো সুন্দর হতে পারে। অনেক পরিবর্তন এসেছে, সামনে আরো সমৃদ্ধ হবে বাংলা সিনেমার পোস্টার ডিজাইন। অন্যদিকে ‘দহন’, ‘প্রেম আমার টু’, ‘বেপরোয়া’, ‘নাকাব’, ‘নবাব’, ‘বসন্ত বিকেল’, ‘নূরজাহান’, ‘বস টু’, ‘পাষাণ’সহ বেশকিছু সিনেমার পোস্টার ডিজাইন করেছেন অর্ণিল হাসান রাব্বি। তিনি বলেন, প্রযোজকরা প্রি-প্রোডাকশন বা পোস্ট প্রোডাকশনে পোস্টারের জন্য আলাদা বাজেট রাখতে পারে। কারণ পোস্টার ডিজাইনও একটি সিনেমার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সেটা বেশির ভাগ সময়ই রাখেন না তারা। এখানো অনেক সিনেমার পোস্টার শুটিং সেটের স্টিল দিয়ে চালিয়ে দিতে চান তারা। এখন ২০২০ সাল। এই সময়ে এসে বিশ্বের সঙ্গে তাল না মিলিয়ে শুটিং স্টিল দিয়ে চালিয়ে দিলে তো সিনেমার পোস্টার ভালো হবে না। এটাই স্বাভাবিক। ভালো পোস্টার ডিজাইন করতে গল্প জেনে, নায়ক-নায়িকার চরিত্র বুঝে আলাদা করে তাদের ফটোসেশন করে বেশকিছু ডিজাইনের পোস্টার করলে অবশ্যই দর্শক সিনেমার পোস্টার পছন্দ করবেন। বর্তমান সময়ে এসে অনেক নির্মাতা এটা বোঝেন এবং সেই অনুযায়ী প্রযোজককে বুঝিয়ে পোস্টারও ডিজাইন করছেন। সামনে এর সংখ্যাটা বাড়বে বলে আশা করছি। বর্তমান সময়ে ঢাকাই সিনেমার বেশির ভাগ নির্মাতা ও প্রযোজকরা আলাদা ধরনের পোস্টার ডিজাইন নিয়ে ভাবছেন ও সেভাবে পোস্টার প্রকাশ করছেন। অনেক সিনেমার পোস্টারে নকলের অভিযোগ পাওয়া গেলেও বর্তমান সময়ের বেশকিছু সিনেমার পোস্টারে নান্দকিতার ছোঁয়া পাওয়া যাচ্ছে।
এ বিষয়ে সকল নির্মাতা ও প্রযোজকের নজর দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন চলচচ্চিত্রবোদ্ধারা। তাদের মতে, একটি সিনেমার পোস্টার কালের সাক্ষী হয়ে থাকে। ভালো পোস্টার একটি সুন্দর চলচ্চিত্রের প্রতিনিধিত্ব করে।