বন্ধ্যাত্বের ৩ কারণ ও চিকিৎসা

0

দুই বছর বা এর বেশি সময় কোনো ধরনের জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ছাড়াই গর্ভধারণে ব্যর্থ হলে তাকে ডাক্তারি ভাষায় বন্ধ্যাত্ব হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। প্রতি ১০০ জন দম্পতির মধ্যে ৮৪ জন প্রথম বছরে এবং ৯২ জন দ্বিতীয় বছরের মধ্যে গর্ভধারণ করতে সমর্থ হন। তাই বলা যায় প্রতি ১০০ জন দম্পতির মধ্যে ৮ জন বন্ধ্যাত্বের শিকার হন।

কখন কনসিভ না হওয়ার কারণ নির্ণয় করা দরকার?
এক বছর বা এর চেয়ে বেশি সময় কোনো ধরনের জন্ম নিয়ন্ত্রণ পধ্বতি ছাড়া গর্ভধারণে ব্যার্থ হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

তবে কারো কারো ক্ষেত্রে কনসিভ না হওয়ার কারণ নির্ণয় করতে দেরি করা যাবে না। যেমন,

# বয়স ৩৬ বা এর বেশি হলে
# রোগীর আগে এমন কোনো হিস্ট্রি থাকলে যেগুলো তার বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে যেমন পেলভিক ইনফেকশন এর হিস্ট্রি অথবা
# এমন কোনো অপারেশন যা তার ফার্টিলিটি কমিয়ে দিতে পারে।

বন্ধ্যাত্বের যত কারণ

বন্ধ্যাত্বের কারণ অনেক। আবার স্বামী-স্ত্রী যেকোনো একজন বা উভয়ের ক্ষেত্রে সমস্যা থাকতে পারে। গর্ভধারণের জন্য দরকার একটি সুস্থ ওভাম (ডিম), সবল বীর্য, নরমাল ইউটেরাস বা জরায়ু এবং নরমাল পেলভিক এ্যানাটমি। এর যেকোনো জায়গায় সমস্যা হলে গর্ভধারণে ব্যর্থতা দেখা দিতে পারে।

প্রাথমিকভাবে বন্ধাত্ব্যের কারণগুলো তিনভাগে ভাগ করা যেতে পারে। এগুলো হচ্ছে এনুভলেশন (ডিম্বাশয় থেকেও ভামবাডিম নিসরণ না হওয়া ), জরায়ু বা ডিম্ব নালীর সমস্যা ও পুরুষ সঙ্গীর সমস্যা।
ওভুলেসন বা ডিম্বস্ফুটন না হওয়ার কিছু কারণ :

• পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম
• হরমনের অস্বাভাবিক মাত্রায় নিঃসরণ : কিছু কিছু হরমোন যেমন প্রলেক্টিন, থাইরয়েড হরমোন অথবা পিটুইটারি FSH, LH হরমোনের অস্বাভাবিক মাত্রায় নিঃসরণ ও ভুলেশন ব্যাহত করে।

• শরীরের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি বা কম থাকা।
• প্রিমেচিউর ওভারিয়ান ফেইলিউর
• অতিরিক্ত মানসিক চাপ।
• অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, ক্যান্সার কিংবা কিডনি রোগেও অভুলেশন ব্যাহত হতে পারে।
• কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি সাময়িক বা পরোপুরিভাবে ওভারিকে অকার্যকর করে দিতে পারে।
• ধূমপান, অথবা অনিয়ন্ত্রিত মদ্যপান।

জরায়ু বা ডিম্বনালীর সমস্যা :
• জারায়ুর টিউমার যেমন এডিনোমায়োসিস,ফাইব্রয়েড বা পলিপ।
• পেলভিক ইনফ্লামেটরি ডিজিজ (পি আই ডি) অথবা যেকোনো ইনফেকশনের কারনে ডিম্বনালী বন্ধ হয়ে ওভাম ও শুক্রাণু নিষিক্তকরনের পথ বন্ধ করে দিতে পারে।
• এন্ডোমেত্রিওসিস বন্ধ্যাত্বের একটি পরিচিত কারণ। এ রোগের লক্ষণ মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, পেটে ব্যথা ইত্যাদি।

• ইনফেকশন বা এন্ডোমেত্রিওসিস জরায়ু এবং এর আশপাশের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক এনাটমি নষ্ট করে বন্ধাত্ব্যের কারণ ঘটায়।

মেল (পুরুষ) ফ্যাক্টর
৩০% ক্ষেত্রে পুরুষ সঙ্গীর সমস্যার কারণে বন্ধ্যাত্ব হতে পারে।

• শুক্রাণু বা বীর্য যথেস্ট গতিশীল না হলে বা অস্বাভাবিক গঠনগত কারণে বন্ধ্যাত্ব হতে পারে।
• কোনো কারণে শুক্রাণু তৈরী ব্যাহত হলে, যেমন জিনগত ত্রুটি, ভেরিকোসেলি, টেস্টিসের টিউমার বা ইনফেকশন অথবা কোণো ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া জনিত কারনে নরমাল শুক্রাণু তৈরী বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে।

পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রেই গর্ভধারণের হার বয়স বাড়ার সাথে কমে যায়। ৩৫ বছরের পর থেকে মেয়েদের ওভুলেশনের হার কমতে থাকে, একইসাথে শুক্রাণুর কার্যকারিতাও বয়সের সাথে সাথে কমে। তাই এই চিকিৎসায় বিলম্ব হলে সাফল্যের হারও কমে যায়।


ডা. নুসরাত জাহান
এসোসিয়েট কনসালটেন্ট (অবস-গাইনি)

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com