১১০ কোটি টাকার বাড়ি কিনেছেন বিচার হয় না, সাজা হয় ২ কোটি টাকার মিথ্যা মামলার, -মির্জা ফখরুল
বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট বার কাউন্সিল মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এ কথা বলেন। ভাষা শহীদ দিবস উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে বিএনপি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার পরিকল্পিতভাবে সকল অর্জনগুলোকে নস্যাৎ করে দিয়ে একটি অকার্যকর ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করছে। আজকে অর্থনীতিকে প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছে। দুর্নীতি এমন জায়গায় পৌছেছে পত্রিকা খুললেই দেখবেন, বেসিক ব্যাংকের এমডি ১১০ কোটি টাকা দিয়ে বাড়ি কিনেছেন। আজকে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার বিচার হয়, সাজা হয় ২ কোটি টাকার একটা মিথ্যা মামলার জন্যে। ১১০ কোটি টাকায় বাড়ি বানিয়েছেন, শত শত কোটি টাকা তিনি লুটপাট করে নিয়েছেন, দুদক তাকে দেখতে পায় না। তাকে এখন পর্যন্ত একটি নোটিশও করা হয়নি। এই হচ্ছে এই দেশের অবস্থা।
বাংলাদেশ সম্পূর্ণরূপে একটা নতজানু রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, সরকার মিয়ানমারে সঙ্গে সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। পানি সমস্যার সমাধান হয় না, সীমান্তে হত্যা হয় তার কোনো বিচার হয় না, একটা কথা বলতে পারে না। আমরা এখান থেকে উঠে দাড়াতে চাই। আমরা অতীতে উঠে দাড়িয়েছি। এই সমস্যা শুধুমাত্র বিএনপির সমস্যা নয়, এটা গোটা জাতির সমস্যা। সমগ্র জাতি আজকে পরাধিন হয়ে যাচ্ছে, সমগ্র জাতি আজকে অর্জনগুলোকে হারাচ্ছে। তাই আমাদের সকলকে উঠে দাঁড়াতে হবে, প্রতিবাদ করতে হবে। সোচ্চার হতে, রাস্তায় নামতে হবে, সমস্ত অর্জনগুলোকে ফিরিয়ে আনতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, মহিলা দল সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা শাহিন, মহিলা দলের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান প্রমুখ।
ফখরুল বলেন, যে চেতনার ভিত্তিতে ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতাযুদ্ধ হয়েছিল সেই চেতনা আজকে দুর্ভাগ্যজনকভাবে ৬৮ বছর পরেও অর্জন করতে পারিনি। সেটাকে ধ্বংস করা হয়েছে। সেই গণতন্ত্রকে, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অত্যান্ত সুপরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে, একটি একদলীয় শাসনব্যবস্থা, একনায়কতন্ত্র ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বিভিন্ন সময় তাদের ন্যায্য দাবি আদায় করার জন্য সংগ্রাম করেছে। তরুণ সমাজ, ছাত্রসমাজ বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্যে। আজকে আমাদের দুর্ভাগ্য ৬৮ বছর পরে গণতন্ত্রের জন্য চিৎকার করতে হয়। দুর্ভাগ্য আমাদের যে নেত্রী গণতন্ত্রের জন্য সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন, তার রাজনৈতিক জীবনের পুরোটাই ত্যাগের মধ্যে দিয়ে নিয়ে গেছেন।
এখনও যে তিনি কারাবরণ করে আছেন সেটাও গণতন্ত্রের জন্যে। তাকে আজকে অসুস্থ অবস্থায় অন্ধকার কারাগারে পড়ে থাকতে হয়েছে। মনে হয় এই ৬৮ বছর সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়ে গেছে। কিন্তু ব্যর্থ হয়নি, আমরা এই ৬৮ বছরে সংগ্রাম করতে করতে আমরা একটা রাষ্ট্র পেয়েছি, আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। সেজন্য আমি বিশ্বাস করি, এদেশের মানুষ যারা লড়াই করে ভাষা প্রতিষ্ঠা করেছে, একটা স্বাধীন পতাকা নিয়ে এসেছে। তারা পরাজিত হবে বলে বিশ্বাস করি না। আমি মনে করি আজকে গণতান্ত্রিক যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, সে আন্দোলন দেশনেত্রীর মুক্তির মধ্যে দিয়ে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনবে।
তিনি বলেন, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সামাজিক অবস্থা কোন জায়গায় নিয়ে গেছে, আজকের পত্রিকা খুললেই দেখবেন, একজন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে ধরতে গিয়ে তার বাড়ি থেকে তার স্ত্রীকে তুলে নিয়ে এসেছে ৪০ বছর বয়স। তুলে নিয়ে তাকে থানার মধ্যে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। এটা আমরা আগে কখনও শুনতে পাইনি। এখন এই সরকারের আমলে দেখছি। এখান নারীদের কোনো সম্মান নেই, মানুষের কোনো সম্মান নেই। জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। চতুর্দিকে ভয়াবহ একটা ত্রাসের পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে।