রাজধানীর বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলামকে (২২) হত্যার ঘটনায় মায়ের আহাজারি কিছুতেই থামছে না। ওই পরিবারের সঙ্গে পুরো গ্রাম এখন শোকে স্তব্ধ। হাসাহাসির মতো তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ছুরিকাঘাতে জাহিদুলের মৃত্যু মানতে পারছেন না তারা। হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে জাহিদুল হত্যার বিচার চেয়ে পোস্ট করেছেন তার সহপাঠী ও বন্ধুরা।
জাহিদুল ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার ৫ নম্বর বিরুনীয়া ইউনিয়নের কাইচান গ্রামের কুয়েতপ্রবাসী জসিম উদ্দিনের ছেলে। তিনি প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দুই নারীকে নিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ হাসাহাসির জেরে শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকালে একদল যুবক তাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেন।
প্রায় নয় বছর ধরে কুয়েতে থাকেন জাহিদুলের বাবা জসিম উদ্দিন। দুই সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যতের আশায় প্রবাসী বাবা বাড়িতে একটি একতলা নতুন বাড়িও করেছেন। বাবা প্রবাসে থাকায় নতুন বাড়িটির সব কাজ একাই করিয়েছেন জাহিদুল। গতকাল রাতে ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে উড়োজাহাজে ওঠেন বাবা জসিম উদ্দিন। আজ সকাল ৭টার দিকে তিনি গ্রামের বাড়িতে এসে পৌঁছান।
বিকালে জাহিদুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির একটি কক্ষে বাবা জসিম উদ্দিন ও আরেকটি কক্ষে মা পারভীন আক্তারকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন স্বজনরা। সন্তানের শোকে পাগলপ্রায় মা আহাজারি করে অচেতন হয়ে পড়েন। জ্ঞান ফেরার পর আবার কান্না শুরু করছেন। পারভীন আক্তার বলেন, ‘হেরারে আমার সামনে আন, আমি জিগাই কী অপরাধ আছিন আমার পুতের। কের লাইগ্যা আমার পুতেরে মারলো হেরা। আমার স্বর্ণের পুতেরে হেরার মাইরালাইলো।’ সন্তানের শোকে পাগলপ্রায় মায়ের চিকিৎসায় বিকালে চিকিৎসক ডাকা হয় বাড়িতে।
বাবা জসিম উদ্দিন বলেন, ‘সম্পূর্ণ জীবনটাই শেষ করে দিলাম সন্তানদের লাগি। সন্তানের জন্য টাকা-পয়সার দিকে তাকাই নাই, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াইতেছি। আমার যত আয়-রোজগার সব দুই সন্তানের পিছনে খরচ করি। আমার দুই সন্তানের মতো মেধাবী এলাকায় খুব কম।’
আহাজারি করতে করতে জসিম বলেন, ‘কেন হত্যা করল আমার ছেলেরে? কী অপরাধ ছিল ছেলের? আমার ছেলেরে কেন নৃশংসভাবে হত্যা করলো? আমারে মাইরালাইতো। আমার সন্তানই যদি না থাকে আমার বাঁইচ্যা থাইকা কী লাভ? আমার এই বাড়ি দিয়া কী করি? তারা দুইটা হাত-পা ভাইঙ্গা দিত। খালি মুখ দিয়া আমায় আব্বা কইয়া ডাক দিতো। আমি আমার সন্তানের আব্বা ডাকটা শুনতাম। যারা আমার সন্তানকে হত্যা করছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। প্রকাশ্যে হত্যাকারীদের ফাঁসি হলে আমার ছেলের আত্মায় শান্তি পাইবো।’
জাহিদুলের বাবা বিরুনীয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের ২০০৩ সালের কমিটিতে সদস্য ছিলেন। জাহিদুল এলাকায় ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় ছিলেন বলে জানান ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে জেলা দক্ষিণ যুবদলের সহপ্রবাসীকল্যাণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, ‘জাহিদুল ঢাকায় পড়ালেখা করলেও এলাকায় এলে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় হয়ে কাজ করতেন। তাদের পুরো পরিবারই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।’ তিনি হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন।