গণতন্ত্রের দাবিতে খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় অন্ধকার কারাগারে বন্দি — মির্জা আলমগীর
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কারাবন্দিত্বের কথা উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা আলমগীর বলেন, ‘আজকে আমাদের দুর্ভাগ্য ৬৮ বছর পরে গণতন্ত্রের জন্য চিৎকার করতে হয়। দুর্ভাগ্য আমাদের যে নেত্রী গণতন্ত্রের জন্য সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন, তার রাজনৈতিক জীবনের পুরোটাই ত্যাগের মধ্যদিয়ে নিয়ে গেছেন। এখনো যে তিনি কারাবরণ করে আছেন সেটাও গণতন্ত্রের জন্য। তাকে আজকে অসুস্থ অবস্থায় অন্ধকার কারাগারে পড়ে থাকতে হয়েছে।’
‘মনে হয়, এই ৬৮ বছর সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়ে গেছে। কিন্তু ব্যর্থ হয়নি, আমরা এই ৬৮ বছরে সংগ্রাম করতে করতে একটা রাষ্ট্র পেয়েছি, আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। সেজন্য আমি বিশ্বাস করি, এ দেশের মানুষ যারা লড়াই করে ভাষা প্রতিষ্ঠা করেছে, একটা স্বাধীন পতাকা নিয়ে এসেছে। তারা পরাজিত হবে বলে বিশ্বাস করি না। আমি মনে করি, আজকে গণতান্ত্রিক যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, সে আন্দোলন দেশনেত্রীর মুক্তির মধ্যে দিয়ে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনবে’, যোগ করেন মির্জা আলমগীর।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বাংলাদেশ সম্পূর্ণরূপে একটা নতজানু রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। মিয়ানমারে সঙ্গে সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। পানি সমস্যার সমাধান হয় না, সীমান্তে হত্যা হয় তার কোনো বিচার হয় না, একটা কথা বলতে পারে না।’
মির্জা আলমগীর আরো বলেন, ‘আমরা এখান থেকে উঠে দাঁড়াতে চাই। আমরা অতীতে উঠে দাঁড়িয়েছি। এই সমস্যা শুধু বিএনপির সমস্যা নয়, এটা গোটা জাতির সমস্যা। সমগ্র জাতি আজকে পরাধীন হয়ে যাচ্ছে, সমগ্র জাতি আজকে অর্জনগুলোকে হারাচ্ছে। তাই আমাদের সবাইকে উঠে দাঁড়াতে হবে, প্রতিবাদ করতে হবে। সোচ্চার হতে, রাস্তায় নামতে হবে, সব অর্জনগুলোকে ফিরিয়ে আনতে হবে।’
বৃহস্পতিবার একুশে ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিএনপির পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় সভাপতি বক্তব্যে দলের মহাসচিব এসব কথা বলেন।
‘একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা হয়েছে’
যে চেতনার ভিত্তিতে ভাষাআন্দোলন ও স্বাধীনতাযুদ্ধ হয়েছিল সেই চেতনা আজকে দুর্ভাগ্যজনকভাবে ৬৮ বছর পরেও অর্জন করতে পারিনি বলে মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি আরো বলেন, ‘সেটাকে ধ্বংস করা হয়েছে। সেই গণতন্ত্রকে, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। একটি একটি একদলীয় শাসনব্যবস্থা, একনায়কতন্ত্র ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ বিভিন্ন সময় তাদের ন্যায্যদাবি আদায় করার জন্য সংগ্রাম করেছে। তরুণ সমাজ, ছাত্রসমাজ বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্যে।’
‘শত কোটি টাকা লুট করলেও নোটিশ নেই’
সরকার পরিকল্পিতভাবে সব অর্জনগুলোকে নস্যাৎ করে দিয়ে বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘আজকে অর্থনীতিকে প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছে।’
রাষ্ট্রায়ত্ত্ব বেসিক ব্যাংকের দুর্নীতির তথ্য তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান (আব্দুল হাই বাচ্চু) এমডি ১১০ কোটি টাকা দিয়ে বাড়ি কিনেছেন। আজকে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার বিচার হয়, সাজা হয় দুই কোটি টাকার একটা মিথ্যা মামলার জন্য। ১১০ কোটি টাকায় বাড়ি বানিয়েছেন, শত শত কোটি টাকা তিনি লুটপাট করে নিয়েছেন, দুদক তাকে দেখতে পায় না। তাকে এখন পর্যন্ত একটি নোটিশও করা হয়নি। এই হচ্ছে এই দেশের অবস্থা।’
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কথা উল্লেখ করে বিএনপিনেতা আরো বলেন, ‘পত্রিকা খুললেই দেখবেন, একজন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে ধরতে গিয়ে তার বাড়ি থেকে তার স্ত্রীকে তুলে নিয়ে এসেছে; ৪০ বছর বয়স। তুলে নিয়ে তাকে থানার মধ্যে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। এটা আমরা আগে কখনো শুনতে পাইনি। এখন এই সরকারের আমলে দেখছি। এখন নারীদের কোনো সম্মান নেই, মানুষের কোনো সম্মান নেই। জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। চতুর্দিকে ভয়াবহ একটা ত্রাসের পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, মহিলা দল সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা শাহিন, মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান প্রমুখ।