অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আ.লীগ নেতা গোলাপের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
মাদারীপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আবদুস সোবহান মিয়ার (গোলাপ) বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে নয়টি ফ্ল্যাট-বাড়ি ক্রয়সহ ৬৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার (১৯ মার্চ) এ তথ্য জানান সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন।
দুদক জানায়, মো. আবদুস সোবহান মিয়া ওরফে গোলাপ সংসদ সদস্য হিসেবে পাবলিক সার্ভেন্ট হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কুইন্স-এ ৯টি ফ্ল্যাট ও বাড়ি যার মূল্যমান বাংলাদেশি টাকায় ৩২ কোটি টাকাসহ স্থাবর সম্পদের মূল্য ৩২ কোটি ৩৪ লাখ ২৭ হাজার ৯৬০ টাকা এবং ৩৭ কোটি ১৬ লাখ ৬৯ হাজার ৬৭ টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে তার মোট ৬৯ কোটি ৭৬ লাখ ৭৯ হাজার ২৯৪ টাকার সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পেয়েছে দুদক। এর মধ্যে বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় ১ কোটি ৪৪ লাখ ৩ হাজার ৬২৯ টাকা। যা বিবেচনায় নিয়ে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের পরিমাণ পাওয়া গেছে ৬৮ কোটি ৩২ লাখ ৭৫ হাজার ৬৬৫ টাকা।
এছাড়া তার নিজ নামে ৫১টি ব্যাংক হিসাবে মোট ৯৭ কোটি ৬৩ লাখ ২৩ হাজার ৩৮৮ টাকার অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেনের প্রমাণ মিলেছে। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারার এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে।
২০২৩ সালের জুনে তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক ‘অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট’বা ওসিসিআরপি তাদের ওয়েবসাইটে করা একটি প্রতিবেদনে আবদুস সোবহান মিয়া (গোলাপ) যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ৪০ লাখ ডলার ব্যয়ে একাধিক বাড়ি কেনার তথ্য প্রকাশিত হয়।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনি ২০১৪ সালে প্রথম নিউইয়র্কে অ্যাপার্টমেন্ট কেনা শুরু করেন। ওই বছর নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস এলাকায় একটি সুউচ্চ ভবনে অ্যাপার্টমেন্ট কেনেন তিনি। পরের পাঁচ বছরে তিনি নিউইয়র্কে একে একে মোট নয়টি প্রপার্টি বা সম্পত্তির (ফ্ল্যাট বা বাড়ি) মালিক হন। এসব সম্পত্তির মূল্য ৪০ লাখ ডলারের বেশি।
২০২৩ সালের ১৩ জানুয়ারি প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আশির দশকে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর মোহাম্মদ আবদুস সোবহান মিয়া কম বেতনের কাজ, যেমন- পিৎজা তৈরি, ওষুধের দোকানে কাজ, লাইসেন্স ছাড়া ট্যাক্সি চালাতেন বলে জানান তার সহকর্মীরা। এসব কাজ থেকে যে আয় হয় তা দিয়ে এভাবে অ্যাপার্টমেন্ট বা বাড়ি কেনা সম্ভব নয়। এসব সম্পত্তি কিনতে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাঠানো হয়েছে কি না— তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ বাংলাদেশ থেকে সম্পত্তি কেনার জন্য বিদেশে অর্থ পাঠানোর সুযোগ নেই।
আবদুস সোবহান মিয়া ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মাদারীপুর-৩ আসন থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন।