৬৮ বছর পর দেখাতে হচ্ছে নাগরিকত্বের প্রমাণ
ব্রিটেনে ৯৫ বছর বয়সি এক ইতালীয় ব্যক্তিকে তার নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে বলা হয়েছে। তার নাম আন্তোনিও ফিনেল্লি। গত ৬৮ বছর ধরে তিনি ব্রিটেনে বসবাস করছেন। ব্রেক্সিটের পরে তাকে ব্রিটেনে থাকতে হলে নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হবে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে বেশ বিপাকে পড়েছেন গত ৩২ বছর ধরে সরকারি পেনশন পাওয়া আন্তোনিও।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে যে পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল, তারই আওতায় আন্তোনিও ইতালি থেকে ব্রিটেনে এসেছিলেন। অভিবাসী শ্রমিক হিসেবে তার আবেদন গৃহীত হয়েছিল। ব্রিটেনে তাকে স্বাগত জানানো হয় অগ্রিম বেতন এবং একটি স্যান্ডউইচ দিয়ে। অথচ, সেই আন্তোনিওর বক্তব্য, ব্রিটেনে থাকার অধিকারের প্রমাণ দেখাতে তাকে ৮০ পাতার ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট জমা দিতে হয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন সেটলমেন্ট স্কিমে আবেদন করার পরে আন্তোনিওকে বলা হয়, তিনি যে ব্রিটেনে টানা ৫ বছর রয়েছেন, তার প্রমাণ দিতে। অথচ ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আন্তোনিওর স্ত্রী, ছেলে মারা গিয়েছেন। তিনি বলছেন, ‘পুরোটাই ভুল।’ তার চিন্তা নাতিনাতনিদের নিয়ে ‘ওরা ভালো থাকবে তো? ওই সময়ে অভিবাসীদের যে শংসাপত্র দেয়া হয়েছিল, তা আমার কাছে রয়েছে। আমি তো আজীবন এখানে কাজ করেছি, পেনশনও নিচ্ছি। আমাকে কেন ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট দিতে হচ্ছে!
আন্তোনিওকে দেখে উদ্বেগ বেড়েছে তার মতো অনেকেরই। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে কাগজ দেখাতে হবে কেন, সেটাই অনেকে ধারণা করতে পারছেন না। ইতালীয়দের পরামর্শদাতা সংস্থা ইনকা সিজিলের এক স্বেচ্ছাসেবী দিমিত্রি স্কারলাতো জানিয়েছেন, আন্তোনিওর মতো এক বৃদ্ধাকে তিনি চেনেন যিনি কাগজ প্রশ্নে প্রায় হৃদরোগে আক্রান্ত হতে বসেছিলেন। দিমিত্রির প্রশ্ন, ‘আন্তোনিও এতগুলো বছর ধরে এ দেশে রইলেন। অথচ এই সিস্টেমের কাছে তার অস্তিত্বই নেই। কেন?’ আন্তোনিও অবশ্য প্রথম নন, যাকে ‘কাগজ’ দেখাতে বলেছে ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র দপ্তর। গত সপ্তাহে ১০১ বছর বয়সি জিওভানি পামেইরোকে বলা হয়েছিল তার অভিভাবকদের নিয়ে যেতে যাতে তারা জিওভানির হয়ে নাগরিকত্বের আবেদন জানাতে পারেন। এই বিভ্রাটের কারণ, সিস্টেমে জিওভানির বয়স দেখানো হচ্ছে ১ বছর।
ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে এগুলি অটোমেটেড চেক। এতে বিপুল সংখ্যক আবেদনকারীকে অতিরিক্ত প্রমাণপত্র দেখাতে হবে, এমনটা নয়। তবে প্রয়োজনে একাধিক তথ্য তারা দেখাতে পারেন যেমন ডাক্তারের নোট, পে-স্লিপ ইত্যাদি।