সুস্থতার জন্য নিয়মিত নির্বিঘ্ন ঘুম
দৈনন্দিন জীবনে আমাদের কতটা সময় ঘুমানো দরকার, তা প্রধানত বয়সের ওপর নির্ভর করে। প্রাপ্তবয়স্কদের দৈনিক সাত-আট ঘণ্টা, নবজাতক ও ছোট শিশুদের প্রতিদিন ১৭ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন।
ঘুমজনিত অসুবিধা : অনিদ্রা খুব সাধারণ একটি সমস্যা। শয়নকক্ষে বেশি শব্দ, গরম বা ঠাণ্ডা থাকলে, বিছানা আরামদায়ক না হলে, অসুস্থ থাকলে, সিগারেট, চা বা কফিজাতীয় পানীয় খেলে, পেটে ক্ষুধা থাকলে এমনকি বেশি খেলে, যথেষ্ট শারীরিক পরিশ্রম না করলে, মানসিক অশান্তি, দুশ্চিন্তা, কর্মক্ষেত্রে অসুবিধা, বিষণ্ণতা প্রভৃতি কারণে অনিদ্রা হতে পারে। ডায়াবেটিস, হাইপোথাইরয়েডিজম, ভাইরাল ইনফেকশন, হেপাটিক এনকেফালোপ্যাথি প্রভৃতি কারণেও মাত্রাতিরিক্ত ঘুম হতে পারে।
স্লিপ অ্যাপ্নিয়া ও নারকোলেপসি ঘুমজনিত আরও দুটি সমস্যা। বয়স্ক, যাদের ওজন বেশি, ধূমপান বা অত্যধিক মদ্যপান করেন তাদের সিøপ অ্যাপ্নিয়া দেখা দিতে পারে। রাতে নাক ডাকলে, থেকে থেকে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গেলে, নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে হঠাৎ জেগে উঠে হাত-পা বা পুরো শরীর কাঁপতে থাকলে, এভাবে জেগে উঠে ফের ঘুমিয়ে পড়লে সিøপ অ্যাপ্নিয়া বলে সন্দেহ করা হয়। অন্যদিকে দিনের বেলায় হঠাৎ হঠাৎ প্রচণ্ড ঘুম পেলে এমনকি অন্য লোকের সঙ্গে থাকাবস্থায়ও এ ধরনের হলে, ঘুমিয়ে পড়ার আগে বা ঘুম থেকে উঠে কথা বলতে বা নড়াচড়া করতে না পারলে, স্বপ্নের মতো ছবি বা উল্টাপাল্টা কথাবার্তা শুনলে, রাতে ঘুমের ঘোরে এমন কিছু করা, যা পরে মনে না থাকলে, হঠাৎ হাসলে বা উত্তেজিত হলে মাংসপেশির ওপর নিয়ন্ত্রণ চলে গেলে নারকোলেপসি হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। ঘুমের মধ্যে হাঁটাও ঘুমজনিত সমস্যা।
নির্বিঘ্ন ঘুমের জন্য করণীয় : প্রতিদিন একই সময় ঘুমাতে যাওয়া, ঘুমানোর আগে কোনো ভারী কাজ না করা, শয়নকক্ষকে শুধু ঘুমানোর কাজেই ব্যবহার করা, ঘর যেন বেশি ঠাণ্ডা বা গরম না থাকে, ঘর বেশি শব্দযুক্ত না হওয়া, আরামদায়ক শয়নকক্ষের জানালায় ভারী পর্দা টানানো, ঘুমানোর ঘরে টিভি না রাখা, ঘুমানোর ঘণ্টা দু-এক আগে ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করে নেওয়া অথবা যোগব্যায়াম করা, রাতের খাবারের পর হাঁটাহাঁটি করা, দুশ্চিন্তার বিষয়গুলোকে দূরে সরিয়ে রাখা, শোয়ার কমপক্ষে এক ঘণ্টা আগে থেকে মোবাইল, ল্যাপটপসহ সব ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে দূরে থাকা, ঘুমানোর আগে চোখের ওপর কোনো আইশেড বা কাপড় দিয়ে নেওয়া, ঘুম না আসতে চাইলে হালকা আলোতে কিছু পড়া ইত্যাদি ঘুমকে নির্বিগ করে তুলতে সাহায্য করে।
সিগারেট, অ্যালকোহল, ইয়াবা, কোকেন, এম্ফিটামিন ইত্যাদি বর্জন করুন, বেশিদিন না ঘুমিয়ে কাটাবেন না, দুপুরের পর আর চা বা কফি খাবেন না, সন্ধ্যাবেলা দুধ ও ক্যাফিনমুক্ত পানীয় পান করুন, বেশি রাতে খাবার না খেয়ে সন্ধ্যার দিকে নৈশভোজ সেরে ফেলুন।
যারা নাইট শিফটে চাকরি করেন অথবা যেসব মা সন্তানকে স্তন্যপান করান, তাদের ক্ষেত্রে ঘুমের সময়ে বেশ পরিবর্তন হয়। তাদের ক্ষেত্রে সহজে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে হলে রোজ সকালে একই সময় উঠে পড়ুন, আগের রাতে আপনি যত রাতেই ঘুমান না কেন। প্রয়োজনে অ্যালার্ম ঘড়ি ব্যবহার করুন। রাত না হলে কিছুতেই শুতে যাবেন না। কয়েক দিন এমনভাবে চললে আপনি আবার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে পারবেন।