স্বার্থবিরোধী চুক্তি-দুর্নীতির দায়ে জ্বালানি অপরাধীদের বিচার দাবি

0

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তি ও দুর্নীতির জন্য দায়ী মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সচিব, উপদেষ্টাসহ জ্বালানি অপরাধীদের বিচার দাবি করেছে তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্ধর রক্ষা জাতীয় কমিটি।

শনিবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্ধর রক্ষা জাতীয় কমিটি আয়োজিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত: বর্তমান পরিস্থিতি ও করনীয় বিষয়ক গোলটেবিল বৈঠক থেকে বক্তারা এ দাবি করেন।

গোলটেবিল বৈঠকে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম, অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা, অধ্যাপক আনিস চৌধুরীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনসমূহমের নেতৃবৃন্দ।

কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, জ্বালানি অপরাধী ও দুর্নীতিবাজ ব্যাক্তি এক নয়। দুর্নীতিবাজ ব্যাক্তি জ্বালানি অপরাধী হতে পারে। কিন্তু জ্বালানি অপরাধী দুর্নীতিবাজ নাও হতে পারে। দুর্নীতি চিহ্নিত করতে হবে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের আইনের আওতায়। জ্বালানি অপরাধীদের বিরুদ্ধে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে মামলা দায়ের করতে হবে।

তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্ধর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, আমরা পরিবর্তন করতে চাই। এই সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে পরিবর্তন সূচনা করা। আমরা এই সরকারে কাছে দাবি জানাই, ভয়াবহ পিএসসি চুক্তি সেটা যেন অবিলম্বে বন্ধ হয়, দায়মুক্তি, রেন্টাল কুইক রেন্টাল বাতিল করা হয়।

তিনি আরও বলেন, জ্বালানি অপরাধীদের বিচার করতে হবে। জাতীয় সক্ষমতার বৃদ্ধি এবং নবায়ন যোগ্য জ্বালানি এই দুইয়ের সংমিশ্রণ আমাদের বিদ্যুতের জন্য সব থেকে ভালো। এই দুইয়ের সংমিশ্রণে যদি আমরা আগাই, তাহলে বিদ্যুতের দামও কমবে, পরিবেশেরও ক্ষতি হবে না। একইসঙ্গে আমাদের জাতীয় আত্মবিশ্বাসও বাড়বে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এন আকাশ তার বক্তব্যে বলেন, প্রত্যেকটা চুক্তির শর্ত এবং বিস্তারিত প্রকাশ করতে হবে। জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে দুইটা প্রধান শর্ত আমরা আগেই দিয়েছি, জাতীয় সম্পদের মালিকানা বিদেশিদের দেয়া যাবে না, সেটা গ্যাসক্ষেত্র হোক কিংবা জমির কোনো মালিকানা হোক। যেখানে আমাদের নিজস্ব সক্ষমতা আছে, সেইখানে আমরা বিদেশিদের ডাকবো না। যেকোনো চুক্তি বা কাজে যথাযথভাবে টেন্ডারিং করতে হবে।

গোলটেবিল বৈঠক থেকে বক্তারা আরও বলেন, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতকে লুটেরামুক্ত করে জাতীয় সক্ষমতা বাড়াতে হবে। সুলভ, স্বনির্ভর ও প্রাণপ্রকৃতিবান্ধব মহাপরিকল্পনা নিতে হবে। জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তি ও দুর্নীতির জন্য দায়ী মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সচিব, উপদেষ্টাসহ জ্বালানি অপরাধীদের বিচার চাই।

জনগণ যেন সঠিক দাম, মাপ ও মানে নিরবিচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ, প্রাথমিক জ্বালানি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি সেবা এবং দুর্নীতি-লুণ্ঠনের শিকার না হয়, সেজন্য বিদ্যুৎ ও প্রাথমিক জ্বালানি সরবরাহের সকল পর্যায়ে স্বচ্ছতা, ন্যায্যতা, সমতা, যৌক্তিকতা ও জবাবদিহিতা তথা জ্বালানি সুবিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বৈঠক থেকে ৬ দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়।

দাবিগুলো হচ্ছে:

০১। জাতীয় স্বার্থ রক্ষার্থে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্য কমাতে স্বল্প মেয়াদে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।

০২। বিগত সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি চুক্তি ও সম্ভাব্য চুক্তি পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে এবং প্রয়োজনে বাতিল করতে হবে।

০৩। স্বৈরাচারী সরকারের সংগঠিত সকল জ্বালানি অপরাধের বিচার করতে হবে।

০৪। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের প্রতিষ্ঠানিক সংস্কার ও বিদ্যুৎখাত পরিকল্পনার প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা তৈরি করতে হবে।

৫। দেশীয় গ্যাস উত্তোলন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে, আমদানিকৃত গ্যাসের উপর নির্ভরতা কমাতে হবে, এবং সাগরে গ্যাস উত্তোলনে বাপেক্সের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।

৬। নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মান করে প্রতিযোগিতামূলক বিডিং নিশ্চিত করতে হবে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com