ভারতকে হাসিতে ঘায়েল করেছেন আকবর

0

‘ক্যাপটেন কুল’- ভারতের সাবেক অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির এই নামে বেশি পরিচিত। তবে এই মুহূর্তে ক্রিকেটে হাজির আরেক ‘ক্যাপটেন কুল’। তিনি বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক আকবর আলী। তাদের হাত ধরেই টাইগার ক্রিকেটে এসেছে প্রথম বিশ্বকাপ ট্রফি। আলোচনায় আকবরের ঠাণ্ডা মাথার নেতৃত্বও। মাত্র ১৭৭ রানে ভারত যুব দলকে বেঁধে ফেলে আকবর বাহিনী।  জবাব দিতে নেমে মাত্র ৮৫ রানে ৫ উইকেট হারায় টাইগার যুবারা। সেখান থেকে অধিনায়ক আকবর দলকে পৌঁছে দেন জয়ের বন্দরে। ৭৭ বলে তার হার না মানা ৪৩ রানের ইনিংসে ইতিহাসে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশও।

পুরোটা সময় ভারতের ক্রিকেটাররা স্লেজিং করে ভীষণ চাপে রেখেছিল টাইগারদের। এমনকি ম্যাচ শেষেও লাল সবুজের পতাকা টেনে নেয় হাত থেকে। এ’জন্য অবশ্য দুই দলের পাঁচ ক্রিকেটার শাস্তি পেয়েছেন। তবে বাংলাদেশের অধিনায়ক প্রতিটি মুহূর্তে ভীষণ চাপেও এক বিন্দু ভেঙে পড়েননি। কিভাবে তিনি ঘায়েল করলেন প্রতিপক্ষকে! আকবর বলেন,- আমি একটা জায়গায় পড়েছিলাম যে ‘স্মাইলিং ইজ দ্য বেস্ট রিভেঞ্জ’। ওরা যতটা স্লেজ করছিলো, চিন্তা করছিলাম ততটা হাসি হয়তো তাদের ওপর অন্যরকম ইফেক্ট করতে পারে। ওইটাই চেষ্টা ছিল।’

শুধু তা নয় মাঠে নিজের আবেগ ও রাগ নিয়ন্ত্রণ করাটাও আকবরের অনন্য গুণ। তিনি বলেন, ‘এমনি দেখুন, রাগ সবারই থাকে। মাঠের মধ্যে চেষ্টা থাকে যতটা কম প্রকাশ করা যায়। আমার টিমমেট যারা আছে তারা হয়তো ভালোভাবে বলতে পারবে। আমি চেষ্টা করি সবার সামনে এটা প্রকাশ না করার। বুধবার ফিরে এসে গোটা দেশের অকৃত্রিম ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছে আকবর আলীর দল। বিসিবি তাদের দিয়েছে অভূতপূর্ব সংবর্ধনা। অবশ্য অধিনায়ক এমনটি আশা করে বিশ্বকাপে খেলেননি বলেই জানান স্পষ্ট করে। তিনি বলেন, ‘দেখুন এভাবে যে আমাদের রিসিভ করা বা আমন্ত্রণ জানানো হবে সেটা জানতাম না। আমরা যখন বিশ্বকাপ খেলতে যাই আমাদের লক্ষ্যই ছিল চ্যাম্পিয়ন হওয়া। এটা এক্সপেক্ট করিনি। আমরা মাঠের মধ্যে জেতার জন্য খেলেছি। ওরাও খেলেছে। জেতার পর আমরা হোটেলে ফিরি, একসঙ্গে দুই দিন ছিলাম আমরা। ওদের সঙ্গে অনেক গল্পগুজব করেছি। ইন্ডিয়ান প্লেয়ার-কোচ সবাই আমাদের এপ্রিশিয়েট করেছে।’
এছাড়াও অনুর্ধ্ব-১৯ দলে আসা ও বিশ্বকাপ  জেতার এই পথটা অধিনায়ক যেভাবে পার করে এসেছেন তা নিয়ে বলেন, ‘দেখুন গতবার তো আমি ছিলাম না। এবারও আমি ছিলাম না। কিন্তু বিকেএসপিতে একটা প্রস্তুতি ম্যাচ হয় অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সঙ্গে। বিকেএসপি থেকে খেলার সুযোগ পাই। সেখানে ভালো খেলি। সেখান থেকে নির্বাচক হান্নান স্যার এবং বাকিরা আমাকে পিক করেন।  এরপর থেকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। যেখানে খেলেছি সেখানেই পারফর্ম করার চেষ্টা করেছি। সেখান থেকেই আস্তে আস্তে উঠে যাওয়া এবং শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ।’

যে শিক্ষা নিয়েছেন সাকিব
শুধু অধিনায়ক আকবরই নয়। দলের প্রতিটি সদস্য চেয়েছিলেন ভারতের দেয়াল ভেঙে বের হতে। নিজের সেই পরিকল্পনা নিয়ে তানজিম হাসান সাকিব বলেন, ‘একটা জিনিস  দেখুন ভারতের বিপক্ষে আমরা আগে দুইবার হেরেছি। একবার ইংল্যান্ডে একবার এশিয়া কাপে। ওই হিসেবে একটা জিনিস শিখতে পেরেছি ওদের বিপক্ষে এগ্রেসিভ ক্রিকেট খেলতে হবে। ওদের যদি ডমিনেট না করি ওরা বোলারদের চড়াও হয়ে খেলতে যাবে। টিম প্ল্যানিং এটাই ছিল ওদের আমরা চড়াও হতে দেব না। প্রথম থেকেই ওদের আমরা ধরে রাখবো। ওই জায়গা থেকেই আমরা শিক্ষা নিয়েছি ওদের ওপর চড়াও হয়ে খেলবো ওদের আমরা ডমিনেট করবো।

শরিফুল বলেন ‘তোমরা এখন চুপ করো’
বিশ্বকাপ জয়ী পেসার শরিফুলকে দেখা গেছে ভীষণ রণমূর্তিতে। মাঠে প্রতিপক্ষ ভারতকে তিনি শুধু বল দিয়েই নয় শরীরী ভাষাতেও করেছেন পরাস্ত। তিনি বলেন, ‘সবকিছু মিলিয়ে ভালো গেছে। টিম ম্যানেজমেন্টের অনেক পার্ট ছিল। তারা আমাদের বলেছে ক্রিকেটটা খেললে এগ্রেসিভ ভাবেই খেলতে হবে। এটাই আমরা মাঠে এপ্লাই করেছি। আমরা জানতাম ওরা ফিল্ডিংয়ে নামলে এমন করবে। আমরা যদি না করি তাও করবে। করলে করবে, পাত্তা দেইনি। আর ওদের আউট করে আমার সেলিব্রেশনের অর্থ ছিল- ওদের দিন শেষ। এখন আমাদের সময়। তোমরা এখন চুপ করো। পকেটে ভরে রেখে দিসি।’

ইমনের কষ্টের লড়াইয়ে আনন্দের গল্প
ওপেন করতে নেমে ২৩ রানের সময় চোট নিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন পারভেজ হোসেন ইমন। তবে দলের বিপদে সেই ব্যথা নিয়েই ক্রিজে ফেরেন । শেষ পর্যন্ত ৪৭ রান করে আউট হন। তবে তার সেই সাহসী ব্যাটিংয়ে জয়ের ভিত পায় দল। ইমন বলেন, ‘কষ্ট হচ্ছিলো। তবুও দলের দিকে তাকিয়ে নিজের সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করেছি। আমার মনে হয় না আমি পুরোটা দিতে পেরেছি। আমার শেষ পর্যন্ত খেলাটা দরকার ছিল। ওই পরিস্থিতিতে এভাবে আউট হওয়াটা ঠিক হয়নি। তারপরও আকবর ভাই পরে মেকআপ করেছে। যার জন্য আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে পেরেছি।’

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com