খালেদা জিয়াকে বন্দী করে রাখা মানবাধিকার লঙ্ঘন নয় কি, প্রশ্ন গণফোরামের
গুরুতর অসুস্থ খালেদা জিয়াকে ‘মানবিক’ কারণে দ্রুত মুক্তির দাবি জানিয়েছে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম। বৃহস্পতিবার এক সমাবেশে গণফোরামের কার্যনির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাইয়িদ এই দাবি জানান।
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া- বয়স্কা মহিলা। উনাকে যেভাবে রাখা হয়েছে এটা কী মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়? মানবিক কারণে তো বিবেচনা করতে পারেন, এ সরকার যদি বিবেচনা করে তাহলে খুবই ভালো হয়। কারণ সামনের দিন আসছে যেদিন গণতন্ত্র পুণরুদ্ধার এবং খালেদা জিয়ার মুক্তি একইসাথে বাংলাদেশে উচ্চারিত হবে-এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। যেটা অতীতে আমরা বাংলাদেশে দেখেছি যেমন করে উচ্চারিত হয়েছিলো বিভিন্ন সময়ে।
ড. কামাল হোসেন সম্পর্কে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার সরকারের তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বলেন, আমাদের লিডার ড. কামাল হোসেন। পার্লামেন্টে কোনো কোনো মন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধে তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আমি তাকে বলি, আপনি ড. কামাল হোসেন সম্পর্কে কি জানেন? আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে শুরু করে উনসত্তরের সেই উত্তাল দিনগুলোতে সংবিধান রচনা করার ক্ষেত্রে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দিন দায়িত্ব দিয়েছিলেন ড. কামাল হোসেনকে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার সাথে সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হয়ে যান। তারপর ড. কামাল হোসেনও গ্রেফতার হন। ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি পাকিস্তানের হরিপুর কারাগারে ছিলেন, তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা হয়েছিলো, তার বিরুদ্ধে চার্জশিট গঠনও হয়েছিলো, তার বিরুদ্ধে কারাদন্ডের সমস্ত ব্যবস্থা পাকিস্তান সরকার নিশ্চিত করেছিলো।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন জানলেন ৫ ডিসেম্বর ড. কামাল হোসেন পাকিস্তানে বন্দি আছেন, তাকে সাথে করে নিয়ে আসলেন, তাকে বিমানে নিয়ে পাকিস্তান থেকে লন্ডন, লন্ডন থেকে ক্যালকাটা হয়ে বাংলাদেশে আসলেন। উনি সংবিধান প্রণয়ন কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। আমিও সেই কমিটির একজন সদস্য ছিলাম। শুধু তাই নয়, আপনারা কী জানেন? বাংলাদেশ যেদিন জাতিসংঘে অন্তর্ভুক্ত হয়, বাংলাদেশ যেদিন জাতিসংঘের স্বীকৃতি লাভ করে সেদিন জাতিসংঘ প্রাঙ্গণে অন্যান্যদেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনকারী ছিলেন ড. কামাল হোসেন। তার সম্বন্ধে কথা যদি বলেন, আপনাদের বিরুদ্ধে কথা বলার নেই। খালি রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রার্থনা করবো- আপনাদের এই মস্তিস্ক বিকৃত খুব তাড়াতাড়ি আল্লাহ যেন হেফাজত করেন। মহান আল্লাহর কাছে বলি- তাদের মাথা যেন ঠিক করে দেন।
দলের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে সরকার যা শুরু করেছে তা জনগণের অর্থের অপচয় মাত্র। আজ যদি বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতেন তিনি নিজেও লজ্জা পেতেন তাদের কর্মকাণ্ড দেখে। তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে দূরে সরে গেছে। এই সরকার যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততদিন দেশ মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন থেকে দূরে সরে যাবে। তাই ওদেরকে হটিয়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে দলমত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নাই।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণফোরামের উদ্যোগে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের দাবিতে এই সমাবেশ হয়। সাংগঠনিক সম্পাদক লতিফুল বারী হামিমের সঞ্চালনায় সমাবেশে গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য জগলুল হায়দার আফ্রিকসহ নেতৃবন্দ বক্তব্য রাখেন।