থামছেই না ধর্ষণ

0

রাজধানীর বাড্ডায় এক কিশোরীকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণ করেছে সন্ত্রাসীরা। অপর এক কিশোরীকে শ্লীলতাহানি করা হয়েছে। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ  ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করা হয়। তাদের এক জনের বয়স ১৩ বছর। অপরজন সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। এ ঘটনায় গণধর্ষণের শিকার কিশোরীর পরিবার থানায় মামলা করেছে। পুলিশ জানায়, শনিবার রাতে বাড্ডার ডিআইটি প্রজেক্ট এলাকায় দুই বান্ধবী বাসা থেকে রাস্তায় বের হলে তিন যুবক মিলে তাদের গতিরোধ করে তুলে নিয়ে যায়। পরে তারা দুই বান্ধবীকে ওই এলাকার একটি পরিত্যক্ত স্থানে নিয়ে যায়।

সেখানে এক বন্ধবীকে দু’জন মিলে ধর্ষণ ও অপর জনকে শ্লীলতাহানি করে। ধর্ষণের শিকার কিশোরীর পরিবার থানায় মামলা করেছে।

মামলার পরপরই একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপরদিকে, বাড্ডার এ ঘটনাই নয়, নতুন বছরের জানুয়ারিতে এমন ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১১৬ টি। এরমধ্যে ২০ জন নারী ও শিশু গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের লিগ্যাল এইড উপ-পরিষদের সংরক্ষিত ১৪টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে এক প্রতিবেদনে এ পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়। রোববার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ধর্ষণের শিকারদের মধ্যে ৬০ জনই ছিল শিশু। যেখানে ২০১৯ সালে প্রতি মাসে গড়ে ৮৪ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই মাসটিতে বিভিন্ন কারণে ৪০ জন নারী ও কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়। যৌতুকের কারণে হত্যা করা হয় তিন জনকে। নির্যাতনের কারণে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন ২১ জন। ১৭ জনের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। ফতোয়ার শিকার হন চার জন। বাল্যবিবাহের শিকার হয় ১০ জন। সাইবার অপরাধের শিকার হয়েছেন পাঁচ জন।

সম্প্রতি রাজধানীর কদমতলীতে বাড়ির ভেতরে ঢুকে দুই কিশোরীকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় রোববার রাতে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত শনিবার রাত ১০টা থেকে রোববার ভোর পাঁচটার মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ধর্ষণের শিকার দুই কিশোরীর বয়স ১৩ ও ১৫ বছর। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়েছে। ধর্ষণের অভিযোগে সোহেল ব্যাপারী (৩৮), রানা ব্যাপারী (৩২) ও আক্তার আলী (৩৮) নামে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশ জানায়, ১৫ বছর বয়সী কিশোরীর মা-বাবা তাদের বাসায় রেখে অন্য কোথাও গিয়েছিলেন। বাসা ফাঁকা থাকায় ওই কিশোরীর বাসায় বেড়াতে যায় ১৩ বছর বয়সী অপর কিশোরী। শনিবার রাতে ওই তিন ধর্ষক কিশোরীর বাসায় ঢুকে দুই কিশোরীকে বেঁধে ধর্ষণ করে। দুই কিশোরীর পরিবার কদমতলী থানায় মামলা করার পর পুলিশ রাতে অভিযান চালিয়ে তিন জনকে গ্রেপ্তার করে।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) প্রধান নির্বাহী শিফা হাফিজের মতে, ধর্ষণ এখন মহামারির মত হয়ে গেছে। মানুষ জানে ধর্ষণ করলে বিচার নেই। যারা ধর্ষণের সঙ্গে সম্পৃক্ত তারা সবসময় কোনো না কোনো শক্তিকে ধারণ করে বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, সেটা হতে পারে অর্থনৈতিক কিংবা রাজনৈতিক শক্তি। এ সকল ক্ষেত্রে যারা রাজনৈতিকভাবে খুব শক্তিশালী তাদের সহজে ধরা যায় না। এবং শাস্তির আওতায় আনা যায় না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে যখন তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয় কিছুদিন পরেই তারা জামিন পেয়ে যায়। জামিন পাওয়ার পরে তারা আরও ভয়ঙ্কর কাজ করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমানের মতে, ধর্ষণ ঠেকাতে বিশেষ অর্গানাইজেশন খোলা বা প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। যেটা বাইরের দেশে প্রচলন রয়েছে। এটা নিয়ন্ত্রণের জন্য আইনি কাঠামো এবং সামাজিক অনুশাসন দুটির কোনোটিই কাজ করছে না। ফলে ধর্ষণ বাড়ছে। উচ্চ আদালত থেকে নারী অধিকার সংরক্ষণের বিষয়ে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কমিটি তৈরি করতে বলা বয়েছে। কিন্তু এর কতটুকু কার্যকর হচ্ছে? ধর্ষণ বা এই জাতীয় অপরাধ নিয়ন্ত্রণের উপায় হচ্ছে কাউন্সিলিং, দ্রুততম সময়ের মধ্যে শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করাসহ একাধীক কার্যকরি পদক্ষেপ।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com