যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে একদিনে শত যুগলের বিয়ে
যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের ওল্ড মেরিলিবোন টাউন হল বিয়ের জন্য সবচেয়ে পরিচিত একটি স্থান। ব্রিটিশদের কাছে জনপ্রিয় এই স্থানটিতে সংগীতজগতের কিংবদন্তি, ফুটবলার থেকে শুরু করে হলিউড তারকারা তাদের সঙ্গীর হাতে হাত রেখে নতুন জীবন শুরু করেন! এখানে একেকটি বিয়ের আয়োজন করতে ৬২১ পাউন্ড থেকে ১ হাজার ২৩০ পাউন্ড খরচ হয়।
গত সপ্তাহে এখানে শত যুগলের বিয়ের আসর বসেছিল। একেকটি বিয়েতে মাত্র ১০০ পাউন্ড খরচ হয়েছে। এখানে বিয়ের কার্যক্রম শুরুর শতবর্ষ উপলক্ষে এমন আসর বসেছিল।
মঙ্গলবার ঐতিহাসিক ওল্ড মেরিলিবোন টাউন হলে গাঁটছড়া বাঁধেন বিবিসির সাংবাদিক থমাস ম্যাকিনটোশ ও পেইজ। ওই দিন সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের স্বামী–স্ত্রী ঘোষণা করা হয়। শতবছরের ঐতিহ্যের ছোঁয়া থাকা এই জায়গায় বিয়ে করতে পেরে দারুণ উচ্ছ্বসিত থমাস বলেন, আমি ভাগ্যবান যে এখানে বিয়ে করা তারকাদের তালিকায় নাম উঠেছে।
থমাস বলেন, নিজেদের রীতিমতো তারকা বলে মনে হচ্ছিল। বিবিসির সহকর্মীরা ও অন্যান্য পত্রিকার অনেক সাংবাদিক সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। আলোকচিত্রীরা ছবি তুলেছেন। আরও ৯৯ দম্পতির পাশাপাশি আমরাও ছবি তুলেছি। এই দিনটির ভাগীদার কয়েকটি জুটির সঙ্গ নিয়ে লন্ডনের একটি বাসে আমরা ছবি তুলেছি।
ওল্ড মেরিলিবোন টাউন হলে মঙ্গলবার গাঁটছড়া বাঁধেন ক্রিস জেমিসন–গ্রিন (৩৩) ও সামান্থা জেমিসন–গ্রিন (৩৫)। দুপুরের দিকে তাদের বিয়ে হয়। তিনি এর আগে একটা সময় পেয়েছিলেন, কিন্তু তখন সেখানকার কর্মীরা দ্বিধায় ছিলেন। কেননা ক্রিস তখনো প্রেমিকা সামান্থাকে বিয়ের প্রস্তাব দেননি।
এরপর ইয়র্কশায়ার মুরসে বেড়াতে গিয়ে সামান্থাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন ক্রিস। সামান্থাও রাজি হন। তখন ক্রিস জানিয়ে দেন, তিনি ইতিমধ্যে বিয়ের জায়গা বুকিং করে ফেলেছেন। কপাল ভালো, সামান্থার এতে আপত্তি ছিল না।
নিউ পোর্ট থেকে আসা সামান্থা বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে তারা সেখানে পৌঁছে যান। একটি লন্ডনের বাসের পেছনে তারা চটজলদি ছবিও তুলে নেন।
তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে ছাতা ছিল। আমি বিয়ের পোশাকের ওপর একটি কোট পরে নিয়েছিলাম। আবহাওয়া যেমনই হোক, আমরা নিজেদের মতো করে আনন্দ করার জন্যই এসেছিলাম।
লিচেস্টারশায়ার থেকে আসা ক্রিস বলেন, ওই দিনের সবচেয়ে ভালো লাগার বিষয় ছিল, বিয়ের অনুষ্ঠান চলার সময়ও আশপাশের মানুষ হাততালি দিচ্ছিলেন।
বিয়ে করতে আসা প্রত্যেক যুগলের সঙ্গে আটজন অতিথি টাউন হলে প্রবেশের সুযোগ পেয়েছেন। বিয়ের পুরো কার্যক্রম সামনে থেকে পর্যবেক্ষণ করতে পেরেছেন।
তাদের সঙ্গে দুটি পোষা প্রাণী নিয়ে হলে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়েছিল। এর একটি মারভিন। স্থানীয়ভাবে তারকা একটি কুকুর সে। সম্প্রতি মেরিলিবোন ভিলেজ সামার ফেইরি ডগ কম্পিটিশন জিতে রীতিমতো তারকা বনে গেছে কুকুরটি।
শত বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া মারভিনের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি টিভিতে মারভিনের লেজ নাড়ানোর ফুটেজ প্রচারিত হয়েছে।
এ বিষয়ে ডন ম্যাককিনলে (২৭) বলেন, মারভিন খুবই ভালো একটি ছেলে (কুকুর)।
আয়োজন সম্পর্কে তার স্ত্রী ডেইজি ম্যাককিনলে (২৭) বলেন, বৃষ্টি থাকা সত্ত্বেও এটা বেশ উঁচু মানের ছিল। আমরা ভিজে গিয়েছিলাম। যতবার বাইরে গিয়েছি, ততবারই বৃষ্টি ঝরেছে। এরপরও এটা দশে দশ ছিল।
হ্যাম্পশায়ারের ফারহ্যাম থেকে এসেছিলেন ড্যানিয়েল ও ড্যানিয়েলে মাসন। তাদের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হতে রাত সাড়ে নয়টা বেজে যায়।
ড্যানিয়েলে (৩৫) বলেন, রাস্তায় বেরিয়ে হেঁটে আসার সময় লোকজন আমাদের অভিনন্দন জানান, প্রশংসা করেন। এমনকি একজন পিৎজা শেফ হাততালি দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
৪৪ বছরের ড্যানিয়েল বলেন, আমি প্রতিটা সেকেন্ড উপভোগ করেছি। আমাদের বিয়েটা একটু ভিন্ন ছিল, এটা আমার বেশ ভালো লেগেছে।
তিনি আরও বলেন, টাউন হলের আয়োজনে আমি মুগ্ধ। তা ছাড়া মজার এই সময়টা বিবিসিতে সম্প্রচার করা হয়েছে। এটা দিনটাকে উপভোগ্য করে তুলেছে।
ওল্ড মেরিলিবোন টাউন হলে মঙ্গলবার বিয়ে করেছেন ফিলিপ্পা ইভানস গ্রিন্ডরড ও হ্যারি গ্রিন্ডরড। তারা অনুষ্ঠানস্থলের পেছনের বড় সড়কে ছবি তোলেন। এরপর টিউবে চেপে ছুটে যান সেন্ট প্যানক্রাস আন্তর্জাতিক স্টেশনে। তাদের গন্তব্য বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে, ‘মিনি’ হানিমুনে।
নববিবাহিত দম্পতির এ যাত্রা স্মরণীয় করে রাখতে ট্রেনের ব্যবস্থাপক তাদের টিকিট প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করে দেন।
হ্যারি বলেন, পেট ভরা থাকা সত্ত্বেও আমাদের তিন কোর্সের খাবার খেতে ও অবিরাম শ্যাম্পেইন পান করতে দেওয়া হয়েছিল।