সন্তান পালনে নারীর সওয়াব

0

শিশু সন্তানের পরিচর্যা ও তাদের সঠিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা পিতামাতার দায়িত্ব। বিশেষত আয়-উপার্জন এবং সাংসারিক তাগিদে পিতার অধিকাংশ সময় বাইরে অবস্থানের কারণে এ ক্ষেত্রে মায়ের ভূমিকা বেশি। হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল। প্রত্যেককে নিজ অধীনস্তদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হতে হবে।… পুরুষ তার পরিবারের ওপর দায়িত্বশীল। স্ত্রী স্বামীর ঘর ও সন্তানের প্রতি দায়িত্বশীল। তোমরা সবাই দায়িত্বশীল। সবাই নিজ অধীনদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৫২০০)

বিখ্যাত ফিকাহবিদ আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) হাদিসটির ব্যাখ্যায় বলেন, পুরুষের দায়িত্ব হলো পরিবারকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করা। তাদের সব ধরনের অধিকার রক্ষা করা। আর স্ত্রীর দায়িত্ব হলো, ঘরের কাজকর্ম সম্পন্ন করা, সন্তান পরিচর্যা করা, সেবক-সেবিকাদের পরিচালনা করা এবং সব বিষয়ে স্বামীর মঙ্গল কামনা করা। (ফাতহুল বারি : ১৩/১১৩)

যথাযথভাবে সন্তান পালনের মাধ্যমে মা অবশ্যই বড় সওয়াবের অধিকারী হবেন। এসব কাজে মা যতক্ষণ ব্যস্ত থাকেন, পুরো সময়ই সওয়াবের অন্তর্ভুক্ত হয়। উত্তম নারীর বর্ণনা দিতে গিয়ে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আরবের নারীদের মধ্যে উত্তম নারী হলো কুরাইশি নারী। তারা সন্তানের প্রতি অধিক স্নেহপরায়ণ এবং স্বামীর সম্পদ রক্ষার প্রতি অধিক যত্নশীল।’ (বুখারি, হাদিস : ৫০৮২)

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আরও এসেছে, ‘এক দরিদ্র নারী তার দুই সন্তান নিয়ে আমার কাছে এলো। আমি তাকে তিনটি খেজুর দিলাম। তখন সে তাদের উভয়কে একটি করে খেজুর দিল। আর একটি খেজুর সে নিজে খাওয়ার জন্য মুখের কাছে নিল। তখন তার দুই মেয়ে তার কাছে আরও চাইল। সে নিজের খেজুরটি দুজনের মাঝে ভাগ করে দিল। তার এ বিষয়টি আমাকে অনেক মুগ্ধ করেছে। আমি রাসুল (সা.)-এর কাছে ঘটনাটি বললে তিনি বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা এর বিনিময়ে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব করে দিয়েছেন। অথবা তিনি বলেছেন, এর বিনিময়ে আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়েছেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৬৩০)

আবু উমামাহ (রা.) বলেন, এক নারী তার দুটি সন্তানসহ মহানবী (সা.)-এর কাছে আসে। সে একটি সন্তানকে কোলে এবং অপরটিকে হাতে ধরে নিয়ে আসে। তখন রাসুল (সা.) বলেন, গর্ভধারিণী, সন্তান জন্মদানকারিণী এবং সন্তানের প্রতি মমতাময়ী তারা যদি স্বামীদের কষ্ট না দেয়, তবে তাদের মধ্যে যারা নামাজি তারা জান্নাতে যাবে। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২০১৩)

সুতরাং সন্তান পরিচর্যা ও প্রতিপালন এবং তাদের সেবার পেছনে নারী যে সময় ও শ্রম দেন, এতে তিনি বড় সওয়াবের অধিকারী হবেন। পাশাপাশি কুরআন তেলাওয়াত, নফল নামাজ, জিকির ও অন্যান্য আমলের প্রতি  আগ্রহ থাকা এবং তা করতে না পারার আক্ষেপ বেশ প্রশংসনীয়। এক্ষেত্রে করণীয় হবে, দৈনন্দিনের ফরজ ওয়াজিব এবং সুন্নাতে মুয়াক্কাদার নামাজ আদায় করা। এরপর সাংসারিক ব্যস্ততার ফাঁকে নফল ইবাদত-বন্দেগির সুযোগ হলে আদায় করা। আর সময়-সুযোগ না পেলে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। বরং সন্তান লালন পালনের কারণে বিপুল সওয়াবের অধিকারী হবেন তিনি।

সন্তানের পরিচর্যা প্রতিপালন এবং ঘর-সংসারের কাজে পুরুষদেরও নারীদের সুযোগমতো সহযোগিতা করা উচিত। বিশেষত নিজের ব্যক্তিগত কাজ নিজেরই করা উচিত। মহানবী (সা.) ঘরে অবস্থানকালে গৃহস্থালির বিভিন্ন কাজকর্ম নিজে করতেন। উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়, রাসুল (সা.) ঘরে কী কাজ করতেন? তিনি বলেন, ‘তিনি নিজ কাপড় সেলাই করতেন, জুতা সেলাই করতেন, ঘরের কাজকর্ম করতেন, যেমন তোমরা ঘরের কাজকর্ম করে থাকো।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৫৩৪১)

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com