৯ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে রেকর্ড ৪২৮ কোটি টাকা জরিমানা
বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ার কারসাজির দায়ে চার ব্যক্তি ও পাঁচ প্রতিষ্ঠানকে রেকর্ড ৪২৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে। বাংলাদেশে পুঁজিবাজারের ইতিহাসে কারসাজির দায়ে এটিই সর্বোচ্চ জরিমানা।
বিএসইসি সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি (বেক্সিমকো) লিমিটেডের ২০২১ সালের আগস্ট এবং ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত শেয়ার কারসাজির তদন্তে যাদের সংশ্লিষ্টতা ও আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ মিলেছে, তাদের জরিমানা করা হয়েছে। তারা সবাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিজের নাম ব্যবহার করে লাভবান হয়েছেন তিনি।
আব্দুর রউফ নামে একজনকে ৩১ কোটি টাকা, মারজানা রহমানকে ৩০ কোটি টাকা, মমতাজুর রহমানকে ৫৮ কোটি টাকা, মোশফিকুর রহমানকে ১২৫ কোটি টাকা, অ্যাপোলো ট্রেডিংকে ১৫ কোটি ১ লাখ টাকা, আর্ট ইন্টারন্যাশনালকে ৭০ কোটি টাকা, ক্রিসেন্ট লিমিটেডকে ৭৩ কোটি টাকা, জুপিটার বিজনেস লিমিটেডকে সাড়ে ২২ কোটি টাকা এবং ট্রেডনেক্সট ইন্টারন্যাশনালকে ৪ কোটি ১ লাখ টাকা জরিমানা করেছে।
কমিশনের তদন্তে দেখা গেছে, ২০২১ সালের ২৮ জুলাই থেকে ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়কালে মারাজানা রহমান, মোশফিকুর রহমান, মমতাজুর রহমান, আব্দুর রউফ, জুপিটার বিজনেস, অ্যাপোলো ট্রেডিং, আর্ট ইন্টারন্যাশনাল ও ক্রিসেন্ট লিমিটেড প্রায় ১৩ কোটি ৯৪ লাখ শেয়ার কিনেছিলেন। উল্লেখিত সময়ের মধ্যে ৪ কোটি ৪১ লাখ শেয়ার বিক্রি করে তারা ১৫৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা মুনাফা নগদায়ন করেছেন। অবিক্রীত শেয়ারে তখনও ৯৮৫ কোটি টাকা মুনাফা ছিল। ওই সময় বেক্সিমকোর শেয়ারদর ৯০ টাকা থেকে ১২০ টাকায় উঠেছিল।
কমিশনের তদন্তে দেখা গেছে, ২০২২ সালের ২ জানুয়ারি থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত সময়কালেও বেক্সিমকোর শেয়ার কেনাবেচায় ট্রেডনেক্সট ইন্টারন্যাশনাল নামের প্রতিষ্ঠানসহ উল্লিখিত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান আইন লঙ্ঘন ও বেআইনিভাবে দর বাড়িয়ে মুনাফা করেছে। ওই সময় শেয়ারটির দর ১৪৮ থেকে ১৫২ টাকায় উঠলে তারা নিজেদের অ্যাকাউন্টে ৩১৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা মুনাফা নগদায়ন করে। এ সময় নতুন করে ৮ কোটি ২০ লাখ শেয়ার কেনার বিপরীতে ১০ কোটি ২১ লাখ শেয়ার বিক্রি করে তারা এই মুনাফা করে। তখন পর্যন্ত অবিক্রীত শেয়ারে তাদের মুনাফা ছিল ৫২৬ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এসব কাজে অগ্রণী ব্যাংকের মালিকানাধীন মার্চেন্ট ব্যাংক অগ্রণী ইক্যুয়িটি অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ও বেক্সিমকো গ্রুপের মালিকানাধীন ব্রোকারেজ হাউস বেক্সিমকো সিকিউরিটিজকে ব্যবহার করা হয়েছে। বিপুল অঙ্কের শেয়ার কেনাবেচায় অগ্রণী ব্যাংকের মার্চেন্ট ব্যাংক থেকেও তারা বেআইনিভাবে মার্জিন নিয়েছে।
গত চার বছরে পুঁজিবাজারে যেসব কোম্পানির শেয়ার নিয়ে বড় ধরনের কারসাজি হয়েছে, তার শীর্ষে ছিল বেক্সিমকো লিমিটেড। ২০২০ সালের জুলাই মাসের শেষেও সংস্থাটির শেয়ার ১৩ টাকা দরে কেনাবেচা হয়। ওই বছরের ১৪ নভেম্বর শেয়ারটির দর সাড়ে ১৪ গুণ বেড়ে ১৮৭ টাকা ৯০ পয়সায় উঠেছিল। অস্বাভাবিক এই দরবৃদ্ধির নেপথ্যে সালমান এফ রহমানের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ছিল ওপেন সিক্রেট।
একটি সূত্র জানিয়েছে, বেক্সিমকোর শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সালমান এফ রহমান ২ হাজার কোটি টাকারও বেশি মুনাফা করেছেন।
আইপিওর অর্থ ব্যবহার নিয়ে অনুসন্ধান
এদিকে ৯ কোম্পানির আইপিও ও রিপিট আইপিওর অর্থ ব্যবহার নিয়ে ব্যাপক অভিযোগের প্রেক্ষাপটে বিএসইসি কোম্পানিগুলোর আইপিও প্রক্রিয়ায় সংগৃহীত অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার করেছে কিনা, তা যাচাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গতকালের কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যেসব কোম্পানির আইপিওর অর্থ ব্যবহার নিয়ে অনুসন্ধান ও সরেজমিন পরিদর্শন হবে, সেগুলো হলো– বেস্ট হোল্ডিংস, ইনডেক্স এগ্রো, জেএমআই হসপিটাল রিকুইজিট, ল্যুব-রেফ বাংলাদেশ, নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস, রিং শাইন টেক্সটাইল, শিকদার ইন্স্যুরেন্স, সিলভা ফার্মাসিউটিক্যালস এবং বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের রিপিট আইপিও।