টেস্ট দলের পারফরম্যান্স নিয়ে কাল জরুরি বৈঠক
বিদেশের মাটিতে টানা ৫ ম্যাচে ইনিংস ব্যবধানে হার। এবং প্রতিটি বড় লজ্জার। দেশের মাটিতে আফগানিস্তানের মতো দলের কাছেও বাজেভাবে হার। বাংলাদেশের টেস্ট দল আছে ক্রান্তিলগ্নে। এই দলের ভবিষ্যৎ কী?
বুঝে পাচ্ছেন না বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু। পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে সোয়া তিনদিনের কম সময়ে ইনিংস ব্যবধানে হেরে দলের একাংশ গতকাল ফিরেছে দেশে। আরেক অংশ ফিরবে আজ। আর চলমান সংকট থেকে উত্তরণের পথ খুঁজতে আগামীকাল বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট বসতে যাচ্ছে জরুরি বৈঠকে। ‘টিম ম্যানেজমেন্ট আসার পরে বৃহস্পতিবার আমাদের মিটিং আছে এটা নিয়ে।’ গতকাল দুপুরে মিরপুরে বিসিবির অফিসে হতাশ নান্নু জানালেন, ‘আমরা বসব এটা নিয়ে। দলের জন্য যেটা ভালো সেটা করা হবে।’
সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে মাহমুদউল্লাহ দিতেন বাংলাদেশের টেস্ট দলের নেতৃত্ব। তখন ভালো পারফর্ম করেছেন। কিন্তু সাকিব নিষিদ্ধ হওয়ার পর মুমিনুল হকের ওপর বর্তায় টেস্ট দলের নেতৃত্ব। তারপর থেকে দেখা যাচ্ছে মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে খরা। শুধু তাই নয়, তার ব্যাটিংয়ের ধরনেও বড় রকমের সমস্যা দেখা যাচ্ছে। তাকে নিয়েও নান্নু পড়ছেন প্রশ্নের মুখে।
অন্যদিকে বিসিবি প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান আগের দিন হুঙ্কার দিয়েছেন। বিশ্বকাপের আগে থেকে জাতীয় দলে হস্তক্ষেপ কমিয়ে ছিলেন। দলের অধঃপতন ও নি¤œগতির পারফরম্যান্স দেখে ‘কঠিন ব্যবস্থা’ নেওয়া হতে পারেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। সঙ্গে এও বলেছেন, আবার হস্তক্ষেপ শুরু করা ছাড়া উপায় দেখছেন না। দলের লাগাতার বাজে পারফরম্যান্সের কারণের ব্যাখ্য চাইবেন দায়িত্বশীলদের কাছে।
এমন একটা পরিস্থিতিতে নির্বাচক কমিটির প্রধান নান্নুকেও হতাশা গ্রাস করে। বিশেষ করে বিদেশের মাটিতে একেবারে দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে পড়া তাকে বেশি ভাবাচ্ছে, ‘এটা একটা চিন্তার কারণ। বিদেশে আমরা টেস্ট ভালো খেলি না অনেক দিন থেকে। আপনি কীভাবে লাল বলের ক্রিকেট খেলার পরিকল্পনা করছেন, কীভাবে এগুচ্ছেন এটা কিন্তু বড় বিষয়।’ প্রধান নির্বাচক বলছিলেন, ‘পাঁচ দিন খেলার মনমানসিকতা না থাকলে এখান থেকে ফিরে আসা কিন্তু কঠিন। দেশে ভালো খেলছি, বিদেশে হচ্ছে না দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেট। এটা চিন্তার বিষয়। ম্যানেজমেন্ট ফিরলে বসে ঠিক করতে হবে করণীয়।’
তার কথায় ক্রিকেটারদের মানসিকতাও প্রশ্নবিদ্ধ। বিসিবির কোনো দায়ও দেখছেন না। খেলোয়াড়দের ম্যাচ ফি, বেতন সব বেড়েছে। অন্যান্য সুযোগ সুবিধার কোনো ঘাটতি নেই। তাহলে?
‘পারফরম্যান্সের দায় পুরোপুরি খেলোয়াড়দের ওপর। সুযোগ সুবিধা যতটুকু দরকার দেওয়া হচ্ছে। লঙ্গার ভার্সনে কোনো ঘাটতি নেই। দেশে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলছি। যাওয়ার আগেই বিসিএলে ম্যাচ খেলে গেছে এবং সবাই পারফর্ম করে গেছে।’ নান্নু নিজেই অনেক প্রশ্নের জবাব খোঁজার মতো করে বলছিলেন, ‘এমন না যে চারদিনের ম্যাচ খেলছেন না, ওখানে গিয়ে পাঁচদিন খেলছেন। পারফরম্যান্স কিন্তু সবার আগে। আমাদের অনেক খেলোয়াড়ই কিন্তু অনেক ম্যাচ খেলে ফেলেছে, সবাই কিন্তু পরিপক্ব। তাদের কাছ থেকে ভালো পারফরম্যান্স চাই।’
সমস্যা হলো চাওয়ার সঙ্গে পাওয়া মিলছে না মোটে। সামনে জিম্বাবুয়ে আসছে। তাদের সঙ্গে ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকায় একমাত্র টেস্ট। ওখানে কী না কী হয় তাই নিয়ে শঙ্কা অনেকের। তবে এই ম্যাচ নিয়ে আত্মবিশ্বাস প্রকাশ পাচ্ছে নান্নুর কথায়, ‘ক্রিকেটে সমানভাবে থাকা কিন্তু কঠিন। ওঠানামা আছে। সব সময় একই মানে খেলবেন- এমন নয়। ছয়মাস আগে থেকে আমরা খারাপ খেলছি। আমার বিশ্বাস দেশের মাঠে আমরা ঘুরে দাঁড়াব।’
পাকিস্তানের টেস্টে ব্যর্থতার পর মাহমুদউল্লাহর মতো সিনিয়র কিংবা ব্যর্থ খেলোয়াড়দের বাদ দেওয়ার কথা কি মাথায় আছে? আপাতত সরাসরি জবাব নেই প্রধান নির্বাচকের কাছে, ‘চাইলে তো সব খেলোয়াড় বদলে দিতে পারবেন না। খেলোয়াড়দের দরকার আছে। একটা দলের থেকে ফল পাচ্ছেন না। এদের অবশ্যই নার্সিং করতে হবে, নার্সিং করে আগামীর জন্য ফল বের করতে হবে।’