তোমাদের সালাম
বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাস বদলে দিয়েছে আকবর আলীর দল। এই প্রথম কোনো আইসিসি টুর্নামেন্টে শুধু ফাইনাল খেলেনি, জিতে নিয়েছে শিরোপাও। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ভারতকে হারিয়ে বাংলাদেশের যুবারা লাগিয়েছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের ব্যাজ। হৃদয় কাঁপানো বীরেরা দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দেশে ফিরছে আজ। কথা ছিল সকালেই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পা রাখবে তারা। অপেক্ষার প্রহর একটু দীর্ঘ করে সকালে নয়, বিকালে বীরের বেশে বিশ্বজয়ের মুকুট নিয়ে দেশে ফিরবে ইমন-পারভেজরা। আকবর আলী, মাহমুদুল হাসান জয়, তৌহিদ হৃদয়দের বিলম্বে আসার বিষটি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিজাম উদ্দিন চৌধুরী সুজন। গতকাল সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন যে অনূর্ধ্ব-১৯ দল আগামীকাল সকালে আসার কথা ছিল, এটা পরিবর্তন হয়ে এখন বিকাল ৫টার দিকে পৌঁছাবে বাংলাদেশে।’
শুধু বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড নয়, আকবরদের প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় দেশের কোটি কোটি ক্রিকেটপ্রেমী।
রাস্তার ধারে চায়ের দোকান থেকে শুরু করে দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে চলছে টাইগার যুবাদের বন্দনা। বলার অপেক্ষা রাখে না বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার পর আমজনতার প্রাণঢালা অভিনন্দই পাবেন আকবররা। বিসিবিও তাদের বরণ করতে রাখছে ‘ছোট্ট আয়োজন’। স্বল্প সময়ে বিমানবন্দরে তাদের বরণ করে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে নিয়ে আসা হবে। সেখানে অনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পর তাদের বিদায় দেয়া হবে বাড়ির পথে। আয়োজন নিয়ে বিসিবির সিইও সুজন বলেন, ‘ওভাবেই পরিকল্পনা করা হচ্ছে যেহেতু অনেকদিন ধরে ছেলেরা দেশের বাইরে ছিল। সবকিছু বিবেচনা করে আমরা যতটুকু সম্ভব স্বল্প সময়ের মধ্যে কিছু অ্যারেঞ্জমেন্ট রাখছি। বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানিয়ে বোর্ডে নিয়ে আসা এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের পরিবারের কাছে পাঠানো হবে।’
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে টাইগাররা যখন একের পর এক ম্যাচ জিতে যাচ্ছিল তখন ধীরে ধীরে আবেগে কাঁপতে শুরু করে দেশ। জুনিয়র টাইগারদের সাফল্য দেখতে বাসে, রিকশা, হাট-বজার-সুপার মার্কেট, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদালয় সরব হয়ে উঠে ব্যাট-বলের লড়াইয়ে। ফাইনালের প্রতিটি মুহূর্ত ক্রিকেট-পাগল এই জাতি উপভোগ করেছে চরম উত্তেজনা নিয়ে। তাদের হতাশ করেনি শরিফুল ইসলাম, তানজিম সাকিব, তানজিদ হাসান তামিমরা। ভারতকে গুঁড়িয়ে দেয় মাত্র ১৭৭ রানে। জবাব দিতে নেমে ভালো শুরুর পরও দ্রুত কয়েকটি উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়েছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে অধিনায়ক আকবর ঠান্ডা মাথায় দলকে পৌঁছে দেন জয়ের বন্দরে।
অধিনায়ক আকবরের ৪৩ রানের হার না মানা এই ইনিংস এখন বাংলাদেশের জন্য ইতিহাস। আর তরুণদের লড়াই প্রতিটি ক্রিকেটপ্রেমীর আলোচনায়। বিশেষ করে বোনের মৃত্যুশোক মনে চেপে আকরের লড়াইয়ের চর্চা সবার মুখে মুখে। কেউ কেউ তো তাকে ‘আকবর দ্য গ্রেট’ বলেই ডাকতে শুরু করেছে। টাইগার যুবাদের কথায় আঞ্চলিকাতার টান নিয়েও খুনসুটি চলেছে সাধারণ মানুষের মাঝে। কেউ বলছে আকবর আমার রংপুরের ছেলে, কেউবা বলছে জয় আমার চাঁদপুরে ছেলে। নিজ নিজ অঞ্চলের ১১ কৃতি সন্তানদের নিয়ে গর্বিত সবাই। তাদের বন্দনা দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও। ভারতকে হারানোয় পাকিস্তানের ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে জয়গা করে নিয়েছে টাইগার যুবারা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তারা অভিনন্দন জানিয়েছেন আকবরদের।
আজ বিমানবন্দর থেকে ফুলেল সংবর্ধনা দিয়ে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের বিসিবির কার্যালয়ে নিয়ে আসা হবে যুব টাইগারদের। সেখানে আরেক দফা সংবর্ধনা পাবেন তারা। মুখোমুখি হবেন সংবাদ মাধ্যমেরও। সিইও নিজাম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘বিমানবন্দর থেকে তাদের বিসিবিতে আনা হবে এবং এখানে কিছু আয়োজন রাখা হয়েছে। এরপর তারা পরিবারের কাছে চলে যাবে।
জানা গেছে আজ বিকেলে টাইগার ক্রিকেটের বেশ কয়েকটি সমর্থক গোষ্ঠী ফুল নিয়ে হাজির হবে বিমানবন্দরে। সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ঘোষণা দিয়েছেন তারা বিমানন্দর এলাকায় অবস্থান করবেন। দেশে ফিরে আকবররা যে শুধু শুভেচ্ছা, ভালোবাসাই পাবেন তা নয়। অপেক্ষা করছে পুরস্কারও। যদিও সরকার ও বিসিবির পক্ষ থেকে তা এখনো ঘোষণা হয়নি।
বাংলাদেশের এই যুব দল নিয়ে বিসিবির কাছে দেশের সাধারণ থেকে ক্রিকেট বোদ্ধাদের দাবি ভিন্ন। কোনোভাবেই যেন আকবররা হারিয়ে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে বিসিবি সভাপতির প্রতি আহ্বান তাদের। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানও জানিয়েছেন যুবাদের সামনে এগিয়ে নিতে কার্যকরি পদক্ষেপ ও সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা নিচ্ছেন তারা। তবে সবার আগে তাদের অভিনন্দন আর শুভেচ্ছা জানানোর পালা।