সারাদেশে বৈষম্যবিরোধী বিক্ষোভে শিক্ষার্থীদের ঢল
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা বিক্ষোভ সমাবেশে গতকাল শনিবার সারাদেশেই বিপুল উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রাস্তায় নেমে আসেন অভিভাবক, শিক্ষক, আইনজীবীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। তারা আন্দোলনকারীদের ঢাল হিসেবে বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মহাসড়কে অবস্থান করেন। এ সময় সরকারের পদত্যাগ চেয়ে নানা স্লোগান দেওয়া হয়।
রংপুরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেন শিক্ষক, আইনজীবী, অভিভাবকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। নগরীর বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি করা হলেও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রেস ক্লাবের সামনে জড়ো হন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানান অন্যান্য পেশাজীবীরা। পরে একটি মিছিল নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে রংপুর টাউন হলের সামনে সমাবেশ করে। এ সময় এক দফার জন্য শপথ নিয়ে রোববার থেকে অসহযোগ আন্দোলনে সবাইকে থাকার আহ্বান জানান আন্দোলনকারীরা।
যশোর শহরের পালবাড়ি মোড়ে ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সকালে সমবেত হন। এক পর্যায়ে সড়কে হাজারো মানুষের ঢল নামে। পরে বৃষ্টির মধ্যে বিশাল মিছিল ধর্মতলা, খোলাডাঙ্গা হয়ে চাঁচড়া তিন রাস্তার মোড়ে অবস্থান নেয়।
নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট শিক্ষার্থীরা দখলে রাখায় চার ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। পুলিশ বিক্ষোভ মিছিলে কোনো বাধা দেয়নি। বিকেল ৫টার পর শিক্ষার্থীরা সরে গেলে ধীরে ধীরে যান চলাচল শুরু হয়।
পতাকা গায়ে জড়িয়ে সড়কে মিনুর স্ত্রী
রাজশাহী নগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টের আরডিএ মার্কেটের সামনে সকালে গায়ে জাতীয় পতাকা জড়িয়ে কয়েক শিক্ষার্থীকে নিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনুর স্ত্রী অধ্যক্ষ সালমা শাহাদাৎ।
এ সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী তাঁকে সরে যেতে বললে তিনি আরডিএ মার্কেটের সামনে কিছুক্ষণ অবস্থান করে কর্মসূচি শেষ করেন।
সালমা শাহাদাৎ বলেন, ‘সারাদেশে আড়াই শতাধিক কোমলমতি শিক্ষার্থীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আমারও সন্তান রয়েছে। মা ও অভিভাবক হিসেবে বিবেকের তাড়নায় রাস্তায় দাঁড়িয়েছি। আর যেন এভাবে কোনো মায়ের বুখ খালি না হয়।’
মুন্সীগঞ্জে আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে কমিউনিস্ট পার্টি, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ও প্রগতি লেখক সংঘ সমাবেশ করেছে। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শহরের সুপারমার্কেট এলাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সড়কে এ কর্মসূচি হয়।
খুলনায় মাঠে নামেনি শিক্ষার্থী, ছিল না পুলিশও
খুলনায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার পর গতকাল সকাল থেকে ছিল থমথমে অবস্থা। মানুষের আনাগোনা কম। খোলেনি অনেক দোকানপাট। মানুষের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছিল। এদিন শিক্ষার্থীরা মাঠে নামেননি। দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত নগরী ছিল পুলিশশূন্য। গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোর কোথাও ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের দেখা যায়নি। বিকেল থেকে নগরীর কয়েকটি পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন করা হলেও তারা ছিলেন নিরাপদ দূরত্বে।
এ ব্যাপারে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার সরদার রকিবুল ইসলাম জানান, দুপুরের দিকে পুলিশ লাইন্সে পুলিশ কমিশনার বিভিন্ন বিষয়ে ব্রিফ করেন। এজন্য পুলিশ মোতায়েনে কিছুটা দেরি হয়। পরে গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পুলিশ দায়িত্ব পালন করেছে।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আন্দোলনকারীরা শুক্রবারের সংঘর্ষের জন্য পুলিশকে দায়ী করেছেন। সংঘর্ষে গুরুতর ২০ জনসহ মোট ৮৬ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে দাবি তাদের।
তবে নগরীর দৌলতপুরে বি এল কলেজের সামনে সাংস্কৃতিককর্মী এবং শিববাড়ি মোড়ে মানববন্ধন ও মৌন মিছিল করেন বেসরকারি নর্দান ইউনিভার্সিটি বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির শিক্ষকরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ
গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি ও ৯ দফা দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক (ডেইরি গেট) সংলগ্ন মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা। এ সময় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খুলে দেওয়ার দাবি জানানো হয়। এ ছাড়া শিক্ষক-শিক্ষার্থীর ওপর হামলায় মদদ দেওয়া ও তাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে গতকাল অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন নিপীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত শিক্ষকরা। তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের পদত্যাগ দাবি করেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিতে প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। গতকাল সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এ-সংক্রান্ত একটি বিবৃতি দেওয়া হয়। এ বিষয়ে আন্দোলনে রাবির সমন্বয়ক মাহায়ের ইসলাম বলেন, ‘সবার মতামত নিয়ে প্রশাসনকে হল খুলে দিতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছি। দাবি না মানলে হল দখল করতে আমরা বাধ্য হবো।’