অনিয়মের তথ্য বিভিন্নভাবে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে: আহসান এইচ মনসুর

0

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ঋণ আদায় না করে ঋণের সুদকে আয় দে‌খিয়ে মুনাফা দেখাচ্ছে ব্যাংকগুলো। সেই মুনাফা থেকে লভ্যাংশ দিচ্ছে। এমনকি সরকারকে ট্যাক্সও দিচ্ছে। আসলে কো‌নও আয়ই হয়‌নি, আমানতের অর্থ লুটে খাচ্ছে ব্যাংকগুলো। ব্যাংকগুলো ঘরের থালাবা‌টি বেচে কোরমা-পোলাও খাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এভাবে আর কতদিন চলতে পারবে? একদিন আমানত শেষ হবে, গ্রাহকের অর্থ আর ফেরত দিতে পারবে না।’

শনিবার (১৩ জুলাই) রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) ‘বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতে দুরবস্থার কারণ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

আর্থিক খা‌তকে ‘ক্লিনিংয়ের’ (পরিষ্কার) জন্য সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংককে উদ্যোগ নিতে হ‌বে উল্লেখ করে ড. মনসুর বলেন, ‘ব্যাংক খা‌তের সমস্যাগু‌লো সমাধান না ক‌রে জিইয়ে রাখা হচ্ছে। এর মাধ্যমে ঘ‌রের দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা ঝাড়ু দি‌য়ে কা‌র্পেটের নি‌চে রে‌খে দি‌চ্ছে। এতে ক‌রে আস‌লে দুর্গন্ধ দূর হ‌য় না, কোনও না কোনও একদিন আবারও দুর্গন্ধ ছড়া‌বে।’

ইআরএফ সম্পাদক আবুল কাশেমের পরিচালনায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইআরএফ সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা। অনুষ্ঠানে ব্যাংকিং খাতের ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দৈনিক সমকালের বিশেষ প্রতিবেদক ওবায়দুল্লাহ রনি এবং প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সানাউল্লাহ সাকিব।

আহসান এইচ মনসুর বলেন,‘ শুধু রফতানির তথ্য লুকোনো হয় কি? সবচেয়ে বেশি তথ‌্য লুকোনো হ‌চ্ছে আর্থিক খা‌তে। অথচ আর্থিক খাতেই স‌ঠিক ত‌থ্য সব‌চে‌য়ে বে‌শি জরু‌রি।’

এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘বাংলা‌দেশ ব‌্যাংকের তথ্যে খেলাপি ঋণ দেখানো হচ্ছে এখন ১১ শতাংশ। বাস্ত‌বে খেলা‌পি বা মন্দ ঋণ ২৫ শতাংশ। এভা‌বে আর্থিক খাত বেশি দিন চলতে পারে না। তদারকির অভাবে আমাদের মুদ্রাবাজার হাতছাড়া হয়েছে, মূল্যস্ফীতিও আমাদের হাতের নাগালের বাইরে চলে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘অনিয়মের তথ্য বিভিন্নভাবে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু এসব তথ্য লুকিয়ে রাখার কারণে ব্যাংক খাতের অনিয়মের দুর্গন্ধ পুরো অর্থনীতিতে ছড়িয়ে পড়েছে। ব‌্যাংকে মন্দ ঋণ, অনিয়ম, দুর্নী‌তি, অর্থপাচার লু‌কি‌য়ে রেখে এ খাতের সমস‌্যা সমাধান সম্ভব হবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতকে ঘুণে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে অনিয়ম বেড়েছে এবং আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। এখন এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে, ব্যাংক নিজেই নিজেকে রক্ষা করতে পারছে না। তাহলে আমানতকারীদের আমানতের সুরক্ষা দেবে কীভাবে?’

ব্যাংক খাত নিয়ে প্রবন্ধে বলা হয়, ‘সরকার পদ্মা সেতুসহ বি‌ভিন্ন অ‌বকাঠ‌মোর তৈ‌রি ক‌রে যে প্রশংসা অর্জন ক‌রে‌ছে, তা আজ ম্লান হয়ে যাচ্ছে উচ্চ মূল‌্যস্ফী‌তি, খেলা‌পি ঋণ ও আর্থিক কে‌লেঙ্কা‌রির কারণে। আর্থিক খা‌তের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা হিসে‌বে এ দায় বাংলাদেশ ব‌্যাং‌কের ওপর বর্তায়। এসব বিষ‌য়ে এখনই য‌দি উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তাহলে বড় ধর‌নের সমস‌্যা সৃ‌ষ্টি হ‌তে পারে দেশের ব‌্যাংক খা‌তে।’

প্রবন্ধে আরও বলা হয়, ‘দেশে আার্থিক দুরবস্থার কারণে দিন দিন বাংলাদেশ ঋণনির্ভর হয়ে পড়ছে। এমনকি ধীরে ধীরে ঋণ পাওয়ার সক্ষমতাও কমছে। অপরদিকে বাজেট বাস্তবায়নের জন্য পর্যাপ্ত রাজস্ব আদায় করতে পারছে না সরকার।’ এখন বাজেট বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজানীয় টাকাও নেই, ডলারও নেই, বলে উল্লেখ করা হয় প্রবন্ধে।

এতে উল্লেখ করা হয়, ‘পর্যাপ্ত ডলার না থাকার কারণে জ্বালানি খাতসহ বিভিন্ন খাতের বিল পরিশোধ করতে পারছে না সরকার। যদি স্বাস্থ্য ভালো না থাকে তাহলে, ভার বহন করা যায় না। ব্যাংক খাতের দুর্বলতার কারণে এখন ব্যাংক ব্যক্তি খাতকেও ঋণ দিতে পারছে না, আবার সরকারকেও ঋণ দিতে পারছে না।’

‘বর্তমানে ব্যাংক আমানতের প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৮ থেকে ৯ শতাংশ। এ বছর যদি বাড়ে, তাহলে সেটা সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ হতে পারে। সে হিসাবে এ বছর আমানত আসবে এক লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার মতো। নতুন অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক থেকে ঋণের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা কীভাবে দেবে ব্যাংক? সরকার এক লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিলে ব্যক্তি খাত টাকা কোথায় পাবে?’

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com