বোমা মেশিনওয়ালারা এখন আ.লীগ নেতা!

0

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার নিষিদ্ধ বোমা মেশিন চক্রের হোতাদের জায়গা হয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে। অনেকে আবার ঠাঁই পেয়েছেন দলটির ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটিতেও। বোমা মেশিন চক্রের হোতাদের আওয়ামী লীগে গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। বিষয়টি স্বীকার করেছেন খোদ দলটির নেতারাও। তারা বলছেন, এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, বোমা মেশিন চক্রের সঙ্গে জড়িত তেঁতুলিয়া উপজেলার ডিমাগছ এলাকার আবদুল জব্বারের ছেলে আবু বক্কর (৩৬) একসময় পাথরশ্রমিক ছিলেন। গত কয়েক বছরে তিনি অবৈধভাবে ২০-৩০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। বিলাসবহুল বাড়ি, পাঁচটি ট্রাক্টর, নিজস্ব ওয়ার্কশপসহ কোটি কোটি টাকার পাথরের ব্যবসা ও জমি কিনেছেন। তাকে ভজনপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছে। তার সহযোগী গণাগছ এলাকার আজিজুল ইসলামের ছেলে এসারুল (২৯), একইভাবে শ্রমিক থেকে বোমা মেশিনের লাইনম্যান হয়ে কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন। তাকে করা হয়েছে ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। উপজেলার শালবাহান ইউনিয়নের পেদিয়াগছ এলাকার চানমিয়ার ছেলে শেখ ফরিদ (৩৮) এই চক্রের অন্যতম হোতা। তিনিও প্রায় ৫০ কোটি টাকার মালিক। পদ না পেলেও ফরিদ নিজেকে যুবলীগ নেতা বলে পরিচয় দিচ্ছেন। এ ছাড়া উপজেলা পাথর-বালু ব্যবসায়ী ও শ্রমিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি স্কুলশিক্ষক মজিবর রহমানকে ভজনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ লিটনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তাসহ সব মহলকে ম্যানেজ করে রাতের আঁধারে বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন করতেন বক্কর, এসারুল, মজিবর, লিটন ও ফরিদরা। তারা প্রতিদিন ৩০০-৪০০ বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন করতেন। প্রতি রাতে ১৮-২০ লাখ টাকা ভাগাভাগি হতো। আর মূল লাইনম্যান হিসেবে কাজ করতেন বক্কর, এসারুল ও ফরিদ। মজিবর, লিটনসহ ওই সংগঠনের কয়েকজন নেতা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। এলাকাবাসীর দাবি, গত ২৬ জানুয়ারি মাটি খনন করে ও বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার দাবিতে তেঁতুলিয়ায় মহাসড়ক অবরোধ করেন পাথরশ্রমিকরা। সাধারণ পাথরশ্রমিকদের উসকানি দিয়ে মাঠে নামিয়েছেন পাথর, বালু ব্যবসায়ী ও শ্রমিক কল্যাণ সমিতির নেতারা। ওই দিন পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়ান তারা। এ সময় এক পাথরশ্রমিক নিহত হন। সংঘর্ষে পুলিশ ও র‌্যাবসহ আহত হয় আরও ৩০ জন। এ ঘটনায় তেঁতুলিয়া থানা পুলিশ চার-পাঁচ হাজার ব্যক্তিকে আসামি করে দুটি মামলা করে।

জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ফরিদা আখতার হীরা বলেন, ‘বোমা মেশিন চক্রের অনেকেই কমিটিতে স্থান পেয়েছেন।’ তেঁতুলিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইয়াছিন মণ্ডল বলেন, ‘কমিটিতে বোমা মেশিনের সঙ্গে যারা জড়িত আছেন, তাদের বিরুদ্ধে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ বোমা মেশিন চক্রের সঙ্গে নিজেদের জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন মজিবর ও লিটন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com