প্রশ্নফাঁস নিয়ে পিএসসির আইনে প্রথম মামলা, এ আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড
বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) কোনো পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ ও দায়ীদের শাস্তির বিষয়ে রয়েছে আইন। ‘বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন আইন-২০২৩’ নামের এ আইনে প্রথম কোনো মামলা দায়ের হলো। পিএসসি চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে এ আইনে প্রথম মামলা হয়েছে গতকাল সোমবার। এ আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড।
সোমবার (৮ জুলাই) রাজধানীর পল্টন থানায় এ আইনের ১১/১৫ ধারায় মামলা করেন সিআইডির উপ-পরিদর্শক নিপ্পন চন্দ্র দাস। মামলায় সৈয়দ আবেদ আলীসহ ৩১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আসামি আরও ৫০ থেকে ৬০ জন। অভিযোগ প্রমাণ হলে আবেদ আলীসহ আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে ১০ বছরের কারাদণ্ড।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি হেমায়েত উদ্দিন খান হিরণ বলেন, ‘প্রশ্নফাঁস রোধে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন আইন প্রণয়ন করা হয় ২০২৩ সালে। এ আইনের ১১/১৫ ধারায় প্রথম মামলা পিএসসির চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে। এরই মধ্যে ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন আবেদ আলীসহ ছয়জন। এছাড়া পিএসসির উপ-পরিচালক মো. আবু জাফরসহ ১১ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মামলার তদন্তে আরও আসামির নাম উঠে আসতে পারে। এ আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। আমরা চেষ্টা করবো আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে।’
তবে আসামিপক্ষের আইনজীবীদের দাবি, আসামিদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সত্য নয়।
ছয়জনের দায় স্বীকার
প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় করা মামলায় পিএসসি চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীসহ ছয়জন দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। অন্যরা হলেন- পিএসসির অফিস সহায়ক খলিলুর রহমান, অফিস সহায়ক (ডিসপাস) সাজেদুল ইসলাম, ব্যবসায়ী সহোদর সাখাওয়াত হোসেন ও সায়েম হোসেন এবং বেকার যুবক লিটন সরকার।
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তারা জবানবন্দি দেন। জবানবন্দি শেষে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
এর আগে এদিন গ্রেফতার ১৭ আসামিকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এসময় আবেদ আলীসহ ছয়জন ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার জুয়েল চাকমা। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
তবে, পিএসসির উপ-পরিচালক মো. আবু জাফর ও মো. জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর কবিরসহ ১১ জনকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিনা হক তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
কারাগারে যাওয়া অপর আসামিরা হলেন- পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যানের গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীর ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম, সাবেক সেনা সদস্য নোমান সিদ্দিকী, অডিটর প্রিয়নাথ রায়, ব্যবসায়ী মো. জাহিদুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী শাহাদাত হোসেন, ঢাকার ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অফিসে কর্মরত মো. মামুনুর রশীদ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মেডিক্যাল টেকনিশিয়ান মো. নিয়ামুন হাসান ও ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থী বর্তমানে মিরপুরের ব্যবসায়ী আবু সোলায়মান মো. সোহেল।
গত রোববার রাতে বিসিএসের প্রশ্নফাঁস নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল। ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হতে থাকে সৈয়দ আবেদ আলী ও তার ছেলে সিয়ামের বিভিন্ন পোস্ট। এ ঘটনায় সোমবার রাতে আবেদ আলীসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন সিআইডির উপ-পরিদর্শক নিপ্পন চন্দ্র দাস। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামি আরও ৫০ থেকে ৬০ জন।