ভারতের উত্তর প্রদেশের হাতরাস পদদলিত হয়ে নিহতের সংখ্যা শতাধিক
ভারতের উত্তর প্রদেশের হাতরাস পদদলিত হয়ে নিহতের সংখ্যা শতাধিক। স্পটেই ৫০-৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বাকিদের মৃত্যু হয়েছে হাসপাতাল আনার পথেই। অনেকেই হাসপাতালে বিছানায় মৃত্যু বরণ করেছে।
ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পশ্চিমবঙ্গের মু্খ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথসহ অনেকে।
সংসদ ভবনে ভাষণ দেওয়ার সময় বিষয়টি জানতে পারেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। তারপরেই তিনি বক্তৃতা থামিয়ে শোকপ্রকাশ করেন। পরে এক্স -এ পোস্ট করে ওই ঘটনায় ক্ষতিপূরণের কথা ঘোষণা করেছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর। হাতরসের ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু।
প্রধানমন্ত্রীর দফতর এক্স হ্যান্ডলে লিখেছে, হাতরসের ঘটনায় মৃতদের পরিবারকে ২ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় ত্রাণ তহবিল থেকে এই অর্থ দেওয়া হবে। আহতদের ৫০ হাজার রুপি করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এক্সে লিখেছেন, হাতরসে নারী এবং শিশুসহ বহু মানুষের মৃত্যুর খবর দুঃখজনক। যারা নিজের পরিজনকে হারিয়েছেন, তাদের সমবেদনা জানাই। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতাও শোকপ্রকাশ করেন। তিনি এক্সে লিখেছেন, উত্তরপ্রদেশের হাতরসে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর খবর শুনলাম। তাদের পরিবারকে সমবেদনা জানাই।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এক্সে জানিয়েছেন, এই খবর শুনে তার মন ব্যথিত। স্থানীয় প্রশাসন উদ্ধারকাজে নেমেছে। মৃতদের পরিবারকে সমবেদনা জানিয়েছেন শাহ। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন।
লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুলও শোকপ্রকাশ করেছেন এই ঘটনায়। তিনি এক্সে লিখেছেন, সরকার এবং প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, আহতদের যেন সব রকমের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। মৃতদের পরিবারকে সাহায্য করা হোক। ইন্ডিয়ার(বিজেপি বিরোধী ফ্রন্ট) সকল কর্মকর্তাকে অনুরোধ, তারা যেন উদ্ধারকাজে সাহায্য করেন।
এক্সে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ জানিয়েছেন, আহতদের যুদ্ধকালীন তৎপরতায় হাসপাতালে ভর্তি এবং চিকিৎসা করানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর কী কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, তাও জানিয়েছেন তিনি। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই একটি তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নারায়ণ সাকার ওরফে ভোলে বাবা নামে স্বঘোষিত এক ধর্মীয় গুরুর জন্য ‘মানব মঙ্গল মিলন সদ্ভাবনা অনুষ্ঠান কমিটি’র তরফে মঙ্গলবার(২ জুন) সকাল ১১টা থেকে দুপুর ৩টে পর্যন্ত ওই সৎসঙ্গের আয়োজন করা হয়েছিল। অংশগ্রহণ করেছিলেন হাজার হাজার ভক্ত। ভক্তদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন নারী। উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ওই সৎসঙ্গে যোগ দিতে এসেছিলেন তারা। সেখানেই ঘটে যায় বিপর্যয়। হুড়মুড়িয়ে বেরোনোর সময় পদপিষ্ট হয়ে মারা গিয়েছেন অনেকে। বেশির ভাগই নারী। কয়েকজন শিশুও মারা গিয়েছেন। আহত হয়েছেন অনেকে। আহতদের স্থানীয় ইটাওয়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার হাজার হাজার মানুষের জনসমাগম হয়েছিল। তবে অস্থায়ী ছাউনির মধ্যে কিছু হয়নি। সড়কের মধ্যিখানে মেন গেট তৈরি হয়েছিল। সেখান দিয়ে বেরোনোর সময় অনেকে রাস্তার ডান দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন, অনেকে বাম দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। সেই সময়ই ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। যারা মাটিতে পড়ে গিয়েছিলেন, তাদের উপর দিয়েই চলে যান অনেকে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সৎসঙ্গ উপলক্ষে সোমবার রাত থেকেই মুঘলাগড়ি গ্রামে অনুষ্ঠানস্থলের সামনের সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল কর্তৃপক্ষের তরফে। কিন্তু মঙ্গলবার দুপুর নাগাদ সেই পথ খুলে দেওয়া হয়। সৎসঙ্গ যখন শেষ হচ্ছে তখন ওই সড়কে আগে থেকেই যানজট আর ভিড় ছিল। ফলে হুড়োহুড়ি আরও বেড়ে যায়। সেই সময়ই পদপিষ্ট হন অনেকে।
ওই অনুষ্ঠানে যে অতিরিক্ত ভিড় হয়েছিল, তা মেনে নিয়েছেন হাথরসের জেলাশাসক আশিস কুমার। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠান শেষে অত্যধিক হুড়োহুড়ির জন্য এই ঘটনা ঘটেছে।