জয়পুরহাটে ‘ঘুষ দেওয়ার ভিডিও’ ভাইরাল করলেন ফাঁসির আসামি, দিলেন মামলার হুমকি
জয়পুরহাটে স্কুলছাত্র মোয়াজ্জিম হত্যা মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি দেওয়ান বেদারুল ইসলামের বেদিনের বাসায় গিয়ে তার কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন এক ব্যক্তি। সম্প্রতি এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। শুক্রবার (২৮ জুন) দেওয়ান বেদারুল ইসলাম তার নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ভিডিওটি পোস্ট করেন।
দেওয়ান বেদারুল তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া ভিডিও ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘সাধু সাবধান, জয়পুরহাট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সম্মানিত পেশকার (বেঞ্চ সহকারী) জনাব শাহীন আমার মামলার রায়ে ফাঁসির ভয় দেখিয়ে খালাস করে দেবে বলে প্রত্যাহারকৃত বিজ্ঞ বিচারক জনাব আব্বাস উদ্দীনের নাম করে টাকা নেওয়ার ভিডিও ফুটেজ। তার বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে।’
৬ মিনিট ৫৬ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, দেওয়ান বেদারুল ইসলামের বাসার একটি কক্ষে এক ব্যক্তি গায়ে জ্যাকেট ও মাথায় মাফলার পরে ঢোকেন। তাকে ঘরে বসিয়ে রেখে বেদারুল কিছুক্ষণের জন্য চলে যান। এ সময় জ্যাকেট ও মাথায় মাফলার পরা ওই ব্যক্তি ঘরের এদিক-ওদিক তাকাচ্ছিলেন। এরপর বেদারুল ইসলাম একটি লাল রঙের ব্যাগ নিয়ে ঘরে আসেন। বেদারুল লাল ব্যাগটি পাশের টেবিলের ওপর রাখেন। তখন ওই ব্যক্তি বেদারুলকে কিছু বলছিলেন। বেদারুল এদিক-ওদিক তাকিয়ে তার উত্তর দিচ্ছিলেন। এরপর তাদের মধ্যে কিছুক্ষণ কথোপকথনের পর বেদারুল টেবিলের ওপর রাখা লাল ব্যাগটি নিজের হাতে নিয়ে ব্যাগের ভেতর থেকে টাকার বান্ডিলগুলো বের করে ওই ব্যক্তির হাতে দেন। ওই ব্যক্তি টাকার বান্ডিলগুলো দেখে লাল ব্যাগটি চেয়ে নিয়ে সেই ব্যাগে টাকাগুলো ঢুকিয়ে নেন। এরপর তারা দুজন নিজেদের মধ্যে আরও কিছুক্ষণ কথোপকথন চালিয়ে যান। আবার বেদারুল কয়েক সেকেন্ডের জন্য বাসার ভেতরে যান। তিনি আবার কক্ষে ফিরে আসেন। এর কিছুক্ষণ পর সেখানে গায়ে চাদর ও মাথায় কাপড় পরা এক নারী সেখানে আসেন। তাকে হাত নাড়িয়ে কথা বলতে দেখা যাচ্ছিল।
বেদারুলের বাসায় গিয়ে তার কাছ থেকে টাকা নেওয়া ব্যক্তিটিকে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী এস এম শাহিন বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। বেঞ্চ সহকারী শাহিন নিজেও স্বীকার করেছেন ভিডিওটি তার। তবে ভিডিওতে দেখা যাওয়া টাকা নেওয়ার বিষয়টি ঘুষ নয় বলে দাবি করেছেন তিনি। মোবাইল ফোনে শাহিন বলেন, ‘আমার বড় ভাইয়ের বন্ধু বেদারুল ইসলাম। তিনি আমার বড় ভাই ও আমার কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নিয়েছিলেন। সেই টাকা তিনি আমাকে ফেরত দিয়েছেন। বেদারুলের মামলা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ছিল না। এর আগেও বেদারুল এরকম ভিডিও দিয়েছিল। বেদারুল কেমন মানুষ সেটি জয়পুরহাটের মানুষ জানে। মামলা খালাসের কথা বলে টাকা নেওয়ার কথা সত্য নয়।’
ভিডিওটি নিয়ে জয়পুরহাট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহনুর রহমান শাহীন বলেন, ‘একটি হত্যা মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির কাছে থেকে টাকা নেওয়ার দৃশ্যসংবলিত ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও আমাকে একজন আইনজীবী দেখিয়েছেন। টাকা নেওয়া ব্যক্তিটি জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী শাহিন বলে আমার মনে হয়েছে। হত্যা মামলার আসামির সঙ্গে আদালতের বেঞ্চ সহকারী আর্থিক লেনদেনের সর্ম্পক থাকা সমীচীন নয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এটি তদন্ত করে দেখা উচিত বলে মনে করছি।’