যশোরে কোটি টাকার সম্পদ লুটপাট ও বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে
যশোরে একটি বসতঘর ভেঙে কোটি টাকার সম্পদ লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) দুপুরে যশোর সদর উপজেলার হামিদপুর পশ্চিমপাড়ায় আসাদুজ্জামান নামের এক ব্যক্তির বাড়িঘর ভেকু দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
দেড় থেকে দুইশ লোক সশস্ত্র অবস্থায় সেখানে হামলা ও লুটপাট চালান বলে অভিযোগ করেন বাড়ির মালিক আসাদুজ্জামান, তার সন্তান ও স্বজনরা।
তারা জানান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন তার বেয়াই নুরুল ইসলামের পক্ষে জমি জবরদখলের উদ্দেশ্যে এই হামলা চালান। ওই সময় নগদ টাকা, সোনার গহনা, গরু-ছাগল, ধান, গমসহ প্রায় কোটি টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, হামলা-ভাঙচুরের কোনো কিছুই তিনি জানেন না।
ঘটনার শিকার আসাদুজ্জামানের ছোট ছেলে এবিএম জাফরির স্ত্রী সুবর্ণা আক্তার বলেন, ‘বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে হঠাৎ ২০-৩০ জন সশস্ত্র অবস্থায় বাড়িতে প্রবেশ করে ভাঙচুর শুরু করে। ওইসময় আমার স্বামী ও ভাসুর আফরাউজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। তারা অস্ত্রের মুখে বাড়ির লোকজনের কাছ থেকে মোবাইলফোন ছিনিয়ে নিয়ে ভাঙচুর শুরু করে। দুপুরের রান্না শেষ হলেও আমরা কেউই খেতে পারিনি। ঘরবাড়ি তছনছ করে দেওয়ায় রাতে শিশুসন্তান নিয়ে কোথায় থাকবো তাও অজানা।’
এবিএম জাফরি বলেন, ‘দুপুরে বাড়িতে কাজ করছিলাম। খালি গায়ে ওইসময় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলামের চ্যালা চামুন্ডা দেড় দুইশ সন্ত্রাসী শাটারগান, হকস্টিক, লাঠিসোটা, ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। বাড়িতে ভেকু লাগিয়ে আটটি বসতঘর, দুটি রান্নাঘর, তিনটি ফলদ গাছ ধ্বংস করে। হামলাকারীরা জমি কেনার জন্য বাড়িতে রাখা নগদ ১০ লাখ টাকা, মা-ভাবি ও স্ত্রীর ৩০ ভরি সোনার গহনা, তিনটি গরু, ছয়টি ছাগল, প্রায় ৬০ টন ধান ও গম সাত-আটটি ট্রাক্টরের ট্রলিতে করে নিয়ে যায়।’
তিনি আরও জানান, সন্ত্রাসীরা ১৫-১৬টি মাইক্রোবাস, ৭-৮টি ট্রাক্টরের ট্রলি, দুটি জিপ, প্রাইভেটকার ও বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল নিয়ে হামলা চালায়।
আসাদুজ্জামানের মেজ ছেলে আফরুজ্জামান বলেন, ‘ঘটনার সময় বাড়িতে ছিলাম না। খবর পেয়ে এসে এই ধ্বংসযজ্ঞ দেখছি। তারা আমার ছোট ভাইসহ বাড়িতে থাকা কয়েকজনকে মারধরও করেছে। শুনেছি শহিদুল ইসলাম মিলন ওইসময় রাস্তায় গাড়িতে বসেছিলেন। তারই নির্দেশনায় এই হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘খবর পেয়ে যখন পুলিশ আসে তখন সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। কিন্তু ভেকু ও একটি ট্রাক্টরের টলি ঘটনাস্থলে রয়েছে। শুনেছি পুলিশ ভেকু চালককে আটক করেছে।’
বাড়ির মালিক আসাদুজ্জামান বলেন, ‘শহিদুল ইসলাম মিলন আমার বাল্যবন্ধু। সম্প্রতি এই জায়গার সাবেক মালিক নুরুল ইসলাম তার বেয়াই হয়েছেন। নুরুল ইসলামের এই জায়গা শিল্প ব্যাংকে মর্টগেজ ছিল। ১৯৯২ সালে ব্যাংকের নিলামের মাধ্যমে আমরা জমিটি কিনি। সেই থেকে এই জমি, ঘরবাড়ি ভোগদখল করে আসছি। গতবছর শহিদুল ইসলাম মিলন এই জমি দখলের জন্য তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে আসে। তাদের মারধরে আমার সন্তান আহত হয়। সেসময় গ্রামবাসীর হামলায় সন্ত্রাসীসহ তিনি পালিয়ে যান। এ বিষয়ে আমরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনও করেছিলাম।’
তিনি আরও বলেন, আমার বাবা শহীদ উদ্দিন আহমেদ ১৯৭১ সালে শহীদ হন। আমরা শহীদ পরিবারের সন্তান। আমাদের ওপর এই হামলার বিচার চাই।