নাসির লড়বেন কতদিন?

0

নাসির উদ্দীন পাটোয়ারী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র। গত ১৫দিন ধরে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সন্ত্রাসবিরোধী রাজু স্মারক ভাস্কর্যের সামনে। তার দাবি সীমান্ত হত্যার বিচার ও সীমান্ত সমস্যার সমাধান করতে হবে। কখনো কখনো হাতে লেখা প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করছেন, যেখানে লেখা- ‘তুমি বল বন্ধুত্ব, বুঝাও মৈত্রী; আমি খুঁজি কৃষক গাজী, কোথায় ফেলানী?’।

অর্ধমাস ধরে চলতে থাকা নাসিরের এ অবস্থান কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়েছেন অনেকে। তবে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কোন ব্যক্তি এখনো তাকে দাবি পূরণের বিষয়ে আশ্বস্ত করেননি। তার মতের সঙ্গে সংহতি জানাননি।

যদিও গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরে তার পরিবারকে সামাজিকভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ নাসিরের। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় তাকে ‘সরকারবিরোধী’ বলে এলাকায় প্রচার চালিয়েছে বলেও অভিযোগ এ শিক্ষার্থীর। গতকাল তিনি বলেন, যতদিন সীমান্ত হত্যার বিচার ও সীমান্ত সমস্যার সমাধান হবে না ততদিন তিনি এ কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। বলেন, আমি চাই আমাদের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির পরিবর্তন আসবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রী দায়িত্বশীল আচরণ করবেন, সীমান্ত হত্যা বন্ধে ভারত সরকারকে কড়া বার্তা দেবেন।

নাসির মনে করেন, এদেশে ভারতীয় আগ্রাসন চলছে। আর এর বিরুদ্ধে কেউ কথা বলাকে ভয় করে। যেই প্রতিবাদ করছে তাকে খেসারত দিতে হচ্ছে। তিনি বলেন, এদেশে ভারতের আধিপত্যের বিরুদ্ধে কথা বলা যে একটি ভয়ঙ্কর অবস্থায় পৌঁছেছে সেটি আমার মধ্য দিয়ে কেটে যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি। যুব সমাজ নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় সচেতন হবে। দেশমাতৃকার জন্য সত্য কথা বলতে পিছ পা হবে না। তিনি বলেন, আমার এ অবস্থান হচ্ছে ভারতীয় সীমান্তে যে হত্যাকাণ্ড চলছে তার বিচার ও সীমান্ত সমস্যার সমাধানের দাবিতে।

মার্কেটিং বিভাগের এ শিক্ষার্থী বলেন, বিশেষ কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী নয়, সব নাগরিকের দায়িত্ব হচ্ছে একজন বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কথা বলা। প্রতিনিয়তই সীমান্তে আমাদের নাগরিকদের হত্যা করছে ভারতীয় বাহিনী, কিন্তু এর কোন জোরালো প্রতিবাদ হচ্ছে না। আমি চাই সরকার এর বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেবে। সীমান্তে সব হত্যাকাণ্ড বন্ধ হবে। ইতিপূর্বে যেসব হত্যাকাণ্ড হয়েছে তার সুষ্ঠু বিচার হবে। তিনি বলেন, আমাদের অনেক সীমান্ত সমস্যাও রয়েছে। যেমন- বাণিজ্য ঘাটতি, পানি বন্টনসহ অনেক কিছু। কিন্তু সরকার কোন ভালো সমাধান করতে পারেনি। তাই আমি চাই সরকার এসব সমস্যা সমাধান করবে। নতজানু পররাষ্ট্র ও বাণিজ্যনীতির সংশোধন আনবে। নাসির বলেন, আমার এ প্রতিবাদটা যেন নতুন প্রজন্ম বুঝতে পারে। তারা ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়- সেটাই আমার চাওয়া। সবাইকে সবার জায়গা থেকে দেশের স্বার্থ রক্ষার্থে ভূমিকা রাখতে হবে।

এদিকে গত ২৫ই জানুয়ারি বিকাল সাড়ে ৪টায় শুরু হওয়া নাসিরের এ অবস্থান কর্মসূচিতে প্রতিদিনই কেউ না কেউ সংহতি জানাচ্ছেন। তারা নাসিরের মাধ্যমে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের এ ভাষা অব্যাহত থাকবে বলে প্রত্যাশা করেন। গতকাল বিকালে নাসিরের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে দুই ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন, ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি গোলাম মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক জাহিদ সুজন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আবু রায়হান, সাধারণ সম্পাদক সালমান ফারসীসহ সংগঠনটির কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতৃবৃন্দ। সংহতি জানিয়েছে, সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি গোলাম মোস্তফা বলেন, ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জাতীয় সংহতি প্রয়োজন। সীমান্তে সকল হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। ইতিপূর্বে ঘটা সকল হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার করতে হবে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com