নাটোরে প্রধান শিক্ষক বিমান গোবিন্দের বিরুদ্ধে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ
নাটোর শহরের ঐতিহ্যবাহী নব বিধান উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিমান গোবিন্দ সরকারের বিরুদ্ধে শিক্ষকের এমপিও না করে উল্টো অসত্য অভিযোগ করা, অবসরে যাওয়া শিক্ষক-কর্মচারীদের হয়রানি, অবৈধভাবে অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতিষ্ঠান সরকারিকরণের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করেছেন কিছু শিক্ষক-কর্মচারী।
বৃহস্পতিবার (২০ জুন) দুপুরে শহরের একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগের কথা জানান ভুক্তভোগীরা।
২০১৫ সালে সহকারী শিক্ষক (সামাজিক বিজ্ঞান) হিসেবে নিয়োগ পান শহরের নীচাবাজার এলাকার বাসিন্দা মোছা. জান্নাতুল ফেরদৌস।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, তার স্বামী ব্যবসায়ী জাহিদ হাসান মিন্টুর সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের সখ্যতা তৈরি হওয়ায় কয়েক দফায় তিনি ১৩ লাখ টাকা ধার নেন। এই টাকা ফেরত চাওয়ায় তিনি আজ পর্যন্ত এমপিওভুক্তির ব্যবস্থা করে দেননি। এরপর নানা টালবাহানা দেখাচ্ছেন। গত ৯ বছর তাকে মাধ্যমিক বোর্ড পরীক্ষা ও নির্বাচনের সব দায়িত্ব দিলেও ধার দেওয়া টাকা ফেরত চাওয়ায় এখন তাকে সব কাজ থেকে বিরত রেখে অসম্মানিত করা হচ্ছে। উল্টো তার কাগজপত্র ঠিক নেই বলে প্রধান শিক্ষক প্রচার করছেন।
তিনি বলেন, ব্যক্তিগত আক্রোশে প্রধান শিক্ষক আমাকে হাজিরা খাতায় শিক্ষক তালিকায় নাম না তুলে সর্বশেষ অর্থাৎ ঝাড়ুদারের শেষে আমার নাম লেখেন এবং আমাকে সই করান। এর আগে বিভিন্ন সময় তিনি (প্রধান শিক্ষক) বিভিন্ন হাজিরা খাতায় সই করিয়েছেন। এমনকি খণ্ডকালীন শিক্ষকের খাতায়ও প্রধান শিক্ষক আমাকে দিয়ে সই করান। এখন আমার সন্দেহ হয় এতদিন তাহলে আমাকে দিয়ে কোথায় সই করানো হচ্ছিল?
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান শিক্ষকের টাকা গ্রহণের একটি স্বীকারোক্তিপত্রও উপস্থাপন করেন এই শিক্ষক।
অপরদিকে অবসরে যাওয়া সহকারী শিক্ষক উমা রাণী পালিত, হাসিনা ইয়াসমিন, অফিস সহায়ক জান মোহাম্মদ ও প্রহরী নুরুল ইসলাম বলেন, সারাজীবন চাকুরি করে প্রায় দেড় বছর আগে তারা অবসরে গেছেন। এর আগে ২০১৭ সালের ২৫ জুলাই প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়টি সরকারিকরণের জন্য জরুরি সভা করে সব শিক্ষকদের কাছ থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ও কর্মচারীদের কাছ থেকে ৬৫ হাজার করে টাকা নেন। সরকারিকরণের বিষয়টি সত্য নয়, বিষয়টি তারা একসময় বুঝতে পেরে টাকা ফেরত চাইলে প্রধান শিক্ষক অস্বীকার করেন।
পরে ভুক্তভোগীরা এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুল ও নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী জলির কাছে টাকা ফেরতের আবেদন করেন। এই আবেদনের পর প্রধান শিক্ষক নিজের দোষ ঢাকতে উল্টো তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের আরো বেশি টাকা পাওনা রয়েছে বলে দাবি করেন।
১০ বছর চাকুরি করে এমপিওভুক্ত হওয়ার মাত্র চার বছর পর মারা যাওয়া কর্মচারী এমরান হোসেনের স্ত্রী ছামিনা আক্তার বলেন, সরকারিকরণের নামে তার স্বামীর নিকট থেকে নেওয়া এক লাখ ২০ হাজার টাকা অথবা স্বামীর পদে তাকে চাকুরি দেওয়ার দাবি জানালে প্রধান শিক্ষক তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে তাড়িয়ে দিয়েছেন।
কম্পিউটার বিষয়ের সহকারী শিক্ষক হাসিনা ইয়াসমিন বলেন, চাহিদামতো টাকা দিতে না পারায় মিথ্যা ষড়যন্ত্র করে দুই দফায় তাকে চাকুরিচ্যুত করে প্রধান শিক্ষক। তার বিরুদ্ধেও জাল কম্পিউটার সনদ দেওয়ার মিথ্যা অভিযোগ করে প্রধান শিক্ষক এমপিও শিট থেকে নাম কর্তন করেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।