একাত্তর সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের মধ্যে যে গণতান্ত্রিক চেতনা, তা আওয়ামী লীগ ধ্বংস করে দিয়েছে

0

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা অনেক কথা বলেছি। সভা করেছি, অনেক দাবি জানিয়েছি, নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। এখন আমাদের একটাই কথা- দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবই। সরকারকে বাধ্য করব তাকে মুক্তি দিয়ে জনগণের সব অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য। এটাই এখন বিএনপির একমাত্র কাজ। এ সময় খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ১৫ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচির ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব।

শনিবার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবাসের দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে তার মুক্তির দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপি। দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে আছেন খালেদা জিয়া। গত বছরের ১ এপ্রিল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে তিনি বন্দি অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এদিকে সমাবেশ উপলক্ষে বেলা ১১টা থেকে সমাবেশস্থলে মিছিল নিয়ে আসতে শুরু করেন দলীয় নেতাকর্মীরা। দুপুর ২টায় সমাবেশ শুরুর আগেই ফকিরাপুল থেকে নাইটিঙ্গেল মোড় পর্যন্ত দু’পাশের সড়ক নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। এ সময় সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগানে পুরো এলাকা প্রকম্পিত করে তোলেন। তবে সমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশের তেমন উপস্থিতি দেখা যায়নি।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের আন্দোলন শুরু হয়েছে। আমাদের একজন নেতাকর্মীও ঘরে বসে নেই। তারা লড়াই করছে, সংগ্রাম করছে। বিজয়ের মধ্য দিয়েই খালেদা জিয়া মুক্ত হবে।

বেআইনিভাবে মিথ্যা মামলা সাজিয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে- এমন দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। ঠিকমতো হাঁটতে পারেন না, কারও সাহায্য নিয়ে চলতে হয়। তিনি কিছুই খেতে পারেন না। ৬ থেকে ৭ পাউন্ড ওজন কমে গেছে। বর্তমান সরকার আইন ও সংবিধানে বিশ্বাসী নয় বলে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, তারা নিজেরাই এই সংবিধানকে কেটেকুটে তছনছ করে দিয়েছে। তারা আজ জনগণের কোনো ম্যান্ডেট ছাড়াই রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে জোর করে দখল করে আছে। এরা জনগণের সরকার নয়।

একাত্তর সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের মধ্যে যে গণতান্ত্রিক চেতনা, তা আওয়ামী লীগ ধ্বংস করে দিয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়ে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই। যে দেশের প্রধান বিচারপতিকে বন্দুকের জোরে দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়ে তার নামে মামলা করা হয়- এভাবে বিচার বিভাগ চলতে পারে না।

তিনি বলেন, অর্থনীতিকে তছনছ করে দিয়ে নিচের দিকে নামিয়ে দিয়েছে। এটা অর্থমন্ত্রীর কথা। যিনি একদিন আগে বললেন সব সূচকে দেশ ঊর্ধ্বগতি। তার পরের দিন বললেন অর্থনীতির অবস্থা ভালো না। আমার তো সন্দেহ হচ্ছে এখন তার চাকরি থাকে কি না। এই কথা বলার পর তার চাকরি থাকার তো কথা না।

মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের গার্মেন্ট শিল্প ভালো নেই। কিন্তু দুর্নীতি বন্ধ নেই। দুর্নীতির জন্য সমানে মেগা প্রজেক্ট করা হচ্ছে। দুর্নীতির জন্য বিদ্যুৎ, গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। নিত্যপণ্যের প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেড়েছে। দুর্নীতির জন্য তাদের যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাদের বাদ দিতে হয়েছে। গ্রেফতার করতে হয়েছে।

দেশের জনগণ আওয়ামী লীগকে চায় না বলে দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তারা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে। ’৭৫ সালে তারা একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিল। আজ তারই ধারাবাহিকতাই ভিন্ন পদ্ধতিতে তা করছে। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে ভয়াবহ দানব সরকারকে পরাজিত করতে হবে। মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে।

মাত্র ১৫ শতাংশ ভোট দিয়ে জনগণের প্রতিনিধি হওয়া যায় না উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ৫০ শতাংশের নিচে কম ভোট পড়লে সেটা নির্বাচন বলে গণ্য করা হয় না। সিটি নির্বাচন ফলাফল বাতিল করে পুনরায় জনগণের ভোটে মেয়র নির্বাচিত করতে হবে। আপনারা (সরকার) মানুষের অধিকার হরণ করছেন। তাই অবিলম্বে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীন নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় জনগণের উত্তাল আন্দোলন থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়া যে মামলায় আজ কারাগারে, এ মামলার সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাকে কারাগারে রাখার কারণ হচ্ছে- বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকার তাকে ভয় পায়। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য গায়ের জোরে তাকে কারাগারে রেখেছে। তাকে কারাগারে রাখার মধ্য দিয়ে সারা দেশকে আজ কারাগারে রাখা হয়েছে। কারণ, তারা জোর করে ক্ষমতায় থাকতে চায়।

তিনি বলেন, এই সরকার ভোট চোর, টাকা চোর, সব কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত। এই দেশে যদি গণতন্ত্র ফিরে আনতে হয়, দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে হয়, তাহলে এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, খালেদা জিয়াকে আইনিভাবে মুক্ত করতে আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। আমাদের আইনজীবীরা অনেক পরিশ্রম করেছে। যেদিন তার জামিনের শুনানি হয়, সেদিন প্রধানমন্ত্রী যদি বলেন খালেদা জিয়া রাজার হালে আছেন- এই কথা শোনার পর কোন বিচারপতির জন্য তাকে জামিন দেয়া সম্ভব হয়? এভাবে তারা আদালতকে প্রভাবিত করে। যার কারণে মুক্তি সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, এই সরকার দেশের মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করেছে। তার প্রমাণ হল- সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের যে দু’জনকে মেয়র বলে ঘোষণা করা হয়েছে, তারা মেশিনের মেয়র। আর আমাদের তাবিথ আউয়াল ও ইশরাক হোসেন হচ্ছেন জনগণের ভোটের মেয়র। এই নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। এ সময় তিনি সিটি নির্বাচন বাতিল করে আবারও পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানান।

মওদুদ বলেন, সামনে দুটি আন্দোলন করতে হবে। খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলনের পাশাপাশি জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলন। এই আন্দোলনের জন্য আমাদের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, অনেকে বলেন বিএনপি আন্দোলন করছে না বা করতে পারে না। কিন্তু আজকের সভা কি আন্দোলনের অংশ না? আমরা মিছিল ও মিটিং করি, লোক হয়। তবে আমাদের যার যার এলাকার কোন্দল আছে, তা ভুলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সুতরাং নিজেদের ভেতরের কোন্দল আগে মিটাতে হবে। তাহলেই খালেদা জিয়া মুক্ত হবেন। সেভাবে আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। এই হায়েনা সরকারের বিরুদ্ধে কামারের ঘরে টুপি পরে লাভ নেই, ঢোল বাজাতে হবে।

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সিটি নির্বাচনে মানুষ ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে যাননি। ভোট পড়েছে ৭ থেকে ৮ শতাংশ। অথচ সরকার ভোটের শতাংশ বাড়িয়ে বলেছে। অর্থাৎ ঢাকার জনগণ সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচন বিশ্বাস করে না।

সমাবেশে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন ও তাবিথ আউয়ালও বক্তব্য দেন। ইশরাক বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। তার মুক্তি ছাড়া বিকল্প নেই। আমাদের মা মুক্তি পেলে জনগণ মুক্তি পাবে, গণতন্ত্র মুক্তি পাবে।

তিনি বলেন, সিটি নির্বাচনে জাতির সঙ্গে তামাশা করা হয়েছে, যা জাতীয় নির্বাচনেও করা হয়েছিল। তারা জনগণের মনের ভাষা বুঝতে পেরে তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ভোট কারচুপির আশ্রয় নিয়েছে। সরকারকে হুশিয়ার করে ইশরাক বলেন, জনগণকে বন্দি করে বেশিদিন এই বাকশাল টিকবে না। জনগণ আপনাদের বিপক্ষে চলে গেছে। আপনারা কোনোদিনই ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে পারবেন না।

তাবিথ বলেন, সিটি নির্বাচনে সরকার যখন দেখেছে জনগণ ধানের শীষের পক্ষে। তাই জালিয়াতি করে আমাদের বিজয় ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে সরকার জনবিচ্ছিন্ন।

বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও সহ-প্রচার সম্পাদক আমীরুল ইসলাম খান আলিমের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, কেন্দ্রীয় নেতা বরকতউল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, শামসুজ্জামান দুদু, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, মিজানুর রহমান মিনু, ফজলুর রহমান, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, আবদুস সালাম, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, ঢাকা জেলার খন্দকার আবু আশফাক, অঙ্গসংগঠনের মধ্যে যুবদলের সাইফুল আলম নীরব, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, স্বেচ্ছাসেবক দলের শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেইন, ছাত্রদলের ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল প্রমুখ। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু, আতাউর রহমান ঢালী, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, শামা ওবায়েদ, বিলকিস জাহান শিরিন, শিরিন সুলতানা, এহছানুল হক মিলন, এমএ মালেক, মীর সরফত আলী সপু, আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, নিপুণ রায় চৌধুরী প্রমুখ।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com