বাজেটে প্রতিবন্ধিতা খাতে উন্নয়ন ও আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কোনও উদ্যোগ নেই
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে প্রতিবন্ধিতা খাতে বরাদ্দ সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম খাতের ২ দশমিক ৮০ শতাংশ এবং মোট বাজেটের ০ দশমিক ৪৮ শতাংশ। যা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল। একইসঙ্গে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দক্ষতা উন্নয়ন ও আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কোনও উদ্যোগ বাজেটে নেই বলে মন্তব্য করেছে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিভিন্ন সংগঠন।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ডিজএবিলিটি রাইটস ফান্ডের সহযোগিতায় ১৩টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠনের পক্ষ থেকে ‘জাতীয় বাজেট ২০২৪-২৫: প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অবস্থান’ শীর্ষক বাজেট পরবর্তী প্রতিক্রিয়া সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।
সংস্থাগুলো হলো- প্রতিবন্ধী নারীদের জাতীয় পরিষদ, ডিজএবলড চাইল্ড ফাউন্ডেশন, ন্যাডপো, জয়িতা প্রতিবন্ধী নারী উন্নয়ন সংস্থা, সোসাইটি অব দ্য ডেফ অ্যান্ড সাইন ল্যাংগুয়েজ ইউজার, বার্ডো, প্রতীক মহিলা ও শিশু সংস্থা, বিপিইউএস, ডিসএবলড ওয়েলফেয়ার সোসাইটি, বি-স্ক্যান ও ডব্লিউডিডিএফ।
অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মহুয়া পালের সভাপতিত্বে আয়োজক সংস্থার পক্ষে সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক আলবার্ট মোল্লা বাজেটে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বরাদ্দের ওপর বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন, প্রতিবন্ধিতা খাতে বরাদ্দ সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম খাতের মাত্র ২ দশমিক ৮০ শতাংশ (২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ছিল ২ দশমিক ৯৪ শতাংশ) এবং মোট বাজেটের ০ দশমিক ৪৮ শতাংশ (২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ছিল ০ দশমিক ৪৯ শতাংশ)। প্রকৃত পক্ষে এ বছর বরাদ্দ কমেছে, যা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মাসিক ভাতা অপরিবর্তিত (৮৫০ টাকা) রয়েছে, যা বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনায় খুবই সামান্য। বিগত ৫ বছর ধরে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির সংখ্যা ১ লাখই রয়েছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বাজেট বরাদ্দ সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কেন্দ্রিক। অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ধারণায় মন্ত্রণালয় ভিত্তিক বাজেট বরাদ্দ খুবই প্রয়োজন। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দক্ষতা উন্নয়ন ও আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কোনও উদ্যোগ বাজেটে নেই। বাজেটে প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সনদ, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার ও সুরক্ষা আইন-২০১৩, নিউরো ডেভলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন- ২০১৩, নীতিমালা ও কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রতিফলন নেই।
আলবার্ট মোল্লা তার বিশ্লেষণে আরও বলেন, অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ২০১৩ সালের আইন বাস্তবায়ন, জাতীয় সমন্বয় কমিটি কার্যকর, পরিবীক্ষণ জোরদার করা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মাসিক সুবিধা তিন হাজার টাকার বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকলেও অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার শেষ বছরের বাজেটেও এর কোনও প্রতিফলন নেই। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রয়োজনকে প্রাধান্য দিয়ে বাজেট বরাদ্দ হচ্ছে কিনা তা বোঝা যায় সরকারি ব্যয়ের কত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বরাদ্দ, এ বরাদ্দ তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় পর্যাপ্ত কিনা, সরকারের সব মন্ত্রণালয়ের ব্যয় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তিতে অবদান রাখছে কিনা, প্রতি বছর ক্রমান্বয়ে বাজেট বরাদ্দ বাড়ছে কিনা, বিদ্যমান অবকাঠামো ও পরিসেবা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য প্রবেশগম্য কিনা, বাজেট বরাদ্দ ও অর্থ ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠনকে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে কিনা। প্রকৃতপক্ষে জাতীয় বাজেট বিশ্লেষণ করলে এ বিষয়গুলোর অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।