ইতিহাস গড়ার অপেক্ষায় বাংলাদেশ
দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়ার আগে অধিনায়কের কথাগুলো স্বপ্নের মতো লেগেছিল। বৈশ্বিক কোনো টুর্নামেন্টে আগে কখনই ফাইনালে ওঠেনি বাংলাদেশ। এক মাস আগে দেশ ছাড়ার সময় অধিনায়ক আকবর আলী বলেছিলেন, শিরোপা জেতার জন্যই দক্ষিণ আফ্রিকা যাচ্ছে দল।
অনেকের কাছেই তখন মনে হয়েছে নিছক কল্পনা! অথচ সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়া থেকে আর মাত্র একধাপ দূরে বাংলাদেশ। একটি জয়েই বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে নতুন করে চেনাতে পারেন যুব টাইগাররা।
আজ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে জিতলেই হবে নতুন ইতিহাস। যে কোনো খেলার যে কোনো বিশ্বকাপে এটাই হবে বাংলাদেশের প্রথম শিরোপা। সেজন্য ফাইনালে ভারত-কুফা কাটাতে হবে আকবরদের! সিনিয়র সাকিব-তামিম-মাহমুদউল্লাহরা আগে পারেননি, জুনিয়র দলে থাকা সাকিব-তানজিম-মাহমুদুলরাও ভারতকে ফাইনালে কখনও হারাতে পারেনি।
দু’দলের শক্তির ব্যবধানের চেয়েও মানসিক সমস্যা যেন বাংলাদেশের বড় বাধা। তবে এবার অতীত ভুলে নামতে চান যুবারা। ফাইনালের উচ্ছ্বাসে না ভেসে সাধারণ খেলা দিয়েই ভারত জয়ের লক্ষ্য যুবা টাইগারদের। পচেফস্ট্রুমে বাংলাদেশ সময় বেলা ২টায় শুরু হওয়া ম্যাচটি দেখা যাবে গাজী টিভিতে। যুব বিশ্বকাপে এটি তৃতীয় অল এশিয়া ফাইনাল হবে। তবে উপমহাদেশের বাইরে এটাই প্রথম।
জাতীয় দল এশিয়া কাপের দুটি ফাইনাল ও শ্রীলংকায় নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে জয়ের খুব কাছে গিয়ে ভারতের কাছে হেরেছে। একইভাবে যুব দলও গত বছর ভারতের কাছে দুটি ফাইনালে হেরেছে। শ্রীলংকায় অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপে তো পাঁচ রানে হেরেছিল বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের ফাইনালের আগে তাই না চাইলেও ঘুরে-ফিরে সামনে আসছে হারের স্মৃতিগুলো। এমন নয় যে ভারত যুব দলকে আগে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে দুই উইকেট জিতেছিল বাংলাদেশ। তবে যুব বিশ্বকাপে সবচেয়ে সফলতম দল ভারত।
পঞ্চম শিরোপার হাতছানি তাদের সামনে। তবে ফাইনালে চোখ রাঙাচ্ছে বৃষ্টি। শনিবার বৃষ্টির কবলে পড়ে ইনডোরে অনুশীলন সেরেছেন আকবররা। যুব দলের ম্যানেজার কাওসার আহমেদ জানান, আজও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আজ বৃষ্টির কারণে খেলা না হলেও রিজার্ভ ডে রয়েছে।
দু’দলই অপরাজিত থেকে ফাইনালে উঠেছে। ২০১৬ আসরের ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হারের পর অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে টানা ১১টি ম্যাচে জিতেছে ভারত। ফাইনালের পথে তারা হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তানের মতো দলকে। সেমিফাইনালে পাকিস্তানকে ১০ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে ভারত।
এদিকে বিশ্বকাপে গ্রুপপর্বের একটি ম্যাচেই শুধু চাপে পড়েছিল বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে ওই ম্যাচটি বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয়। সেমিফাইনালে তিন বিভাগেই দাপট দেখিয়ে নিউজিল্যান্ডকে হারায় আকবর আলীরা। দু’দলই দু’দলকে খুব ভালো চেনে। বাংলাদেশের মূল শক্তি বোলিং। বিপরীতে দুই ওপেনার জয়সাল ও সাক্সেনা ভারতের বড় শক্তি। সঙ্গে দু’দলেই রয়েছেন ভালো মানের স্পিনার। বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত বোলিং গড়ে এগিয়ে রয়েছে দুই ফাইনালিস্ট। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ হলেও চাপমুক্ত থেকে মাঠে নামতে চান অধিনায়ক আকবর। তিনি বলেন, ‘ভারত অবশ্যই শক্তিশালী দল। কিন্তু ফাইনাল শব্দটা মাথায় আনব না। অন্য পাঁচটা ম্যাচের মতো সাধারণ খেলাটাই আমরা খেলার চেষ্টা করব।’
এদিকে ভারতও সাধারণ আরেকটি ম্যাচ ভেবেই মাঠে নামতে চায়। অধিনায়ক প্রিয়াম গার্গ বলেন, ‘আমরা যেভাবে কাজগুলো করে আসছি সেভাবেই খেলার চেষ্টা করব। ফাইনালেও আমরা অন্য একটি সাধারণ ম্যাচের মতো করে খেলার চেষ্টা করব।’ দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশনে আগে বাংলাদেশের কোনো দলই ভালো করতে পারেনি। যুবারা ফাইনালে উঠে এরই মধ্যে সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে। তবে এই বাংলাদেশ শিরোপা জিতেই থামতে চায়।