নতুন অর্থবছরের বাজেটে বিষয়টিকে জনপ্রিয় করার উদ্যোগ

0

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, অতালিকাভুক্ত যেসব কোম্পানি বর্তমানে সাড়ে ২৭ শতাংশ করপোরেট কর দেয়, সেগুলো যদি নগদবিহীন লেনদেনের শর্ত মেনে চলে, তাহলে তাদের এই হার আড়াই শতাংশ কমানো হবে। একই সুবিধা এক ব্যক্তি কোম্পানির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ শর্তপূরণ সাপেক্ষে এগুলোর করপোরেট করের হার আড়াই শতাংশ কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হবে।

নগদবিহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বে ১০টি ব্যাংক, ৩টি মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবা এবং তিনটি আন্তর্জাতিক পেমেন্ট সিস্টেমকে এ কাজে প্রাথমিকভাবে যুক্ত করা হয়েছে। ‘সর্বজনীন পরিশোধ সেবায় নিশ্চিত হবে স্মার্ট বাংলাদেশ’ স্লোগান সামনে রেখে প্রথমে মতিঝিল এলাকায় চা-দোকান, মুদি দোকান, হোটেল, মুচিসহ ভাসমান বিক্রেতাদের কিউআর কোড সুবিধা দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই বিভিন্ন বিভাগীয় শহরকে এর আওতায় আনা হবে। পর্যায়ক্রমে এই সেবা সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।

২০২৭ সালের মধ্যে দেশের ৭৫ শতাংশই লেনদেন ক্যাশলেস হবে বলে আশা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।

যা বলছে পরিসংখ্যান
২০২৩ সালের জানুয়ারিতে মোবাইল ব্যাংকিং বা এমএফএসের মাধ্যমে এক লাখ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হলেও ক্যাশলেস লেনদেন হয়েছে সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা। এমএফএস দিয়ে কেনাকাটা, মোবাইল রিচার্জ আর পরিষেবা বিল পরিশোধ হচ্ছে কেবল ক্যাশলেসে। একইভাবে ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন হয় প্রায় ৩৯ হাজার ৭৫৭ কোটি টাকা। কিন্তু প্রকৃত ক্যাশলেস তিন হাজার ৮০০ কোটি টাকা। কারণ, কার্ড দিয়ে এটিএম বুথ থেকে নগদ টাকা বেশি উত্তোলন করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কার্ডের মাধ্যমে পয়েন্ট অব সেলস ও ই-কমার্সে যে কেনাকাটা হয়, তা ক্যাশলেস লেনদেন।

সরকারি বেতন-ভাতা, বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক লেনদেন ইলেকট্রিক ফান্ড ট্রান্সফারের মাধ্যমে দেওয়া হয়, যা একপ্রকার ক্যাশলেস লেনদেন। প্রতি মাসে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের মাধ্যমে লেনদেন প্রায় ৬২ হাজার কোটি টাকা।

এ প্রসঙ্গে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমডি ও সিইও মোহাম্মদ মনিরুল মাওলা বলেন, এখন মোবাইল অ্যাপ দিয়েই কেনাকাটা, বিল পেমেন্ট, ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার, রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট এমন নানামুখী ডিজিটাল লেনদেন করা সম্ভব হচ্ছে।

নগদ টাকা বহনে কমেছে ঝামেলা
ক্যাশলেস সমাজে মানুষ এখন কার্ডের পরিবর্তে মোবাইল অ্যাপ দিয়ে কিউআর কোড ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে। ইসলামী ব্যাংকের সেলফিন একটি অ্যাপভিত্তিক বহুমুখী ব্যাংকিং সেবা। বর্তমানে গ্রাহক এই অ্যাপ ব্যবহার করে কেনাকাটা থেকে শুরু করে পরিষেবা বিল, ক্রেডিট কার্ড বিল, বাস ও ট্রেনের টিকিট কাটার মতো কাজ অনায়াসেই সেরে নিচ্ছেন।

২০১৯ সালে ‘ওয়ালেট লোডিং’ ও ‘অ্যাড মানি’ সুবিধা নিয়ে আসার মাধ্যমে মুঠোফোনে আর্থিক সেবা ও ব্যাংক কার্ড নেটওয়ার্কের মধ্যে লেনদেন শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তী সময়ে ক্রেডিট কার্ড বিল পেমেন্ট এবং প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) গ্রহণের মতো সেবাগুলো চালু হয়েছে। এরপর ২০২৩ সালের ১৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক কিউআর কোডের মাধ্যমে লেনদেনের সুযোগ করে দেয়। তখন থেকে মোবাইল ফোনে শুধু একটা অ্যাপ থাকলেই যেকোনও কিছু কেনা যাচ্ছে। কুইক রেসপন্স বা কিউআর কোডে দেওয়া যাচ্ছে পণ্যের দাম বা সেবার মূল্য। বড় শোরুম-চেইন শপ থেকে শুরু করে ফুটপাত ও ছিন্নমূল ব্যবসায়ীদের পণ্যের মূল্য পরিশোধ করছেন কিউআর কোডের মাধ্যমে।

গত বছরের শুরুতে প্রায় ১২০০ মার্চেন্ট নিয়ে রাজধানীর মতিঝিলে এই ‘ক্যাশলেস বাংলাদেশ’ উদ্যোগটির যাত্রা শুরু হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, পণ্য বা সেবা মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে নগদ অর্থ, কার্ড বা চেক ব্যবহৃত হয়ে থাকে। নগদ অর্থে পরিশোধ ঝুঁকিপূর্ণ, চেকে পরিশোধ সময়সাপেক্ষ ও জটিল। অন্যদিকে কার্ড ব্যবহারের জন্য ব্যাংক বা এমএফএস-গুলোকে ডিজিটাল পেমেন্ট অবকাঠামো বিনির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে বিপুল বিনিয়োগ করতে হয়। ফলে কার্ডে মূল্য পরিশোধব্যবস্থা মার্চেন্টদের জন্য ব্যয়বহুল। ছোট মার্চেন্টের (যেমন: ডাব বিক্রেতা, ঝালমুড়ি বিক্রেতা, মুচি ইত্যাদি) পক্ষে এ ব্যয় বহন করা সম্ভব নয় বিধায় প্রান্তিক পর্যায়ে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় অর্জিত হয়নি। ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসারে পৃথিবীব্যাপী লো-কস্ট সলিউশন প্রচলনের তাগিদ রয়েছে।

কুইক রেসপন্স (কিউআর) ডিজিটাল পেমেন্ট এমনি একটি লো-কস্ট সলিউশন। বাংলা কিউআর-এ অংশগ্রহণকারী যে কোনও ব্যাংক ও এমএফএস অ্যাকাউন্টধারী গ্রাহক যে কোনও ব্যাংক বা এমএফএস অ্যাকাউন্টধারী মার্চেন্টকে পণ্য বা সেবামূল্য পরিশোধ করতে পারবেন।

সুত্র: বাংলা ট্রিবিউন

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com