পাওনা টাকার জন্য গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ

0

পাওনা টাকা আদায়ে এক গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ। লজ্জায় স্বামী স্ত্রীর বিষপান। এতে স্বামী জাহাঙ্গীর আলম (২৭) বেঁচে গেলেও মারা গেছে স্ত্রী আশা খাতুন (২৩)। এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলা সদরের কলেজ পাড়া এলাকায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সংসারের অভাব অনটনের কারণে বাড়িঘর মেরামতের জন্য জহির মন্ডল পাড়া গ্রামের জয়নাল আলীর কাছ থেকে কয়েক মাস আগে চল্লিশ হাজার টাকা ধার নেয় জাহাঙ্গীর-আশা দম্পতি। কিন্তু ধারের টাকা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে না পারায় পাওনাদার টাকা চেয়ে বসে। এসময় টাকা নেই বলে জানান আশা খাতুন।

টাকা না থাকায় স্ত্রী আশা খাতুন টাকা পরিশোধ করার জন্য কিছুদিন সময় চেয়ে নেন। কিন্তু পাওনাদার জয়নাল তার টাকা চেয়ে বসে। টাকা না দিতে পারায় আশা খাতুনকে অনৈতিক সম্পর্কের প্রস্তাব দেয় জয়নাল। তার পরিবার অভাব গ্রস্থ হওয়ায় তার সেই অবৈধ প্রস্তাব মেনে নিতে আশা খাতুনকে বাধ্য করায় জয়নাল। এরপর গত রমজান মাসে তার সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন আশা।

সুযোগ বুঝে জয়নাল তার সাথে শুক্কুর আলী নামের একজনকে সাথে নিয়ে এসে শারীরিক সম্পর্কও করেন। নিয়মিত ভাবে তারা দুইজন ধর্ষণ করতে থাকে আশা খাতুনকে।এসময় তাদের পরিচিত সোলেমান নামের আরেক জনকে দিয়ে শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও ধারণ করার কথা জানানো হয় ভুক্তভোগী আশা খাতুনকে। সামাজিক মাধ্যমে সেই ভিডিও ভাইরাল করার হুমকি দিয়ে সোলেমানও শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন গড়ে তোলে আশা খাতুনের সঙ্গে।

এভাবে দীর্ঘদিন ধরে আশা খাতুনের রুমে ঢুকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণের ফলে তিনি অতিষ্ট হয়ে পড়েন। তার স্বামী জাহাঙ্গীর স্ত্রীর অবৈধ সম্পর্কের কথা লোক মুখে জানতে পেরে এবং বিছানায় রক্তের দাগ দেখতে পেয়ে স্ত্রীর কাছে এসব বিষয়ে জানতে চায়। ভুক্তভোগী আশা খাতুন তার স্বামীর কাছে সব খুলে বলেন।

স্বামী তার স্ত্রীর মুখে সবকিছু শুনে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে স্ত্রীর সাথে খারাপ আচরণ করেন। পরে স্বামী-স্ত্রী মানুষকে মুখ দেখানোর লজ্জায় ঘরে থাকা ফসলে দেয়া কীটনাশক (বিষ) গত শুক্রবার ২৪ মে দুপুর আনুমানিক ২টায় পান করেন।

পরবর্তীতে তাদের দুই জনকেই স্থানীয়রা উদ্ধার করে রাজীবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় এবং চিকিৎসা পেয়ে জাহাঙ্গীর কিছুটা সুস্থ হলেও।আশা খাতুনের অবস্থার অবনতি হলে তাকে জামালপুর সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সেখানে তিন দিন চিকিৎসার পর আশা খাতুনের শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে সেখান থেকে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়।

কিন্তু পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে তাকে মময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে না নিয়ে তারা গত সোমবার ২৮ মে রাতে বাড়িতে নিয়ে আসেন। গত বুধবার ২৯মে দুপুর আনুমানিক ২টায় আশা খাতুন বাড়িতেই মারা যায়।

এর আগে বৃহস্পতিবার ২৩মে স্থানীয় ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন, রাজীবপুর থানার গাড়ি চালক মাজাহারুল ইসলাম, থানার বাবুর্চি রবিউল ইসলাম, আমেছ উদ্দিন বিবাদী জয়নাল, শুক্কুর, আলম ও সোলাইমানকে নিয়ে ঘরোয়া বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার উদ্দেশ্যে বাদী জাহাঙ্গীর আলমকে বিশ হাজার টাকা দিতে চাইলে তিনি তা না নিয়ে সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন স্থানীয় ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন ও উপস্থিত সকলের কাছে।

তিনি আরও জানান সুষ্ঠু বিচার না পেলে দুই জনই আত্মাহত্যা করবেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিষপান করেন তারা। এতে জাহাঙ্গীর আলম বাচঁলেও মারা যান তার স্ত্রী আশা খাতুন। মৃত্যুর সময় আশা খাতুন দুই বছরের একটি শিশু কন্যা রেখে যান।

ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, ওই ঘটনায় তারা স্বামী-স্ত্রী বিষ খেয়ে আত্মাহত্যার চেষ্টা করে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com